সরফরাজের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি আর শেষ জুটিতে ম্যাচ বাঁচাল পাকিস্তান

শেষ দিনে ব্যাট-বলের দারুণ লড়াইয়ের পর ড্র হলো করাচি টেস্ট।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2023, 01:22 PM
Updated : 6 Jan 2023, 01:22 PM

জিততে হলে পাকিস্তানকে গড়তে হতো রেকর্ড। তিনশর বেশি রান তাড়ায় শূন্য রানে ২ উইকেট আর শেষ দিনের প্রথম সেশনে আরও ৩ উইকেট হারানোর পর তাদের সামনে চোখ রাঙাচ্ছিল পরাজয়। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি ও দারুণ দুটি জুটিতে বরং জয়ের আশা জাগালেন সরফরাজ আহমেদ। বারবার রঙ বদলের ম্যাচে শেষ বেলায় তার বিদায়ের পর জয়ের পাল্লা আরেকবার হেলে পড়ল নিউ জিল্যান্ডের দিকে। তবে ম্যাচ বাঁচিয়ে ফিরল পাকিস্তানের শেষ উইকেট জুটি।

করাচিতে শেষ দিনে ব্যাট-বলের দারুণ লড়াইয়ের পর ড্র হয়েছে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। ৩১৯ রানের লক্ষ্য তাড়ায় পাকিস্তান ৯ উইকেটে করেছে ৩০৪ রান।

জয়ের হাতছানি ছিল দুই দলের সামনেই। আলোকস্বল্পতায় খেলা শেষ হয় তিন ওভার বাকি থাকতে।

এই সিরিজ দিয়ে প্রায় চার বছর পর সাদা পোশাকে ফিরে টানা তিন ফিফটির পর এবার ১৭৬ বলে ১১৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন সরফরাজ। তার বিদায়ের পর ৩.৩ ওভার কাটিয়ে দিয়ে ১৭ রান তোলে নাসিম শাহ ও আবরার আহমেদের দশম উইকেট জুটি।

দুই ম্যাচের সিরিজ শেষ হলো সমতায়। একই মাঠে প্রথম টেস্টও ড্র হয়েছিল।

করাচির জাতীয় স্টেডিয়ামের পিচে বোলারদের জন্য তেমন সহায়তা ছিল না পঞ্চম দিনেও। আগের দিন স্কোরবোর্ডে কোনো রান না তুলতে আবদুল্লাহ শফিক ও ‘নাইচওয়াচম্যান’ মির হামজাকে হারানোর পর শেষ দিনের ব্যাটিং শুরু করেন ইমাম-উল-হক ও শান মাসুদ।

ইমাম বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তাকে বোল্ড করে দেন লেগ স্পিনার ইশ সোধি। অধিনায়ক বাবর আজম শুরুটা করেন ইতিবাচক। তবে অফ স্পিনার মাইকেল ব্রেসওয়েলের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে কট বিহাইন্ড হন তিনি ৪১ বলে ২৭ রান করে। ব্রেসওয়েল নিজের পরের ওভারে ফিরিয়ে দেন মাসুসকেও (৩৫)।

তখন ৮০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে খুব চাপে পাকিস্তান। সৌদ শাকিলকে নিয়ে সরফরাজের লড়াই শুরুর এরপরই। লাঞ্চের আগে তো বটেই, চা-বিরতির আগেও আর কোনো বিপদ হতে দেননি এই দুজন।

সরফরাজ ফিফটি পূর্ণ করেন ৬২ বলে। শাকিলকে স্লিপের ক্যাচ বানিয়ে ২৬০ বলে ১২৩ রানের বড় জুটি ভাঙেন ব্রেসওয়েল। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান শাকিল এবার ১৪৬ বলে করেন ৩২ রান।

খানিক পর ডাবল নিয়ে সরফরাজ চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১৩৫ বলে। আট বছরের বেশি সময় পর এই সংস্করণে তিন অঙ্কের স্বাদ পেলেন তিনি। উদযাপনটাও ছিল খ্যাপাটে।

৩৫ বছর বয়সী এই কিপার-ব্যাটসম্যান আগের তিনটি সেঞ্চুরিই করেছিলেন ২০১৪ সালে, অগাস্ট থেকে নভেম্বরের মধ্যে।

সপ্তম উইকেটে আঘা সালমানের সঙ্গে ৮৩ বলে ৭০ রানের জুটি গড়েন সরফরাজ। তখন পাকিস্তানের জয়টা মনে হচ্ছিল খুব সম্ভব। কিন্তু এরপরই দ্রুত তারা হারিয়ে ফেলে ৩ উইকেট।

সালমানকে (৩০) বোল্ড করে জুটি ভাঙেন পেসার ম্যাট হেনরি। হাসান আলিকে এলবিডব্লিউ করে দেন টিম সাউদি।

দিনের যখন বাকি আর ৭ ওভার, আলো কমে আসায় নিউ জিল্যান্ডকে পেসারদের বাদ দিয়ে শুধু স্পিনারদের দিয়ে বোলিং করাতে বলেন আম্পায়ার। আক্রমণে ফিরে ওই ওভারেই সরফরাজকে ফিরিয়ে দেন ব্রেসওয়েল। লেগ স্টাম্পের বলে ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ফ্লিক করার চেষ্টায় গ্লাভসে লেগে ক্যাচ যায় লেগ স্লিপ ফিল্ডারের হাতে।

জয়ের জন্য নিউ জিল্যান্ডের দরকার তখন আর ১ উইকেট, পাকিস্তানের ৩২ রান, উইকেটে শেষ দুই ব্যাটসম্যান।

সব ফিল্ডার ঘিরে ধরেন ব্যাটসম্যানকে। এই সুযোগে ব্রেসওয়েলের এক ওভারে একটি করে ছক্কা-চার মারেন নাসিম। জমে ওঠে লড়াই।

৪ ওভারে পাকিস্তানের দরকার তখন ১৭ রান। এই মাঠেই ১৯৯৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩১৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ইনজামাম-উল-হক ও মুশতাক আহমেদের শেষ উইকেট জুটির বীরত্বে ১ উইকেটে জিতেছিল পাকিস্তান। যা দেশটিতে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড।

তেমন কিছুর সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছিল এবারও। তবে খেলা হতে পারে আর এক ওভার, আলোকস্বল্পতায় ম্যাচের ইতি টেনে দেন দুই আম্পায়ার, রোমাঞ্চের ভেলায় ভেসে ম্যাচ হয় ড্র।

শেষ ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়ে নিউ জিল্যান্ডের সফলতম বোলার ব্রেসওয়েল।

দুই ম্যাচে ৮৩.৭৫ গড়ে তিন ফিফটি আর এক সেঞ্চুরিতে ৩৩৫ রান করে ম্যাচ ও সিরিজের সেরা সফররাজ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৪৪৯

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৪০৮

নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৮২ ওভারে ২৭৭/৫ ডিক্লে.

পাকিস্তান ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩১৯) ৯০ ওভারে ৩০৪/৯ (আগের দিন ০/২) (ইমাম ১২, মাসুদ ৩৫, বাবর ২৭, সরফরাজ ১১৮, শাকিল ৩২, সালমান ৩০, হাসান ৫, নাসিম ১৫*, আবরার ৭*; সাউদি ২০-৭-৪৩-২, হেনরি ২১-৩-৬৯-১, সোধি ১৮-২-৫৯-২, ব্রেসওয়েল ২০-২-৭৫-৪, এজাজ ৭-১-৩২-০, মিচেল ৪-২-৫-০)

ফল: ম্যাচ ড্র

সিরিজ: দুই ম্যাচে সিরিজ ০-০ ড্র

ম্যান অব দা ম্যাচ: সরফরাজ আহমেদ

ম্যান অব দা সিরিজ: সরফরাজ আহমেদ