তিন ম্যাচের মধ্যে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করলেন সাইম আইয়ুব, ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ও ব্যাটিং একই ম্যাচে উপহার দিলেন সালমান আগা।
Published : 18 Dec 2024, 08:34 AM
ম্যান অব দা ম্যাচ হিসেবে ঘোষণা করা হলো সালমান আলি আগার নাম। পুরস্কার নিতে গিয়ে এই অলরাউন্ডার বললেন, স্বীকৃতিটি তিনি দিতে চান সাইম আইয়ুবকে। আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাচ-সেরা সাইম হলেও আসলে খুব একটা আপত্তির কিছু থাকত না। পাকিস্তানের দারুণ জয়ের নায়ক আসলে তো দুজনই।
বল হাতে চার উইকেটের পর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে দলকে জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে দিয়ে ম্যাচের সেরা সালমান। ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ও ব্যাটিং একই ম্যাচে উপহার দেন তিনি। তবে গুরুত্বপূর্ণ একটি উইকেটের পর অসাধারণ সেঞ্চুরি করে সাইমও ছিলেন উজ্জ্বল। শেষ পর্যন্ত প্রাপ্তিটা দলের। দুজনের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স সিরিজে এগিয়ে নেয় পাকিস্তানকে।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে তিন উইকেটে হারায় পাকিস্তান।
পার্লে মঙ্গলবার ভালো শুরুর পর পথ হারানো প্রোটিয়াদের হয়ে ৮৬ রানের লড়িয়ে ইনিংস উপহার দেন হাইনরিখ ক্লসেন। ৫০ ওভারে তারা তোলে ২৩৯ রান।
সেই রান তাড়ায় শুরুটা বাজে করলেও বিপর্যয় থেকে পাকিস্তানকে জয়ের দিকে এগিয়ে নেন সাইম ও সালমান। ১০ চার ও ৩ ছক্কায় ১১৯ বলে ১০৯ রান করেন সাইম।
বোলিংয়ে ৩২ রানে ৪ উইকেটের পর ব্যাটিংয়ে সালমান অপরাজিত থাকেন ৯০ বলে ৮২ রান করে।
পঞ্চম উইকেটে দুজনের ১৩৩ বলে ১৪১ রানর জুটির পর শেষ দিকে দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। তবে ঠাণ্ডা মাথায় খেলে তিন বল বাকি থাকতে দলকে জিতিয়ে ফেরেন সালমান।
বোল্যান্ড পার্কে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভালো শুরু এনে দেন টনি ডি জর্জি ও রায়ান রিকলটন। দুই বাঁহাতিকে থামাতে পাওয়ার প্লের ভেতর সালমানকে আক্রমণে আনেন পাকিস্তান অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান। এই অফ স্পিনারের দ্বিতীয় ওভারে তিনটি চার মারেন ডি জর্জি। দশম ওভারেই প্রোটিয়াদের রান হয়ে যায় ৭০।
তবে ওই ওভার থেকেই পালাবদলের শুরু। চোখের পলকে চিত্র বদলে দেন সালমান। ডি জর্জিকে (২৫ বলে ৩৩) এলবিডব্লিউ করে ৭০ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন তিনি। তার পরের ওভারে কাট করতে গিয়ে বল স্টাম্পে টেনে আনেন রিকেলটন (৩৮ বলে ৩৬)।
শেষ নয় সেখানেই। সালমান তার পরের ওভারে দুর্দান্ত দুটি ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন রাসি ফন ডার ডাসেন ও ট্রিস্টান স্টাবসকে।
১৮ রানের মধ্যে চার উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। চারটিই সালমানের।
পঞ্চম উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে দলকে উদ্ধার করেন এইডেন মার্করাম ও হাইনরিখ ক্লসেন। এই জুটি যখন হুমকি হয়ে উঠছে পাকিস্তানের জন্য, তখন বল হাতে আবির্ভাব ম্যাচের আরেক নায়কের। ৩৫ রান করা মার্করামকে ফিরিয়ে ৭৩ রানের জুটি ভাঙেন সাইম।
পরের সময়টায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে বলতে গেলে একাই টানেন ক্লাসেন। ষষ্ঠ উইকেটে মার্কো ইয়ানসেনের সঙ্গে যদিও ৫০ রানের জুটি গড় ওঠে। তবে সেটি মূলত ক্লসেনের কারণেই। ইয়ানসেনের অবদান ছিল তাতে ২৭ বলে ১০।
ক্লসেনের সামনে হাতছানি ছিল সেঞ্চুরির। সময়ও ছিল যথেষ্ট। তবে ৪৪তম ওভারে দারুণ ডেলিভারিতে তার মিডল স্টাম্প উপড়ে দেন শাহিন শাহ আফ্রিদি।
লোয়ার অর্ডারে কাগিসো রাবাদা ও ওটনিল বার্টম্যান লড়াই করে দলকে নিয়ে যান ২৩৯ পর্যন্ত।
রান তাড়ায় মার্কো ইয়ানসেনের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে আব্দুল্লাহ শাফিক ফেরেন শূন্য রানে। সাইম ও বাবর আজম দ্বিতীয় উইকেটে ৪৪ রানের জুটি গড়েন বটে, তবে বল লেগে যায় ৭৭টি।
বার্টম্যান আক্রমণে এসে বিপাকে ফেলে দেন পাকিস্তানকে। বাবরকে (৩৮ বলে ২৩) বিদায় করার পর তিনি বোল্ড করে দেন রিজওয়ানকে (১)। পাঁচে নামা কামরান গুলাম রান আউট ৪ রানেই।
২০তম ওভারে পাকিস্তানের রান তখন ৪ উইকেটে ৬০।
সাইম ও সালমান সেখান থেকেই টেনে তোলেন দলকে। এমনিতে সহজাত আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান হলেও সাইম এ দিন পরিস্থিতি বুঝে সাবধানতার পথ বেছে নেন। এক পর্যায়ে তার রান ছিল ৬২ বলে ৩৪। এরপর তিনি আপন রূপে ফেরেন। ফিফটিতে পা রাখেন ৭২ বলে। পরে খেলেন তার চেনা সব শট।
সালমান যে ঘরানার ব্যাটসম্যান, তার জন্য পরিস্থিতি ছিল আদর্শ। এক-দুই করে নিয়ে রান বাড়াতে থাকেন তিনি। প্রথম বাউন্ডারি মারেন তিনি ৫০তম বলে। তবে রান ততক্ষণে তার খারাপ নয় (৩৬)।
দুজনের জুটির ফিফটি আসে ৬২ বলে। সময়ের সঙ্গে দুজনই বাড়ান রানের গতি। জুটির পরের পঞ্চাশ আসে কেবল ৩৬ বলেই।
প্রথম স্পেলে ৫ ওভারে স্রেফ ৯ রান দেওয়া বার্টম্যান দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই দুজনের আক্রমণের মুখে পড়েন। টানা দুই ছক্কার পর চার মারেন সাইম, বাউন্ডারি আসে সালমানের ব্যাট থেকেও। ২২ রানের ওই ওভার রান রেটের চাপ সরিয়ে নেয় অনেকটা।
রাবাদার টানা দুই বলে চার ও ছক্কায় সাইম সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যান ১১২ বলে। এক ম্যাচ আগেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৬২ বলে ১১৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। এবার এই ইনিংসটি খেলে ২২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান আরেকবার বুঝিয়ে দিলেন, কেন তার প্রতিভায় এত ভরসা পাকিস্তানের।
দুজনের জুটিতেই দুইশ রান পেরিয়ে যায় পাকিস্তান। এরপর সাইমকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন রাবাদা। ওই ওভারে তিনি ফিরিয়ে দেন নতুন ব্যাটসম্যান ইরফান খানকেও। আরেকপ্রান্তে আফ্রিদি শূন্য রানে ফেরেন তাব্রেইজ শামসিকে স্লগ করার চেষ্টায়।
আট রানের মধ্যে তিন উইকেটের পতনে ম্যাচ জমে ওঠে আবার। জয়ের জন্য তখনও ৩১ রান লাগে পাকিস্তানের।
তবে স্নায়ুর চাপ সামলে নাসিম শাহকে নিয়ে দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেন সালমান।
শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল স্রেফ দুই রানের। ইয়ানসেনের প্রথম দুই বলে রান নিতে না পারলেও তৃতীয়টিতে সোজা ব্যাটে চার মেরে ম্যাচ শেষ করে দেন সালমান।
ম্যাচ-সেরা সালমান হলেও সাইমকে ডেকে নিয়ে ট্রফি হাতে দুজন ছবির জন্য পোজ দেন দুজন একসঙ্গেই।
সিরিজের পরের ম্যাচ কেপ টাউনে বৃহস্পতিবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ২৩৯/৯ (ডি জর্জি ৩৩, রিকেলটন ৩৬, ফন ডার ডাসেন ৮, মার্করাম ৩৫, স্টাবস ১, ক্লসেন ৮৬, ইয়াসসেন ১০, ফেহ্লুকোয়াইয়ো ১, রাবাদা ১১, বার্টম্যান ১০*; আফ্রিদি ১০-১-৪৬-১, নাসিম ৬-০-৪০-০, সালমান ৮-০-৩২-৪, আবরার ১০-১-৩২-২, রউফ ৭-০-৩২-০, সাইম ৭-০-৩৪-১, কামরান ২-০-৯-০)।
পাকিস্তান: ৪৯.৩ ওভারে ২৪২/৭ (সাইম ১০৯, শাফিক ০, বাবর ২৩, রিজওয়ান ১, কামরান ৪, সালমান ৮২*, আরিফঅন ১, আফ্রিদি ০, নাসিম ৯*; রাবাদা ১০-০-৪৮-২, ইয়ানসেন ৯.৩-০-৪৫-১, বার্টম্যান ৭-২-৩৭-২, মার্করাম ১০-১-৪২-০, শামসি ১০-০-৫৪-১, ফেহ্লুকোয়াইয়ো ৩-০-১৫-০)।
ফল: পাকিস্তান ৩ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে পাকিস্তান ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: সালমান আগা।