নাটকীয় ধসে ৩৩ রানে শেষ ৬ উইকেটের পতন দক্ষিণ আফ্রিকার, দারুণ রোমাঞ্চকর সমাপ্তির অপেক্ষায় হ্যামিল্টন টেস্ট।
Published : 15 Feb 2024, 12:09 PM
আগের টেস্টে অল্পের জন্য শতরান হাতছাড়া করে ভীষণ আক্ষেপের কথা বলেছিলেন ডেভিড বেডিংহ্যাম। তবে সেই আক্ষেপের আগুনে ছাই না হয়ে তিনি জ্বলে উঠলেন আবার। দলের বিপর্যয়ের মধ্যেও দাপুটে ব্যাটিংয়ে উপহার দিলেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। কিন্তু নিউ জিল্যান্ডও পরে ঘুরে দাঁড়াল প্রবলভাবে। উইলিয়াম ও’রোকের বোলিং তোপে ধস নামল দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ে। সব মিলিয়ে নাটকীয় দিন শেষে ম্যাচ এখন অপেক্ষায় রোমাঞ্চকর এক সমাপ্তির।
হ্যামিল্টন টেস্টে জয়ের জন্য চতুর্থ ইনিংসে নিউ জিল্যান্ডের প্রয়োজন আর ২২৭ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ৯ উইকেট।
প্রথম ইনিংসে ৩১ রানের লিড পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংসে অল আউট হয় ২৩৫ রানে। দলের প্রায় অর্ধেক রান একাই করেন বেডিংহ্যাম।
আগের টেস্টের শেষ ইনিংসে ৮৭ রানের ইনিংস খেলা এই ব্যাটসম্যান এবার ১২ চার ও ২ ছক্কায় ১২২ বলে করেন ১১০। চতুর্থ টেস্টে তার প্রথম শতরান এটি।
দেশের মূল ক্রিকেটারদের প্রায় সবাই এসএ টোয়েন্টি নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও বেডিংহ্যাম নিজেকে সেই টুর্নামেন্ট থেকে সরিয়ে নেন দেশের হয়ে টেস্ট খেলবেন বলে। ২৯ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান সফরটি রাঙালেন পারফরম্যান্স দিয়েও।
দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসটি বড় হতে পারত আরও। কিন্তু নাটকীয় ধসে ৩৩ রানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে বসে তারা।
অভিষিক্ত কিউই পেসার উইলিয়াম ও’রোক শিকার করেন ৫ উইকেট। প্রথম ইনিংসেও তিনি নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯৩ রানে ৯ উইকেট নিয়ে নাম লিখিয়েছেন তিনি রেকর্ড বইয়ে।
নিউ জিল্যান্ডের সুদীর্ঘ টেস্ট ইতিহাসের অভিষেক ম্যাচে ৯ উইকেট শিকার করা প্রথম বোলার তিনি। আগের রেকর্ডটি ছিল ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অফ স্পিনার মার্ক ক্রেইগের ১৮৮ রানে ৮ উইকেট। পেস বোলিংয়ের রেকর্ডটি ছিল কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের ৬৪ রানে ৭ উইকেট।
বেডিংহ্যাম ব্যাটিংয়ে নামার আগে ধুঁকছিল তার দল। ৩ উইকেট হারায় তারা ৩৯ রানে।
উদ্বোধনী জুটি ১০ ওভার কাটালেও এক ওপেনার ক্লাইড ফোরটানের রান তখন ৩। একাদশ ওভারে ওই রানেই তাকে বিদায় করেন রাচিন রাভিন্দ্রা। তিনে নামা রেনার্ড ফ্যান টন্ডারকে শর্ট বলে ফিরিয়ে শিকার শুরু করেন ও’রোক।
আরেক প্রান্তে দারুণ খেলছিলেন নিল ব্রান্ড। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ৩৪ রান করে আউট হয়ে যান সেই ও’রোকের দারুণ এক ডেলিভারিতে।
বেডিংহ্যামের লড়াই শুরু সেখান থেকে। চাপের মধ্যেও শট খেলে যান তিনি। ক্রিজে যাওয়ার পরপরই পুল করে ছক্কায় ওড়ান রাভিন্দ্রাকে। এক প্রান্ত আগলে রেখে তাকে সঙ্গ দিয়ে যান জুবাইর হামজা।
বিস্ময়করভাবে নিল ওয়্যাগারকে ৩৬ ওভার পর্যন্ত বোলিংয়ে আনেননি কিউই অধিনায়ক টিম সাউদি। বল হাতে পাওয়ার পর পঞ্চম বলেই দলকে উইকেট এনে দেন ওয়্যাগনার। শর্ট বলে হামজাকে (৬৩ বলে ১৭) বিদায় করে ৬৫ রানের জুটি ভাঙেন তিনি।
বেডিংহ্যাম তাকে ভড়কে যাননি। নিজের মতোই খেলে এগোতে থাকেন তিনি। ফিফটি করে ফেলেন ৬৭ বলে। এবার জুটিতে সঙ্গী হিসেবে পান কিগান পিটারসেনকে। কিউই বোলারদের হতাশ করে লিড বাড়াতে থাকেন দুজন। দ্বিতীয় সেশনে ওভারপ্রতি প্রায় চার করে রান তুলে ৯৮ রান যোগ করেন তারা।
অবশেষে ৯৮ রানে এই জুটি ভাঙের ম্যাট হেনরি। তবে কৃতিত্ব বেশি সেখানে ফিল্ডারের। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ঝাঁপিয়ে এক হাতে অসাধারণ ক্যাচ নেন গ্লেন ফিলিপস। ৪৩ রানে বিদায় নেন পিটারসেন।
এর পরপরই শতরান পূরণ করেন বেডিংহ্যাম। কিন্তু এরপর বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি। ফিলিপসের আরেকটি চমৎকার ক্যাচে থামে তার দুর্দান্ত ইনিংস। বোলার সেই ও’রোক।
এরপর প্রোটিয়াদের ব্যাটিং ভেঙে পড়ে হুড়মুড়িয়ে। শন ফন বার্গ ও ডেইন প্যাটারসনকে এক ওভারে ফিরিয়ে ও’রোক পূর্ণ করেন ৫ উইকেট।
অভিষেকে এক ইনিংসে ৫ উইকেট পাওয়া দশম কিউই বোলার ও’রোক। তার ৩৪ রানে ৫ উইকেটের চেয়ে ভালো পারফরম্যান্স আছে কেবল আর চার জনের।
২৬৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে নিউ জিল্যান্ডের শুরুটা হয় স্বস্তিতেই। তবে দিনের শেষ ওভারে ডেভন কনওয়েকে ফিরিয়ে ৪০ রানের জুটি ভাঙেন অফ স্পিনার ডেইন পিট। অপেক্ষা এখন চতুর্থ দিনে জমজমাট লড়াইয়ের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ২৪২
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২১১
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: ৬৯.৫ ওভারে ২৩৫ (ব্রান্ড ৩৪, ফোরটান ৩, ফ্যান টন্ডার ১, হামজা ১৭, বেডিংহ্যাম ১১০, পিটারসেন ৪৩, দু সুয়াত ১, ফন বার্গ ২, পিট ২, প্যাটারসন ৭, মোরেকি ০*; সাউদি ৯-২-৩৩-০, হেনরি ১১-৫-১৫-১, রাভিন্দ্রা ১৩-১-৫০-১, ও’রোক ১৩.৫-৪-৩৪-৫, ফিলিপস ১৫-৩-৫০-২, ওয়্যাগনার ৮-১-৪২-১)।
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৬৭) ১৩.৫ ওভারে ৪০/১ (ল্যাথাম ২১*, কনওয়ে ১৭; প্যাটারসন ৫-১-২০-০, মোরেকি ৫-২-১৫-০, পিট ৩.৫-১-৩-১)।