ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন পল স্টার্লিং, কার্টিস ক্যাম্পার। বোলিংয়ে নিজেদের কাজ সারলেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন, মার্ক অ্যাডায়ার। মূল সিরিজের লড়াই শুরুর আগে দাপুটে জয়ে নিজেদের সামর্থ্যের জানান দিল আইরিশরা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আউটার মাঠে বিসিবি একাদশের বিপক্ষে ডাক-ওয়ার্থ লুইস স্টার্ন মেথডে ৭৭ রানের জয় পেয়েছে আয়ারল্যান্ড।
বৃষ্টিতে ৪০ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ৬ উইকেটে ২৫৫ রান করে সফরকারীরা। ২৫৯ রানের পরিবর্তিত লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৩২.১ ওভারে ১৮১ রানে গুটিয়ে যায় ইয়াসির আলি চৌধুরির নেতৃত্বাধীন বিসিবি একাদশ।
বিসিবি ঘোষিত একাদশে কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে জাকের আলির নাম থাকলেও ম্যাচটি খেলেছেন আকবর আলি। এক ওভারে তিন বলের মধ্যে দুইটি ক্যাচও নিয়েছেন তিনি।
প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে আলো ছড়ানো দুজন ক্রিকেটারকে এই দলে নেওয়া হলেও খেলার সুযোগ পেয়েছেন শুধু আশেক আহমেদ রোহান। তিনি ২১ বলে করেছেন ১৮ রান। বাঁহাতি স্পিনার আরিদুল ইসলাম আকাশ ছিলেন দ্বাদশ খেলোয়াড়।
এক ঝাঁক তারকা ক্রিকেটার নিয়ে দল গড়া হলেও তারা নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। বল হাতে উইকেটশূন্য থাকেন শরিফুল ইসলাম ও নাসুম আহমেদ। ব্যাটিংয়ে জাকির হাসান, ইয়াসির, শাহাদাত হোসেন দীপুরা পারেননি বড় ইনিংস খেলতে।
টস জিতে আইরিশদের ব্যাটিংয়ে পাঠান ইয়াসির। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকেন দুই ওপেনার স্টিভেন ডোহেনি ও স্টার্লিং। উদ্বোধনী জুটিতে ৫৩ রান যোগ করে নবম ওভারে ফেরেন ডোহেনি (৩২ বলে ৩০)।
সহজাত ব্যাটিংয়ে ৪৭ বলে ফিফটি করেন স্টার্লিং। সৌম্য সরকারের নিচু হয়ে যাওয়া স্লোয়ারে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে বোল্ড হন আইরিশ ওপেনার। ৭ চার ও ৩ ছক্কায় খেলেন ৫০ বলে ৫৪ রানের ইনিংস।
২৩তম ওভারে নামে বৃষ্টি। এরপর দুই ইনিংস থেকে কমিয়ে দেওয়া হয় ১০টি করে ওভার।
বৃষ্টি নামার সময় ৪২ বলে ১৭ রানে অপরাজিত ছিলেন আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবার্নি। পরে পুনরায় খেলা শুরু হলে আর ব্যাটিংয়ে নামেননি তিনি।
২৬তম ওভারে তিন বলের মধ্যে হ্যারি টেক্টর (২১ বলে ৯) ও জর্জ ডকরেলকে (২ বলে ০) ফেরান লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। দুজনই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন।
দারুণ এক ডেলিভারিতে ১৯ রান করা লরকান টাকারকে বোল্ড করেন রেজাউর রহমান রাজা।
এরপর গ্যারেথ ডেলানিকে সঙ্গে নিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালান ক্যাম্পার। গত জানুয়ারিতে বিপিএল খেলে যাওয়া পেস বোলিং অলরাউন্ডার স্রেফ ৪৯ বলে করেন ৭৫ রান। ৭টি চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা মারেন তিনি।
ডেলানির সঙ্গে ক্যাম্পারের জুটিতে আসে ৪৬ বলে ৭৫ রান। ৪ চার ও ২ ছক্কায় ২৫ বলে ৩৬ রান নেন ডেলানি। শেষ ১০ ওভারে ৯৯ রান করে আয়ারল্যান্ড।
রাজা ও রিশাদ নেন ২টি করে উইকেট। তবে তারা ৭ ওভারে দেন যথাক্রমে ৫১ ও ৫০ রান। শরিফুল ৭ ওভারে ৪৭ রান দিয়েও সাফল্য পাননি। নাসুম ৮ ওভারে খরচ করেন ৪৩ রান। তরুণ পেসার মুশফিক হাসানকে দিয়ে ৫ ওভার করান ইয়াসির।
বিসিবি একাদশের রান তাড়ায় নিজেদের বোলারদের পরখ করে নেওয়ার অভিযানে নামেন আইরিশ অধিনায়ক। ৩২.১ ওভারের মধ্যেই ৯ জন বোলার ব্যবহার করেন তিনি। এর মধ্যে ৭ জনই উইকেট পান।
সৌম্য ও শামীম হোসেন ছাড়া বিসিবি একাদশের কেউই বলার মতো কিছু করতে পারেননি। অ্যাডায়ারকে পুল করে মারা ছক্কায় অনেকটা সেরা সময়ের সৌম্যর ছাপ পাওয়া যায়। কিন্তু ভালো শুরুর পরও ইনিংস বড় করতে পারেননি বাঁহাতি ওপেনার।
১৭তম ওভারে দলীয় ৯৩ রানের মাথায় ফেরার আগে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৪৬ বলে ৪৮ রান করেন সৌম্য।
জয়ের আশা বাঁচিয়ে রেখে খেলতে থাকা শামীম ৩ চার ও ২ ছক্কায় করেন ৩৮ বলে ৩৫ রান। সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি ফেরার পরই মূলত শেষ হয়ে যায় বিসিবি একাদশের সম্ভাবনা।
অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ৪ ওভারে স্রেফ ১২ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। অ্যাডায়ারের শিকার ২ ব্যাটসম্যান। গ্রাহাম হিউমের ৪ ওভার থেকে ৪ রানের বেশি নিতে পারেনি বিসিবি একাদশ।
আগামী শনিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুপুর ২টায় শুরু হবে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আয়ারল্যান্ড: ৪০ ওভারে ২৫৫/৬ (ডোহেনি ৩০, স্টার্লিং ৫৪, বালবার্নি ১৭ আহত অবসর, টেক্টর ৯, ক্যাম্পার ৭৫*, ডকরেল ০, টাকার ১৯, ডেলানি ৩৬, ম্যাকব্রাইন ০*; শরিফুল ৭-০-৪৭-০, মুশফিক ৫-০-৩৪-০, নাসুম ৮-০-৪৩-০, রাজা ৭-১-৫১-২, রিশাদ ৭-০-৫০-২, সৌম্য ৬-১-২৫-১)
বিসিবি একাদশ: ৩২.১ ওভারে ১৮১/১০ (জাকির ১৮, সৌম্য ৪৮, রোহান ১৮, শাহাদাত ২, ইয়াসির ৩, শামীম ৩৫, আকবর ২৬, রিশাদ ১৭, নাসুম ০, রাজা ০, শরিফুল ৬*; অ্যাডায়ার ৫-০-৩৬-২, হিউম ৪-০-৪-১, হ্যান্ড ৩.১-০-৩২-১, ক্যাম্পার ৩-০-২১-০, ম্যাকব্রাইন ৪-০-১২-৩, হামফ্রেজ ৪-০-২৫-১, হোয়াইট ৪-০-৩৬-০, ডেলানি ৩-০-১১-১, টেক্টর ২-০-৩-১)
ফল: ডি-এলএস মেথডে আয়ারল্যান্ড ৭৭ রানে জয়ী