এনসিএল
রান আউটে কাটা পড়ে ৫ রানের জন্য প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি করতে পারেননি পারভেজ হোসেন।
Published : 03 Nov 2024, 07:16 PM
প্যাডেল সুইপে দুই রান নিয়ে সাজ্জাদুল হক সেঞ্চুরি পূর্ণ করতেই অন্য প্রান্তে দুই হাত ছড়িয়ে উদযাপন শুরু করলেন পারভেজ হোসেন। তিন ওভার পর সেই সাজ্জাদুলের ওপরই মেজাজ হারালেন পারভেজ। কারণ দুজনের ভুল বোঝাবুঝিতে মাত্র পাঁচ রানের জন্য যে সেঞ্চুরি করতে পারলেন না চট্টগ্রামের তরুণ ওপেনার।
জাতীয় ক্রিকেট লিগের তৃতীয় রাউন্ডে রোববার তিন অঙ্কের জাদুকরী স্পর্শ পেয়েছেন বরিশালের ওপেনার ইফতেখার হোসেনও। এছাড়া বল হাতে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন খুলনার শেখ মেহেদি হাসান।
সাজ্জাদুলের সেঞ্চুরি, পারভেজের ৫ রানের আক্ষেপ
কক্সবাজার একাডেমি মাঠে স্বীকৃত ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি করেন সাজ্জাদুল। প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরির সম্ভাবনা ছিল পারভেজেরও। কিন্তু রান আউট হওয়ায় তা করতে পারেননি তিনি।
সাজ্জাদুল ও পারভেজের বড় জুটির পর ঢাকার বিপক্ষে দ্বিতীয় দিনে ৩৭১ রানে অলআউট হয় চট্টগ্রাম। পরে দিনের শেষ দিকে ৬ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ২২ রান করে ঢাকা। ৩৪৯ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করবে তারা।
আগের দিনের শতকছোঁয়া অবিচ্ছিন্ন জুটিকে রোববার দুইশর ঠিকানায় নিয়ে যান সাজ্জাদুল ও পারভেজ। ৫৪তম ওভারে তাইবুর পারভেজের বল অন সাইডে ঠেলে রানের জন্য ছোটেন পারভেজ। কিন্তু দুই ব্যাটসম্যানের কেউই ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।
শেষ মুহূর্তে ক্রিজে ফেরার চেষ্টা করেন পারভেজ। তাতে কোনো লাভ হয়নি। রান আউট হয়ে ব্যাট ছুড়ে মারেন বাঁহাতি ওপেনার। মাঠ ছাড়ার সময়ও নতুন ব্যাটসম্যান শাহাদাত হোসেনকে উত্তেজিতভাবে কিছু বলতে থাকেন তিনি।
৯ চার ও ২ ছক্কায় ১৪৪ বলে ৯৫ রান করেন পারভেজ। এটিই তার সেরা ইনিংস। তার বিদায়ে ভাঙে ২২১ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। এরপর আর তেমন কোনো জুটি গড়ে ওঠেনি।
সাজ্জাদুল করেন ১৩৯ রান। ১৮৫ বলে ১৪টি চারের সঙ্গে ৫টি ছক্কা মারেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে)
চট্টগ্রাম ১ম ইনিংস: ৯৮ ওভারে ৩৭১ (আগের দিন ১০৭/১) (পারভেজ ৯৫, সাজ্জাদুল ১৩৯, শাহাদাত ৩১, শামীম ৩৬, নাঈম ২০, ইরফান ১, মুরাদ ০, শরিফ ১৮, ইফরান ১০, ইয়াসিন ২*; সুমন ১৬-৫-৪৭-০, রিপন ১৪-২-৫২-২, এনামুল ১৪-২-৭৪-২, শুভাগত ১৭-৫-৫৫-২, নাজমুল ২৯-২-১০৪-১, মোসাদ্দেক ৩-০-৭-০, তাইবুর ৫-০-১৮-১)
ঢাকা ১ম ইনিংস: ৬ ওভারে ২২/০ (আশিকুর ১৩*, জয়রাজ ৯*; ইফরান ২-০-৩-০, শরিফ ২-০-৯-০, মুরাফ ১-০-১০-০, নাঈম ১-১-০-০)
ব্যর্থতার ভিড়ে ইফতেখারের সেঞ্চুরি
কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রাজশাহীর বিপক্ষে বরিশালের ইনিংস একাই টেনেছেন ইফতেখার হোসেন। দারুণ সেঞ্চুরিতে দলকে দুইশ পার করিয়েছেন বাঁহাতি ওপেনার।
ভেজা আউটফিল্ডের কারণে প্রথম দিন টসই হয়নি এই মাঠে। রোববার টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে তেমন সুবিধা করতে পারেনি বরিশাল। ইফতেখারের সেঞ্চুরির পরও তারা গুটিয়ে গেছে ২০৫ রানে।
দিনের শেষ দিকে রাজশাহী ব্যাটিংয়ে নামার এক বল পরই আলোকস্বল্পতায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়।
বরিশালের ইনিংসের শুরুতেই ইফতেখারের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন আব্দুল মজিদ। সীমানার কাছাকাছি গিয়ে ব্যাট শূন্যে ছুড়ে মারেন ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞ ওপেনার। এরপর অভিষিক্ত আদিল বিন সিদ্দিক, ফজলে মাহমুদরাও হতাশ করেন।
সালমান হোসেনকে নিয়ে ৬৩ রানের জুটি গড়েন ইফতেখার। পরে সপ্তম উইকেটে মইনুল ইসলামের সঙ্গে তার জুটিতে আসে ৫০ রান। তবু দেড়শর আশপাশেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে বরিশাল।
১৬২ রানে নবম উইকেট পড়ার সময় ৭৪ রানে অপরাজিত ছিলেন ইফতেখার। রুয়েল মিয়ার সঙ্গে শেষ উইকেটে তিনি যোগ করেন ৪৩ রান। যেখানে বাঁহাতি ওপেনারের অবদান ৪২ রান।
স্বীকৃত ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি করে ১১৬ রানে আউট হন ইফতেখার। ২০৫ বলের ইনিংসে ১২টি চারের সঙ্গে তিনি মারেন ১টি ছক্কা।
রাজশাহীর হয়ে ৪টি উইকেট নেন অভিষিক্ত পেসার আলি মোহাম্মদ ওয়ালিদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে)
বরিশাল ১ম ইনিংস: ৭২.৪ ওভারে ২০৫ (মজিদ ০, ইফতেখার ১১৬, আদিল ২, ফজলে মাহমুদ ২, সালমান ৩০, তাসামুল ৬, মইন ৪, মইনুল ৩৩, কামরুল ১, তানভির ০, রুয়েল ১*; মোহর ১১-৩-২৬-১, ওয়ালিদ ১৪.৪-২-৫১-৪, সাব্বির ৮-২-১৭-১, নিহাদ ৭-১-২৫-০, মেহেরব ১৪-২-৪০-০, ওয়াসি ১১-২-২৭-২, সানজামুল ৭-২-১২-১)
রাজশাহী ১ম ইনিংস: ০.১ ওভারে ০/০ (মিজানুর ০*, সাব্বির ০*; তানভির ০.১-০-০-০)
মেহেদির ৫ উইকেট, ফলো-অনে মেট্রো
আগের দিন চমৎকার ব্যাটিংয়ে বড় সংগ্রহের ভিত গড়লেও রোববার বেশি দূর যেতে পারেনি খুলনা। এরপরও, দারুণ বোলিংয়ে ঢাকা মেট্রোকে ফলো-অন করিয়ে ইনিংস ব্যবধানে জয়ের আশা দেখছে তারা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফলো-অনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে এখনও ১৫৪ রানে পিছিয়ে ঢাকা মেট্রো। এর আগে ৩৭৬ রানে অল আউট হয় খুলনা। পরে মেট্রোর প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায় ২১০ রানে।
রোববার মাত্র ৬.১ ওভার ব্যাট করতে পারে খুলনা। ১৮ রানের মধ্যে শেষ ৪ উইকেট হারায় তারা।
মেট্রোর ১৬ বছর বয়সী অভিষিক্ত বাঁহাতি পেসার ফাহিম হাসান নেন ৪ উইকেট।
পরে উদ্বোধনী জুটিতে ৫৮ রান যোগ করেন নাঈম শেখ ও আনিসুল ইসলাম। এরপর তাদের আর কোনো জুটি গড়ে ওঠেনি। নাঈম ৫৪ ও আনিসুল ৩১ রান করে আউট হন।
ছয় নম্বরে নেমে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৪৪ রান করেন আমিনুল ইসলাম।
খুলনার পক্ষে ৬২ রানে ৫ উইকেট নেন মেহেদি। প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে তার অষ্টম ৫ উইকেট এটি।
দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমে দিনের শেষ দিকে উইকেট হারায়নি মেট্রো।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে)
খুলনা ১ম ইনিংস: ৯৩.১ ওভারে ৩৭৬ (আগের দিন ৩৫৮/৬) (টিপু ৫, মেহেদি ৫, হালিম ০, সালমান ৩*, আল আমিন ১; ফাহিম ১৬.১-৪-৫৬-৪, শহিদুল ১৯-১-৫৮-৩, আনিসুল ৫-১-১৫-০, রকিবুল ১৩-০-৭০-১, আশরাফুল ১৭-২-৭১-১, আমিনুল ১৩-১-৪৩-০, আইচ ৪-০-১৬-০, শামসুর ৬-০-২৪-০)
ঢাকা মেট্রো ১ম ইনিংস: ৬৬.৫ ওভারে ২১০ (নাঈম ৫৪, আনিসুল ৩১, আইচ ৬, মার্শাল ৩৭, শামসুর ১, আমিনুল ৪৪, তাহজিবুল ৪, শহিদুল ১৪, রকিবুল ৪, আশরাফুল ১*, ফাহিম ০; আল আমিন ১১-১-৩৪-০, সালমান ১২-০-৫৬-০, হালিম ১২-০-২৮-৩, জিয়াউর ২-০-৬-০, মেহেদি ২২.৫-৫-৬২-৫, টিপু ৭-২-১২-২)
ঢাকা মেট্রো ২য় ইনিংস: (ফলো-অন) ১.৩ ওভারে ১২/০ (নাঈম ১১*, আনিসুল ১*; আল আমিন ১-০-১২-০, সালমান ০.৩-০-০-০)
রংপুরকে চেপে ধরেছে সিলেট
বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে চলছে বোলারদের দাপট। দুই দিনেই শেষ হয়ে গেছে আড়াই ইনিংস। রংপুরকে চাপে ফেলে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছে সিলেট।
প্রথম ইনিংসে রংপুরের ১৫৮ রানের জবাবে ১৮৯ রানে অলআউট হয় সিলেট। ৩১ রানে পিছিয়ে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় দিন শেষে রংপুরের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৬৬ রান। তৃতীয় দিন সকালে ৩৫ রানে এগিয়ে থেকে ব্যাট করতে নামবে তারা।
সিলেটকে লিড এনে দেওয়ার কারিগর অমিত হাসান। ৬ চারে ১০৪ বলে ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন ২৩ বছর বয়সী উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। দলের আরও পাঁচ ব্যাটসম্যান দুই অঙ্ক ছুঁলেও কেউ ত্রিশ রান করতে পারেননি।
রংপুরের হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন রবিউল হক ও আবু হাশিম।
দিনের শেষ সেশনে তোফায়েল আহমেদের তোপে পড়ে রংপুর। দারুণ বোলিংয়ে ৩ উইকেট নেন ২৪ বছর বয়সী পেসার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে)
রংপুর ১ম ইনিংস: ১৫৮
সিলেট ১ম ইনিংস: ৫৮.২ ওভারে ১৮৯ (আগের দিন ২৪/০) (পিনাক ২৮, তৌফিক ২৮, মাইশুকুর ১১, অমিত ৫৭, মুবিন ১৭, আসাদুল্লা আল গালিব ৬, রাহাতুল ২৩, তোফায়েল ৫, রাজা ১*, আবু জায়েদ ১, খালেদ ০; মুকিদুল ১৩-১-৫৭-১, আসাদুল্লাহ হিল গালিব ১৩-০-৫৪-১, রবিউল ১৪.২-৪-৩৩-৩, রিজওয়ান ৮-২-১৮-১, নবিন ২-০-১২-০, হাশিম ৮-৬-৪-৩)
রংপুর ২য় ইনিংস: ২০ ওভারে ৬৬/৫ (রিজওয়ান ২, খালিদ ২০, মিম ২১, নাঈম ১৫, মুকিদুল ০, আকবর ৪*, তানবীর ২*; আবু জায়েদ ৩.৩-০-১৩-১, খালেদ ৫-১-২৫-১, তোফায়েল ৬.৩-২-১৩-৩, রাজা ৩-০-১৩-০, রাহাতুল ২-১-২-০)