‘স্বপ্নের কথা বলতে চাই না, মাঠেই দেখাতে চাই আমরা’

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান কথা বললেন সাম্প্রতিক দুবাই সফর, দলের ঘাটতি-দুর্বলতা, সম্ভাবনা ও বিশ্বকাপ স্বপ্নসহ নানা বিষয়ে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2022, 09:18 AM
Updated : 30 Sept 2022, 09:18 AM

সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরে দুটি দিন মাত্র ঘরে থাকার সুযোগ। এর মধ্যে আবার ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ান হাই-কমিশনের এক আয়োজনেও যোগ দিতে হয়েছে। শুক্রবার রাতেই দেশ ছাড়বে বাংলাদেশ দল। ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলার জন্য গন্তব্য প্রথমে নিউ জিল্যান্ড, এরপর অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ। সিপিএল খেলে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান সরাসরি যোগ দেবেন নিউ জিল্যান্ডে। লম্বা সফরের জন্য গোছগাছ করার ফাঁকে সহ-অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় কথা বললেন সাম্প্রতিক দুবাই সফর, দলের ঘাটতি-দুর্বলতা, সম্ভাবনা ও বিশ্বকাপ স্বপ্নসহ নানা বিষয়ে।

দুবাই থেকে ফেরার পর সেভাবে তো ফুরসতই পেলেন না আপনারা। আবার উড়াল দিতে হচ্ছে, সামনে লম্বা সফর। কতটা তরতাজা আছে দল?

নুরুল হাসান সোহান: আমার মনে হয়, সবাই তৈরিই আছে। দুটি দিন পরিবারের সঙ্গে কাটানোর সুযোগ হয়েছে। লম্বা সফরে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে অবশ্যই। তবে সবাই আগে থেকেই সবকিছু জানত। আশা করি, মানসিকভাবে সবাই প্রস্তুত হয়েই যাচ্ছে।

মানসিক প্রস্তুতির কথা বললেন, মাঠের প্রস্তুতি কেমন হলো? সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ম্যাচ দুটি তো আমরা দেখলাম। অনুশীলন সেশন কেমন ছিল?

সোহান: সত্যি বলতে, প্র্যাকটিসই বেশি ভালো হয়েছে। ম্যাচ তো হয়েছেই, সেটা আলাদা। তবে আমরা যে দুই দিন প্র্যাকটিস করেছি, তা খুবই ভালো ছিল। দারুণ ইনটেনসিটি ছিল। সুযোগ-সুবিধা ছিল ফার্স্ট ক্লাস। সেন্টার উইকেট ব্যবহার করেছি। নেটও করেছি।

সেন্টার উইকেটে, এমনকি নেটেও আমরা ম্যাচ পরিস্থিতি বিবেচনা করে অনুশীলন করেছি। যার যেটা ভূমিকা, সেভাবেই সুনির্দিষ্ট কাজ করা হয়েছে। ঘাটতির জায়গাগুলো শোধরানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

আরেকটা ভালো ব্যাপার ছিল, শুধু ম্যাচ খেলেছে এমন ক্রিকেটারই বেশি ব্যাটিং-বোলিং করেছে, তা নয়। সবাই পর্যাপ্ত অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছে। শুধু বিশ্বকাপ দলের ক্রিকেটাররাই নয়, অন্য যারাও ছিল দলে (স্ট্যান্ড বাই তালিকায় থাকা সৌম্য সরকার, রিশাদ হোসেন, শরিফুল ইসলাম), তারাও খুব ভালো কাজ করতে পেরেছেন। সবাইকে যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে।

এই প্র্যাকটিস সেশনগুলোই বেশ কাজে দেবে বলে আমি মনে করি। আর আমার মনে হয়, এই ছোট্ট সফরও আমাদের দলকে আরও বেশি একতাবদ্ধ করে তুলেছে।

উইকেট সেখানে কেমন ছিল? কারণ, প্রস্তুতি তো বিশ্বকাপের জন্য!

সোহান: উইকেট খুব ভালো ছিল। একদম অস্ট্রেলিয়ার মতো তো আর হবে না, সেটা সম্ভব নয়। তারপরও কাছাকাছি ছিল। উইকেটে ঘাস ছিল, বাউন্সি ছিল।

আপনি দুবাইয়ে বলেছেন, দেশে ফিরেও বলেছেন যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুটি জয় সামনে বিশ্বকাপের জন্য কাজে লাগবে। এই দুই ম্যাচে জয় তো জরুরিই ছিল। কিন্তু তা বিশ্বকাপে কাজে দেবে, এটা কতটা বাস্তবসম্মত ভাবনা?

সোহান: জয়টা সবসময়ই কাজে দেয়। আমরা যে অবস্থায় ছিলাম, জয়টা জরুরি ছিল। আরেকটা ব্যাপার হলো, যেভাবে আমরা জিতেছি, বিশেষ করে প্রথম ম্যাচে, এটাও আত্মবিশ্বাস জোগাবে।

সেদিন আমরা শুরুতে ব্যাটিংয়ে, পরে বোলিংয়ের শেষ দিকে অনেক চাপে ছিলাম। গত এক বছরে এরকম ম্যাচ আমরা অনেকগুলো হেরে গেছি। কাছাকাছি গিয়েও পারিনি। এবার তাই পরীক্ষা ছিল আমাদের জন্য। হয়তো বড় দলের সঙ্গে নয়, তারপরও কঠিন অবস্থা থেকে বের হয়ে আমরা ম্যাচ জিতেছি। এটা দলের আত্মবিশ্বাসের জন্য ভালো হয়েছে। কারণ এরকম ম্যাচ হারতে হারতে আসলে নেগেটিভ ব্যাপারগুলো বেশি কাজ করা শুরু করে। সেদিক থেকে এই জয় কিছুটা স্বস্তির।

গত এক-দেড় বছরে যত ম্যাচ কাছাকাছি গিয়ে হেরেছি আমরা, ওসবের অর্ধেক জিতলেও কিন্তু এখন দলের অবস্থা ভিন্ন থাকত। এখন জিততে পারলাম এরকম একটা ম্যাচ। ছোট দল না বড়, এই আলোচনা থাকবেই। তবে আন্তর্জাতিক ম্যাচই তো জিতেছি। আমার বিশ্বাস, এটা দলকেও বিশ্বাস জোগাতে পারে।

নিউ জিল্যান্ডে গিয়ে আবার হারের চক্রে পড়লে তো সেই বিশ্বাসটা উড়ে যেতে পারে!

সোহান: এই চ্যালেঞ্জ তো সবসময়ই থাকবে। আবার চেষ্টাও থাকবে ভালো করার। নিউ জিল্যান্ডের কন্ডিশনে কাজটা সহজ হবে না। তবে কয়েকদিন আগের চেয়ে একটু বেশি হলেও আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমরা যেতে পারছি, এটা গুরুত্বপূর্ণ।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজে ম্যাচ দুটি জিতলেও অনেক প্রশ্নের তো উত্তর মেলেনি। যেমন ওপেনিং জুটি, ডেথ ওভারের বোলিং, ছোট ছোট আরও অনেক কিছু…

সোহান: সবকিছু যে শতভাগ পারফেক্ট করে ফেলব আমরা এক সফরেই, তা তো নয়। কিছু জিনিস ঠিকঠাক হয়েছে, আরও কিছু হয়নি। সামনে আমাদের চেষ্টা থাকবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমরা একটা দল হিসেবে কীভাবে খেলতে পারছি, একটা ম্যাচে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং কীভাবে একসঙ্গে অবদান রাখতে পারে, এসব নিয়েই পরিকল্পনা করছি।

আমিরাতের সঙ্গে দ্বিতীয় ম্যাচে কিন্তু কেউ বড় স্কোর না পেলেও আমরা মোটামুটি একটা রান করতে পেরেছি, কারণ অনেকের অবদান ছিল। বোলিংয়েও কয়েকজন ভালো করেছে। এভাবেই দল হিসেবে খেলাটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বকাপের আগে এই ত্রিদেশীয় সিরিজ আছে, বিশ্বকাপের আগে আরও দুটি প্র্যাকটিস ম্যাচ আছে। ওখানেও ঠিকঠাক করার চেষ্টা চলতে থাকবে আমাদের।

নিউ জিল্যান্ডে যদিও অধিনায়ক সাকিব যোগ দিচ্ছেন দলে। তবে আপনি সহ-অধিনায়ক, লিডারশিপ গ্রুপের অংশ। আপনিও নিশ্চয়ই সম্পৃক্ত থাকবেন নানা সিদ্ধান্তে। বিশ্বকাপ দলে পরিবর্তনের সুযোগ আছে সামনেও। দলের সঙ্গে যাওয়া সৌম্য-শরিফুলদের কি নিউ জিল্যান্ডে ম্যাচ খেলিয়ে পরখ করা হতে পারে?

সোহান: যেহেতু সাকিব ভাই যোগ দিচ্ছেন দলে, তার ভাবনা তো জানতে হবে। তিনি থাকলে অনেক কিছুই কাভার হয়ে যায়। এইসব সিদ্ধান্ত আসলে সাকিব ভাই ও ম্যানেজমেন্ট ভালোভাবে পরিকল্পনা করে নিতে পারবে। সাকিব ভাই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো খেলে আসছেন এত বছর ধরে, অস্ট্রেলিয়ায় বিগ ব্যাশ খেলেছেন, তিনি অবশ্যই ভালো বুঝবেন কোন কন্ডিশনে কাকে খেলানো উচিত।

এছাড়াও আমাদের কনসালটেন্ট শ্রীরাম অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশন-এ অনেক অভিজ্ঞ। তিনিও জানেন কোনটি দরকার হবে। আমার চেয়ে তারা এসব ভালো বুঝবেন। তবে পরিকল্পনা কিছু না কিছু অবশ্যই থাকবে।

বিশ্বকাপ যাত্রায় তো সবসময়ই একটা রোমাঞ্চ-উত্তেজনা থাকে। এবার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটু কম বলেই মনে হচ্ছে। দলের অবস্থার কারণেই কি?

সোহান: আমার মধ্যে আসলে এসব এক্সাইটমেন্ট এমনিতেই একটু কম কাজ করে! বাংলাদেশের হয়ে প্রতিটি ম্যাচ খেলতে নামাই আমার কাছে অনেক বড়। প্রতিটিই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ম্যাচ খেলা নয়, স্কোয়াডে থাকা বা দলের সঙ্গে থাকতে পারাই গর্বের ব্যাপার। বিশ্বকাপ তো বড় আসর, সেটার মর্যাদাও আছে। তবে আমি বলতে চাচ্ছি, আলাদা করে বাড়তি কিছু কাজ করছে না।

বিশ্বকাপে যাওয়াটা বড় ব্যাপার নয়, পারফর্ম করা, দলের চাওয়া পূরণ করা, দল হিসেবে ভালো খেলা, এসবই আসল। দায়িত্ব থাকে অনেক। বিশ্বকাপে যাওয়াটা তাই মূল ব্যাপার নয়, সবারই দায়িত্ব আছে, থাকবে এবং সেটা পূরণ করাটাই আসল।

দায়িত্বের কথা বলছেন, বিশ্বকাপকে ঘিরে তো স্বপ্নও থাকে। বাংলাদেশ দলের বর্তমান অবস্থায় সেই স্বপ্নের সীমানা কতদূর কিংবা আদৌ ভালো কিছুর সম্ভাবনা কতটা?

সোহান: স্বপ্ন তো আমার ও আমাদের আছেই। আশা থাকবে, স্বপ্ন থাকবে। পাবলিকলি বলতে চাচ্ছি না এখন। কিন্তু স্বপ্ন অবশ্যই আছে এবং আমার কাছে মনে হচ্ছে, অন্যান্যবারের তুলনায় এবার ভালো হবে। সেই ভালোর মাত্রা কতটা, তা আমরা চেষ্টা করব মাঠেই দেখানোর।