৬ বছর পর মেয়েদের ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাল বাংলাদেশ।
Published : 16 Dec 2023, 11:25 PM
ব্যাটিং হলো দারুণ। প্রথম চার ব্যাটারের সবাই স্পর্শ করলেন ত্রিশ। তাদের মধ্যে মুর্শিদা খাতুন খেললেন নব্বই ছাড়ানো ইনিংস। রেকর্ড গড়া পুঁজি নিয়ে বোলিং-ফিল্ডিং হলো দুর্দান্ত। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং গুঁড়িয়ে স্মরণীয় জয়ের উচ্ছ্বাসে ভাসল বাংলাদেশ।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের মেয়েদের জয় ১১৯ রানে।
এই সংস্করণে রানের হিসাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় এটি। ২০১১ সালে সাভারের বিকেএসপিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে ৮২ রানে জয় ছিল আগের রেকর্ড।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৯ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের এটি তৃতীয় জয়, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম। ২০১২ সালে মিরপুরে ২ উইকেটে ও ২০১৭ সালে কক্সবাজারে জয় ছিল ১০ রানে।
ইষ্ট লন্ডনে শনিবার এই সংস্করণে নিজেদের সর্বোচ্চ ২৫০ রান বাংলাদেশ করে স্রেফ ৩ উইকেট হারিয়ে। ২০২২ বিশ্বকাপে হ্যামিল্টনে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৩৪ রান ছিল আগের রেকর্ড।
বাংলাদেশের স্পিনারদের দাপটে ৯৫ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ পর্যন্ত তারা যেতে পারে ১৩১ পর্যন্ত।
চার স্পিনার মিলে নেন ৯ উইকেট। ২৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দলের সফলতম বোলার বাঁহাতি স্পিনার নাহিদা আক্তার। দুই লেগ স্পিনার রাবেয়া খান ও ফাহিমা খাতুন এবং অফ স্পিনার সুলতানা খাতুনের প্রাপ্তি ২টি করে উইকেট।
তবে ১০০ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৯১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে জয়ের মূল কারিগর মুর্শিদা। এই সংস্করণে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস এটি। ১২ চারে সাজানো ইনিংসে ম্যাচের সেরাও তিনি।
একটি রেকর্ডও গড়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। তার ইনিংসে বাউন্ডারি থেকে এসেছে ৪৮ রান, ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটারের যা সর্বোচ্চ। মুর্শিদা ছাড়িয়ে গেছেন সালমা খাতুনকে। ২০১৩ সালে ভারতের বিপক্ষে সালমার ৭৫ রানের ইনিংসে বাউন্ডারি থেকে এসেছিল ৪৪ রান।
ব্যাটিংয়ে ৪৮ বলে ৩৮ রানের কার্যকর ইনিংসের পর উইকেটের পেছনে স্পিনারদের বলে তিনটি ক্যাচ নিয়ে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন অধিনায়ক নিগার।
শেষের মতো ম্যাচে বাংলাদেশের শুরুটাও হয় এ দিন ভালো। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শামিমা সুলতানা ও ফারজানা হকের নৈপুণ্যে প্রথম ১৪ ওভারে আসে বিনা উইকেটে ৬৬ রান। ওই স্কোরেই পরের ওভারে শুরুর জুটি ভাঙে শামিমার বিদায়ে (৪৮ বলে ৩৪)।
দ্বিতীয় উইকেটে জুটি বেঁধে দলের স্কোর একশ পার করেন ফারজানা ও তিনে নামা মুর্শিদা। শামিমার মতো ফারজানাও থিতু হয়ে ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৩৫ রান করতে তিনি খেলেন ৭৬ বল।
এরপরই ইনিংসের সেরা জুটি বাংলাদেশ পায় মুর্শিদা ও অধিনায়ক নিগারের সৌজন্যে। মুর্শিদা ফিফটি পূর্ণ করেন ৬০ বলে। ছাড়িয়ে যান তার আগের সেরা ৫৪ রানকে।
ফিফটির সম্ভাবনা জাগিয়ে আগেই থামেন নিগার। তার বিদায়ে ভাঙে ৮৭ বলে ৮০ রানের জুটি। চতুর্থ উইকেটে স্বর্ণা আক্তারের সঙ্গে ৫৩ বলে ৬০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলের স্কোর আড়াইশতে নিয়ে যান মুর্শিদা। স্বর্ণা ২৮ বলে ২ চারে করেন ২৭ রান।
বোলিংয়েও বাংলাদেশের শুরুটা হয় দারুণ। দ্বিতীয় ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক লরা উলভার্টকে ফিরিয়ে দেন সুলতানা। উইকেটের পেছনে ক্যাচ নেন নিগার। পরের ওভারে দারুণ ডেলিভারিতে আরেক ওপেনার তাজমিন ব্রিটসকে এলবিডব্লিউ করে দেন পেসার মারুফা আক্তার।
তৃতীয় উইকেটে ৪১ রানের জুটি গড়ে ফেলেন আনেকা বশ ও সুনে লিস। পাওয়ার প্লের পর নাহিদা ও রাবেয়া আক্রমণে আসার পর একটু পরপরই উদযাপনের উপলক্ষ পায় বাংলাদেশ।
বশকে নিগারের ক্যাচ বানিয়ে জুটি ভাঙেন নাহিদা। এরপর তিনি বিদায় করেন লিসকেও। রাবেয়া নিজের পরপর দুই ওভারে ফিরিয়ে দেন ন্যাডাইন ডি ক্লার্ক ও ডেলমি টাকারকে।
ফাহিমা আক্রমণে আসেন ২৫তম ওভারে। নিজের দ্বিতীয় ওভারে ধরেন জোড়া শিকার। দারুণ এক ডেলিভারিতে সিনালো জাফটাকে বোল্ড করার পরের বলে ননকুলুলেকো এমলাবাকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগান তিনি।
একশর আগে ৮ ব্যাটারকে হারানোর পর এলিজ-মারি মার্ক্সের ৩৫ রানের সুবাদে দক্ষিণ আফ্রিকার পরাজয়ের ব্যবধানই কমে শুধু।
এই সফরে এর আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজও জয় দিয়ে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। সেটি ছিল এই সংস্করণে দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়েদের বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় এবং দেশটির মাটিতে প্রথম জয়।
এবার দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম ওয়ানডে জয়ও ধরা দিল। সেটি এলো আবার বাংলাদেশের বিজয় দিবসে।
আগামী বুধবার সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে পচেফস্ট্রুমে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নামবে বাংলাদেশ দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৫০/৩ (শামিমা ৩৪, ফারজানা ৩৫, মুর্শিদা ৯১*, নিগার ৩৮, স্বর্ণা ২৭*; খাকা ১০-০-৪৩-০, ক্লাস ৮-০-৫২-০, মার্ক্স ৬-০-৪৩-১, ডি ক্লার্ক ৬-০-৩১-০, এমলাবা ১০-২-৩৭-১, টাকার ১০-১-৪৩-১)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩৬.৩ ওভারে ১৩১ (উলভার্ট ৫, ব্রিটস ৪, বশ ১৬, লিস ৩১, টাকার ১৪, ডি ক্লার্ক ১, মার্ক্স ৩৫, জাফটা ১১, এমলাবা ০, ক্লাস ৭, খাকা ০*; মারুফা ৫-০-১৯-১, সুলতানা ৯-১-৩২-২, নাহিদা ৮.৩-০-৩৩-৩, রাবেয়া ৮-১-২৪-২, ফাহিমা ৫-০-১৬-২, রিতু ১-০-৬-০)
ফল: বাংলাদেশ ১১৯ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: মুর্শিদা খাতুন