সেন্টার উইকেটে সাকিব-লিটনদের ছক্কার প্রতিযোগিতা

টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগে সেন্টার উইকেটে বড় শট খেলার অনুশীলন করলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।

শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদচট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2023, 10:47 AM
Updated : 8 March 2023, 10:47 AM

ডিপ মিড উইকেট দিয়ে বল সীমানার ওপারে আছড়ে পড়তেই দুই হাত তুলে উল্লাস সাকিব আল হাসানের। একই সঙ্গে পেছনে থাকা সতীর্থদের দিকে তাকিয়ে অট্টহাসি! স্রেফ এক ছক্কা মেরেই সাকিব এত খুশি, ব্যাপারটি এমন নয় মোটেও। কিছুক্ষণ আগে তাকে জোর করে উইকেট থেকে টেনে বের করে দিয়েছিলেন অন্যরা। সেটির বদলা নিতে পারায় যেন আনন্দ আর থামে না বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের!

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ ওভারের সিরিজ শুরুর আগের দিনে জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে এমন হাসি-মজায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সেরে নিলেন ‘সিরিয়াস’ এক অনুশীলন। যেটির নাম দেওয়া যায় ‘ছক্কার লড়াই।’ সামনে যখন টি-টোয়েন্টি সিরিজ, এই অনুশীলনের চেয়ে জরুরি কিছু আর কী আছে! অনুশীলন পর্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আনার জন্যই হয়তো  নিজেদের মধ্যে ছক্কার প্রতিযোগিতা করলেন সাকিব, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্তরা। 

বুধবার সকালে নির্ধারিত সময়ে মাঠে এসে শুরুতেই ফিল্ডিং অনুশীলন করেন ক্রিকেটাররা। কোচিং স্টাফের সদস্যরা সবাইকে ভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে বাউন্ডারি ক্যাচিং, স্লিপ ক্যাচিং ও গ্রাউন্ড ফিল্ডিং করান। লিটন ও নুরুল হাসান সোহান সেরে নেন কিপিং অনুশীলন। 

এরপর ব্যাটিং-বোলিংয়ের পালা। প্যাভিলিয়ন প্রান্তের নেটে ব্যাটিং শুরু করেন শান্ত ও রনি তালুকদার। এক নেটে মেহেদী হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদ ও তানভির ইসলাম বোলিং করেন। স্পিনারদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলতে দেখা যায় সাকিবকে। দুই লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন ও আমিনুল ইসলামকে নিয়ে মিডিয়া প্রান্তে নামেন লিটন ও তৌহিদ হৃদয়। সেখানে হাত ঘোরান আফিফ হোসেনও।  

সবাই যার যার মতো ব্যাটিং-বোলিং শুরু করলে প্যাড-আপ করতে যান সাকিব। কোনো নেটে না ঢুকে একজন থ্রোয়ারকে তিনি সরাসরি নেমে পড়েন সেন্টার উইকেটে। ম্যাচের জন্য নির্ধারিত উইকেটের পাশের উইকেটে থ্রোয়ারের ছোঁড়া বলে টানা ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টা করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

কিছু বল ব্যাটে-বলে দারুণ সংযোগে উড়ে যাচ্ছিল সীমানার ওপারে। কিছু বল আবার লাগে ব্যাটের এদিক-ওদিক। তখন বিরতি নিয়ে নিয়ে নিজের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ঠিক করতে দেখা যায় সাকিবকে। 

সাকিব যখন সেন্টার উইকেটে ছক্কার অনুশীলন করছিলেন তখন পাশাপাশি নেটে লিটন ও হৃদয় ছিলেন পুরোপুরি বিপরীত রুপে। আফিফ ও রিশাদ, আমিনুলদের বলে শুরু থেকেই বড় শটের চেষ্টা করছিলেন হৃদয়। আর লিটন ছিলেন ড্রাইভ, কাট বা পাঞ্চ খেলার মুডে। 

আফিফের একটি বল বেশ জোরেই মারেন হৃদয়। সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠেন, 'ছক্কা!' অবাক দৃষ্টিতে আফিফের জিজ্ঞাসা, 'এটা কীভাবে ছয়, হৃদয়?' পাশের নেট থেকে ফোঁড়ন কাটেন লিটন, 'আরে আফিফ, ওর মন চাইছে, ও বলছে।' লিটনের কথায় হাসির রোল ওঠে ওই পাশের নেটে।

বেশ কিছুক্ষণ নেটে ব্যাটিং করে সাকিবের সঙ্গে সেন্টার উইকেটে যোগ দেন লিটন। তাকে ছক্কার অনুশীলন করার জন্য উইকেট ছেড়ে দেন সাকিব। কয়েকটি বল খেলার পর স্টাম্পের কাছে দাঁড়িয়ে অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন লিটন। দুজনের শরীরী ভাষা ও অঙ্গভঙ্গি দেখে অনুমান করা যাচ্ছিল, বড় শট খেলা নিয়েই হয়তো কথা বলছেন তারা। তাদের কথোপকথন চলার মাঝেই সেখানে যোগ দেন প্রায় ৮ বছর পর দলে ফেরা রনি। তিনিও যোগ দেন আলোচনায়।

এরপর নিজেদের নেট সেশন শেষ করে আফিফ, হৃদয় ও শান্ত একে একে চলে আসেন সেন্টার উইকেটে। তখন সাকিবের উদ্যোগেই শুরু হয় ব্যাটসম্যানদের ছক্কা মারার প্রতিযোগিতা। নিয়ম পরিষ্কার- টানা ছক্কা মারতে হবে। ছক্কা মারতে পারলেই মিলবে পরের বল খেলার সুযোগ। নয়তো ছাড়তে হবে উইকেট। 

প্রতিযোগিতার আয়োজক কিংবা দলের অধিনায়ক- যে কারণেই হোক, প্রথম শট খেলার সুযোগটা নেন সাকিবই। তবে সেটি অল্পের জন্য লং অন বাউন্ডারির সামনে পড়ে। ফলে সুযোগ পান লিটন, উইকেট ছেড়ে পেছনে দাঁড়ান সাকিব। এভাবে পর্যায়ক্রমে ছক্কা মারার চেষ্টা করেন আফিফ, হৃদয়, শান্ত, রনিরা।

শুরুতে কেউই একটির বেশি ছক্কা মারতে পারছিলেন না। প্রথম ছক্কা মেরে ব্যাটিং ধরে রাখলেও দ্বিতীয় বল চার হয়ে যাওয়ায় ছাড়তে হচ্ছিল উইকেট। এই ধারা ভাঙেন লিটন। পরপর দুই বলে ছক্কা মেরে বিজয়ীর হাসি নিয়ে তৃতীয় বল খেলেন তিনি। তবে হ্যাটট্রিক করতে পারেননি তিনি। 

নিজেদের মধ্যে মজার প্রতিযোগিতা হলেও বেশ সিরিয়াস মুডে দেখা যায় শান্তকে। তার একটি শট নিয়ে বেশ এক চোট ঝামেলা লেগে যায়। শান্ত কোনোভাবেই মানতে রাজি নন তার শটে ছক্কা হয়নি। সাকিবের কাছে অভিযোগ করেও অবশ্য সুবিধা করতে পারেননি তিনি। বাকিরা তাকে উইকেট ছাড়তে বাধ্য করেন।

পরে লিটন কাঁটা পড়েন নিয়মের ফাঁদে। এক পর্যায়ে নিয়ম করা হয় শুধু লং অন বা মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারতে হবে। কিন্তু লিটন ছক্কা মারেন লং অফ দিয়ে। ফলে বড় ছয় মেরেও দ্বিতীয় সুযোগ আর পাননি স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান। হাসির ফোয়ারা বয়ে যায় তখনও।

এর কিছুক্ষণ পরই ঘটে অধিনায়ককে জোর করে বের করার ঘটনা। তার একটি শট লং অন দিয়ে ছক্কা হয়েছে বলে অনড় ছিলেন সাকিব। কিন্তু সেই কথায় কান দেননি বাকি কেউই। একপ্রকার অনিচ্ছা নিয়েই বের হতে হয় তাকে। তবে পরের সুযোগেই মিড উইকেট দিয়ে বিশাল ছক্কা মেরে বিজয়ের হাসিতে বাকিদের দেখিয়ে দেন অধিনায়ক।

সাকিব-লিটনদের মতো আফিফ-হৃদয়-রনিরাও মারেন বেশ কিছু ছক্কা। পরে সংবাদ সম্মেলনে এই বড় শট খেলা নিয়ে প্রশ্ন রাখা হয় চান্দিকা হাথুরুসিংহের কাছে। পাওয়ার হিটিংয়ের রসায়ন ব্যাখ্যা করেন বাংলাদেশ কোচ।

“(পাওয়ার হিটিংয়ের জন্য) জোর থাকাটা বড় একটি ব্যাপার অবশ্যই। তবে আরেকটা ব্যাপার হলো, পদ্ধতিও ভালো জানা থাকতে হবে। যেমন ভালো ব্যাট সুইং, ভালো ভিত, এসব ঠিক রাখলে ভালো হয়ে ওঠঅ যায় একটু (পাওয়ার হিটিংয়ে)। তবে জোর থাকলে আরও ভালো হয়ে ওঠা যায়, এটি অন্যদের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে রাখে।”