মেন্ডিস ২৪৫, মাদুশকা ২০৫, শ্রীলঙ্কা ৭০৪

চতুর্থ দিন শেষে ১৫৮ রানে পিছিয়ে আছে আয়ারল্যান্ড, হাতে ৮ উইকেট।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2023, 02:13 PM
Updated : 27 April 2023, 02:13 PM

ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট শতককে দ্বিশতকে পরিণত করলেন নিশান মাদুশকা। আগে দুবার দ্বিশতকের দুয়ারে গিয়ে আক্ষেপ নিয়ে ফিরলেও এবার আর ভুল করলেন না কুসাল মেন্ডিস। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে তিন অঙ্কের দেখা পেলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসও। আইরিশ বোলারদের গুঁড়িয়ে শ্রীলঙ্কা পা রাখল সাতশ রানের চূড়ায়। 

গল টেস্টে আয়ারল্যান্ডের ৪৯২ রানের জবাবে চতুর্থ দিন শ্রীলঙ্কা ইনিংস ঘোষণা করে ৩ উইকেটে ৭০৪ রানে। ২১২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে দিন শেষে সফরকারীদের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৫৪। এখনও তারা পিছিয়ে আছে ১৫৮ রানে। 

টেস্টে এই নিয়ে সাতবার সাতশ রানের  ঠিকানায় পা রাখল শ্রীলঙ্কা। যেখানে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন মেন্ডিস। 

এই মাঠেই ২০১৭ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৯৪ রানে আউট হয়েছিলেন তিনি। পরের বছর আবার বাংলাদেশের বিপক্ষেই চট্টগ্রামে থমকে যান ১৯৬ রানে। প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিতে এবার ২৯১ বলে তার রান ২৪৫। যেখানে ১৮ চারের পাশে ছক্কা ১১টি। ওয়াসিম আকরামের সবচেয়ে বেশি ছক্কার বিশ্বরেকর্ড ছুঁতে পারেননি স্রেফ একটির জন্য। 

নিজের তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা ওপেনার মাদুশকা ৩৩৯ বলে ২২ চার ও এক ছক্কায় করেন ২০৫ রান। ম্যাথিউস ১১৪ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ঠিক ১০০ রানে। আগের দিন ১১৫ রান করেন অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে। 

সুদীর্ঘ টেস্ট ইতিহাসে এক ইনিংসে প্রথম চার ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরির স্রেফ তৃতীয় নজির এটি। একটি জায়গায় অবশ্য শ্রীলঙ্কাই প্রথম। চার সেঞ্চুরিয়ানের মধ্যে একজন কিংবা দুজনের ডাবল সেঞ্চুরির ঘটনা যে এটিই প্রথম। 

২০০৭ সালে মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন ভারতের প্রথম চার ব্যাটসম্যান দিনেশ কার্তিক (১২৯), ওয়াসিম জাফর (১৩৮), রাহুল দ্রাবিড় (১২৯) ও শচিন টেন্ডুলকার (১২২)। 

২০১৯ সালে করাচিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন শান মাসুদ (১৩৫), আবিদ আলি (১৭৪), আজহার আলি (১১৮), বাবর আজম (১০০)। 

গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ডাবল সেঞ্চুরি হয়েছে আরও একটি, তবে সেটি রান দেওয়ার। ৩৪ ওভারে ২০৩ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন আইরিশ লেগ স্পিনার বেন হোয়াইট। 

সিরিজের দ্বিতীয় এই টেস্টে প্রথম তিন দিনের ধারাবাহিকতায় চতুর্থ দিনেও উইকেট ছিল ব্যাটিং সহায়ক। বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কা ব্যাটিং শুরু করে ১ উইকেটে ৩৫৭ রান নিয়ে। 

আগের দিন দেড়শ থেকে এক রান দূরে অপরাজিত ছিলেন মাদুশকা। দিনের শুরুতেই ডাবল নিয়ে মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। 

৮৩ রান নিয়ে দিনের ব্যাটিং শুরু করা মেন্ডিস নবম টেস্ট সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১৩১ বলে। লাঞ্চ বিরতির আগেই মাদুশকা ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যান। বাঁহাতি স্পিনার ম্যাথু হামফ্রেজকে চার মেরে তিনি মাইলফলক স্পর্শ করেন ৩২৩ বলে। 

বিরতি থেকে ফিরে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মাদুশকা। তাকে এলবিডব্লিউ করে দেন অফ স্পিনার অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন। 

প্রথম উইকেটে ২২৮ রানের পর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে এলো ২৬৮ রান। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার একই টেস্ট ইনিংসে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি জুটি পেল শ্রীলঙ্কা। প্রথমটি ছিল ২০১৯ সালে লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে। 

মেন্ডিস এরপর দলকে এগিয়ে নেন ম্যাথিউসকে সঙ্গী করে। কার্টিস ক্যাম্পারের একই ওভারে তিন চার ও এক ছক্কায় তিনি পৌঁছে যান ১৯৮ রানে। ডাবলে পা রাখেন ২৬৩ বলে। 

ছক্কার বিশ্বরেকর্ডের দুয়ারে গিয়ে ছক্কার চেষ্টাতেই থামে মেন্ডিসের দুর্দান্ত ইনিংসটি। লং অফে দুবারের চেষ্টায় চমৎকার ক্যাচ নেন হামফ্রেজ। 

এরপর উইকেটে গিয়ে দিনেশ চান্দিমাল মাঠ ছাড়েন রান আউট থেকে বাঁচতে ডাইভ দেওয়ার সময় কাঁধে আঘাত পেয়ে। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাথিউস পঞ্চদশ টেস্ট সেঞ্চুরি করার পরই ইনিংস ঘোষণা করে দেন করুনারত্নে। 

শ্রীলঙ্কার ৭০৪ রান এই মাঠে সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোর। ২০১৩ সালে স্বাগতিকদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৬৩৮ ছিল আগের সেরা। 

দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই জেমস ম্যাককলামকে হারায় আয়ারল্যান্ড। ডানহাতি ওপেনারকে বোল্ড করে দেন অফ স্পিনার রমেশ মেন্ডিস। 

আরেক ওপেনার পিটার মুরও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি (৩৯ বলে ১৯)। বাঁহাতি স্পিনার প্রবাথ জয়াসুরিয়াকে ড্রাইভ করে শর্ট এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ দেন তিনি।

দ্বিতীয় দ্রুততম ৫০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁতে জয়াসুরিয়ার চাই আর একটি শিকার। 

হ্যারি টেক্টরকে (৭*) সঙ্গে নিয়ে দিনের বাকিটা কাটিয়ে দেন অ্যান্ড্রু বালবার্নি (১৮*)। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৪৯২ 

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৩৫৭/১) ১৫১ ওভারে ৭০৪/৩ ডিক্লে. (মাদুশকা ২০৫, মেন্ডিস ২৪৫, ম্যাথিউস ১০০*, চান্দিমাল, রিটায়ার্ড হার্ট, ১৩, ধনাঞ্জয়া ১২*; হিউম ২২-৩-৮৭-১, ম্যাকব্রাইন ৫৭-৮-১৯১-১, ক্যাম্পার ২০-১-১০১-১, হামফ্রেজ ১০-০-৬৭-০, হোয়াইট ৩৪-১-২০৩-০, টেক্টর ৮-০-৪৮-০)

আয়ারল্যান্ড ২য় ইনিংস: ২২ ওভারে ৫৪/২ (ম্যাককলাম ১০, মুর ১৯, বালবার্নি ১৮*, টেক্টর ৭*; বিশ্ব ২-০-৯-০, জয়াসুরিয়া ১১-২-২৮-১, রমেশ মেন্ডিস ৯-৩-১৭-১)