ফলো-অনের আগে ও পরে জাকের আলির লড়াই

বিসিএলের ফাইনালে দক্ষিণাঞ্চলের রান পাহাড়ের পর ব্যাটিংয়ে জবাব দিতে পারল না মধ্যাঞ্চল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2023, 12:14 PM
Updated : 6 March 2023, 12:14 PM

অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের লেংথ বল। হতে পারত ওয়াইডও। জেন্টল মিডিয়াম পেসের সেই নিরীহ ডেলিভারি কাট করতে গিয়ে স্টাম্পে টেনে আনলেন জাকের আলি। বোলার এনামুল হক ফেটে পড়লেন খ্যাপাটে উল্লাসে! ওই ওভারেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এনামুলকে দারুণ এক ছক্কা মেরেছিলেন জাকের। কিপিং গ্লাভস ছেড়ে বোলিংয়ে আসা ক্রিকেটার বুনো উদযাপনে মেতে উঠলেন দ্রুতই শোধ তুলতে পেরে!

 

ওই উইকেটে ত্বরান্বিত হলো ফলো-অনের পথও। দক্ষিণাঞ্চলের সামনে মূল বাধা হয়ে ছিলেন যে জাকেরই! কক্সবাজারে বিসিএলের ফাইনালে সোমবার ফিফটি করে তার বিদায়ের একটু পর মধ্যাঞ্চলের ইনিংস গুটিয়ে যায় ২৩০ রানেই।

ফলো-অনে পড়ার পরও তারা স্বস্তিতে নেই। ৫ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারানোর পর শেষ পর্যন্ত তারা তৃতীয় দিন শেষ করে ৩ উইকেটে ৬৪ রানে।

ইনিংস পরাজয় এড়াতে এখনও ২০৬ রান প্রয়োজন। অতি নাটকীয় কিছু না হলে তাই শিরোপা জিততে চলেছে দক্ষিণাঞ্চল।

দক্ষিণাঞ্চল আগের দিন ৫০০ রানে ইনিংস ঘোষণার পর মধ্যাঞ্চল দিন শেষ করে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৩৩ রান তুলে। তৃতীয় দিনে পঞ্চম বলেই হারায় তারা উইকেট। সুমন খানের বলে স্লিপে লাফিয়ে এক হাতে যে ক্যাচটি নেন পিনাক ঘোষ, বাংলাদেশের বাস্তবতায় তা অবিশ্বাস্য।

সুমনের বলেই একটু পরে না খেলে ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হন মোহাম্মদ মিঠুন। ওপেনার সৌম্য সরকার ৩৩ রান করে আউট হন সৈয়দ খালেদ আহমেদের শর্ট বলে পুল করে। মোসাদ্দেক হোসেন ৮ রান করে অফ স্পিনার মইন খানের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ক্যাচ দেন মিড উইকেটে।

এরপর বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু যখন দ্রুত ফিরিয়ে দেন শুভাগত হোম ও শরিফউল্লাহকে, ৯২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে মধ্যাঞ্চল।

জাকের আলির লড়াই সেখান থেকেই। এই মৌসুমে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা কিপার-ব্যাটসম্যান আগলে রাখেন এক প্রান্ত। আরেক প্রান্তে সহজাত ব্যাটিংয়ে রান বাড়ান আরিফুল হক। ৬৪ রানের জুটি গড়েন দুজন।

এই জুটিও ভাঙেন নাজমুল। ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৪০ রান করে আলগা শটে স্লিপে ক্যাচ দেন আরিফুল।

৯ নম্বরে নেমে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে আবু হায়দার আরেকটি জুটি গড়েন জাকেরের সঙ্গে। এই জুটিতে আসে ৫৬ রান, সেখানে আবু হায়দার করেন ২ চার ও ৪ ছক্কায় ৩৯। ফজলে মাহমুদের বাঁহাতি স্পিনে অনেক বাইরের বল কাট করার চেষ্টায় আউট হন আবু হায়দার।

পরের ওভারেই এনামুলের বলে ছক্কায় ফিফটিতে পা রাখেন জাকের। ওই ওভারেই বিদায় নেন তিনি ১২৭ বলে ৫৩ করে। একটু পর এনামুলের সোজা বল মিস করে মুশফিক হাসান বোল্ড হলে শেষ হয় দক্ষিণাঞ্চলের ইনিংস।

ফলো-অনে পড়ে ব্যাটিংয়ে নেমে আবার বিপর্যয়ে পড়ে মধ্যাঞ্চল। অফ স্পিনার মইনের বলে সৌম্য স্লিপে ক্যাচ দেন ১ রানে। মইন নিজের পরের ওভারে বোল্ড করে দেন শুভাগতকে। এই দুই উইকেটের মধ্যে খালেদের বলে বাজে শটে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মজিদ।

৬ ওভার শেষে মধ্যাঞ্চলের রান ৩ উইকেটে ৫!

মিঠুন ও জাকের অবশ্য এ দিন আর বিপদ হতে দেননি। পাল্টা আক্রমণে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৪৭ বলে ৪০ রানে অপরাজিত থেকে যান মিঠুন। ১৯ রানে দিন শেষ করে জাকের। অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ৫৯। তবে এখনও তাদের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

 

বিসিবি দক্ষিণাঞ্চল ১ম ইনিংস: ৫০০/৫ (ডি.)

বিসিবি মধ্যাঞ্চল ১ম ইনিংস: ৭৪.২ ওভারে ২৩০ (আগের দিন ৩৩/০) (মজিদ ১৬, সৌম্য ৩৩, মিঠুন ৭, মোসাদ্দেক ৮, জাকের ৫৩*, শুভাগত ৯, শরিফউল্লাহ ২, আরিফুল ৪০, আবু হায়দার ৩৯, মুরাদ ১২*, মুশফিক ০; খালেদ ১৫-২-৪৯-১, মঈন ১৬-৩-৩৪-১, নাজমুল অপু ২১-৬-৬১-৩, সুমন ১০-১-৩৫-২, নিহাদ ৮-২-৩৪-০, ফজলে মাহমুদ ৩-০-৮-১, এনামুল ১.২-০-৭-২)

বিসিবি মধ্যাঞ্চল ২য় ইনিংস: (ফলো-অনের পর) ১৯ ওভারে ৬৪/৩ (মজিদ ২, সৌম্য ১, মিঠুন ৪০*, শুভাগত ০, জাকের ১৯*; খালেদ ৫-২-১৬-১, সুমন ২-০-৪-০, মইন ৫-২-১৩-২, নাজমুল অপু ৪-০-১৩-০, এনামুল ১-০-৪-০, নিহাদ ২-০-১০-০)