মধ্যাঞ্চলের বড় লিডের পর আবারও ব্যাটিং বিপর্যয়ে উত্তরাঞ্চল।
Published : 27 Dec 2022, 06:02 PM
প্রথম রানটি হয়ে গেল অনায়াসে, দ্বিতীয়টি নিতে গিয়েই বিপত্তি। জাকের আলি ছুট দিয়ে একটু দূর গিয়েই বুঝলেন, পারবেন না। উল্টো ঘুরে আবার তিনি ছুটলেন কাছের ক্রিজের দিকে। কিন্তু ততক্ষণে অন্য প্রান্ত থেকে আরিফুল হকও যে ছুটে আসছেন! দুই ব্যাটসম্যান তখন ছুটছেন এক প্রান্তেই। সেখানে শেষ পর্যন্ত ‘জিতলেন’ জাকের আলি। একটুর জন্য রক্ষা পেলেন ৯৯ রানে রান আউট হওয়া থেকে।
সেঞ্চুরির জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষাও আর করতে হলো না তার। পরের ওভারেই নাঈম আহমেদের অফ স্পিনে স্কয়ার ড্রাইভে চার মেরে পৌঁছে গেলেন তিন অঙ্কে। চলতি বিসিএল শুরুর আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩৮ ম্যাচ খেলে কোনো সেঞ্চুরি ছিল না জাকেরের। সেখানে শতরান পেয়ে গেলেন টানা দুটি। আগের ম্যাচে ১২১ রানের পর এবার ১৩৮।
চট্টগ্রামে জাকেরের সেঞ্চুরি ও শরিফউল্লাহর সঙ্গে দারুণ জুটিতে বিসিবি মধ্যাঞ্চল প্রথম ইনিংসে তোলে ৩৩৫ রান। লিড পায় তারা ১৬৬ রানের।
বিসিবি উত্তরাঞ্চল প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও পড়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে। ওপেনার তৌফিক খান তুষার যদিও ৬১ বলে ৭২ রানের ইনিংস খেলেন, তারপরও তাদের রান ৪ উইকেটে ১২২।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার দিনের খেলা যখন শুরু হয়, তখনও পর্যন্ত ম্যাচে ছিল ভারসাম্য অবস্থা। ৫ উইকেটে ১২৮ রান ছিল মধ্যাঞ্চলের, লিড নেওয়ার আশা তখনও টিকে ছিল উত্তরাঞ্চলের। কিন্তু আগের দিন ৬৪ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর যে জুটি গড়েন জাকের ও শরিফউল্লাহ, সেটিই আরও অনেকদূর টেনে নেন দুজন। প্রথম দিনের চেয়ে উইকেট সহজ হয়ে আসে কিছুটা, দুজনের ব্যাটিংয়েও দেখা যায় দৃঢ়তা।
এই জুটিতেই লিড নিয়ে দুইশ পেরিয়ে আরও এগিয়ে যায় মধ্যাঞ্চল। সেঞ্চুরির হাতছানি ছিল দুজনের সামনেই। তবে তা কাজে লাগাতে পারেননি শরিফউল্লাহ। তার জন্য নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্পের সোজা শর্ট মিড অফ ধরনের একটি বিশেষ পজিশনে ফিল্ডার রেখে বল করছিলেন সোহরাওয়ার্দী শুভ। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে সেই ফিল্ডারের ওপর দিয়ে আলতো করে তুলে মারতে গিয়ে তিনি ক্যাচ দিয়ে বসেন বোলারকে।
৯ চারে ১৩৮ বলে ৮৩ রানে থামে শরিফউল্লাহর ইনিংস। ষষ্ঠ উইকেট জুটি শেষ হয় ১৬৪ রানে।
জাকের এরপর আরিফুল হক, আবু হায়দার রনিদের নিয়ে আরও এগিয়ে নেন দলকে। দলকে তিনশ পার করিয়ে থামে তার ৩৪০ মিনিটের ইনিংস। পেসার নাহিদ রানার করা অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল পুল করার চেষ্টায় ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ উঠে যায় মিড অফে।
২৪১ বলে তার ১৩৮ রানের ইনিংসে চার ৯টি, ছয় ৩টি।
১৬৬ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে উত্তরাঞ্চল আবারও শুরুতে হারায় মাহমুদুল হাসান জয়কে (৮)। অনেকদিন ধরে ধুঁকতে থাকা ব্যাটসম্যান আরও একবার আউট হন বাজে শটে। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের ডেলিভারি লাফিয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে তিনি বল টেনে আনেন স্টাম্পে।
তিনে নামা তানজিদ হাসান তামিমের ইনিংস শেষ হয় দুটি বাউন্ডারি মেরেই। মুশফিক হাসানের বলে সোজা ব্যাটে ড্রাইভ করতে গিয়ে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নিচে রাখতে পারেনি বল। ফলো থ্রুতে এক হাতে দুর্দান্ত রিফ্লেক্স ক্যাচ নেন বোলার।
তৌফিক অবশ্য আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে এগোতে থাকেন। সৌম্য সরকারের বলে ফ্লিক করে বাউন্ডারি মেরে ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি ৪৬ বলে।
পরে তার ইনিংস শেষ হয় সৌম্যর বলেই। ওই ওভারেই দুটি লফটেড শটে চার মারেন তিনি। এরপর শর্ট বলে হুক করে ধরা পড়েন ফাইন লেগ সীমানায়। ৬১ বলে ৭২ রানের ইনিংসে চার ১৩টি, ছয় একটি।
নতুন ব্যাটসম্যান নাঈম ইসলাম জীবন পান প্রথম বলেই। কিপার জাকেরের গ্লাভস ছুঁয়ে বল চলে যায় বাউন্ডারিতে। জীবন অবশ্য কাজে লাগে পারেননি তিনি। শেষ বেলায় আউট হয়ে যান ৫ রান করে।
প্রথম ইনিংসে ৭৩ রানের ইনিংস খেলা সাইফ হাসান দিন শেষ করেন ২৬ রানে অপরাজিত থেকে। ইনিংস পরাজয় এড়াতে তাদের প্রয়োজন এখনও ৪৪ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বিসিবি উত্তরাঞ্চল ১ম ইনিংস: ১৬৯
বিসিবি মধ্যাঞ্চল ১ম ইনিংস: ৯২.৩ ওভারে ৩৩৫ (আগের দিন ১২৮/৫) (মজিদ ১, আল মামুন ৯, সৌম্য ১৯, সালমান ১৩, জাকের ১৩৮, শুভাগত ৩, শরিফউল্লাহ ৮৩, আরিফুল ১৬, আবু হায়দার ১৪, মুরাদ ১০*, মুশফিক ১১; সাকিল ১৪-১-৪১-১, নাহিদ ১৯-১-৭৯-২, নাঈম আহমেদ ২৭-২-৯১-৩, সোহরাওয়ার্দী ২০.৩-২-৮০-৩, নাসির ৮-২-১৪-০, সাইফ ৪-০-১৯-০)
বিসিবি উত্তরাঞ্চল ২য় ইনিংস: ২৮ ওভারে ১২২/৪ (জয় ৮, তৌফিক ৭২, তানজিদ ১০, সাইফ ২৬*, নাঈম ইসলাম ৫, নাসির ০*; মুশফিক ৯-২-৩৫-১, আবু হায়দার ৭-২-৩৫-২, সৌম্য ৬.৩-১-৩৭-১, আল মামুন ১-০-৫-০, মুরাদ ৩-০-৮-০, আরিফুল ১.৩-০-২-০ )