পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ
মুলতানে ১২৭ রানের জয়ে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে এগিয়ে গেল পাকিস্তান।
Published : 19 Jan 2025, 04:35 PM
স্পিন সহায়ক উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসেও জ্বলে উঠলেন সাজিদ খান। শেষ দিকে প্রতিপক্ষের ব্যাটিংয়ে ধস নামালেন আবরার আহমেদ। দুই স্পিনারের বিষে নীল হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দারুণ জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল পাকিস্তান।
মুলতানে সিরিজের প্রথম টেস্ট শেষ হয়ে গেল আড়াই দিনেই। ১২৭ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল স্বাগতিকরা। ২৫১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় আরেকবার ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে স্রেফ ১২৩ রানে গুটিয়ে গেল সফরকারীরা।
প্রথম ইনিংসে চার উইকেট নেওয়া সাজিদ দ্বিতীয়ভাগে ধরেন পাঁচ শিকার। টেস্টে এনিয়ে চতুর্থবার ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন এই অফ স্পিনার। চমৎকার পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে তারই হাতে।
প্রথম ইনিংসে একটি উইকেট পাওয়া লেগ স্পিনার আবরার আহমেদ এবার পেয়েছেন চারটি। আর প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়া বাঁহাতি স্পিনার নোমান আলির এবার প্রাপ্তি একটি।
ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২০টি উইকেটই নিয়েছেন পাকিস্তানের স্পিনাররা। এনিয়ে পঞ্চমবার প্রতিপক্ষ সবকটি শিকার ধরলেন দেশটির স্পিনাররা।
দিনের শুরুতে অবশ্য দাপট দেখান ক্যারিবিয়ান স্পিনার জোমেল ওয়ারিক্যান। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে স্রেফ ৩২ রান দিয়ে ৭ উইকেট নেন বাঁহাতি এই স্পিনার। পাকিস্তানের মাটিতে তার চেয়ে বেশি উইকেট নিতে পারেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের আর কোনো বোলার।
মুলতানের উইকেট ছিল ব্যাটসম্যানদের জন্য বধ্যভূমি। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ রিজওয়ান বলেছিলেন, তিন দিনেই শেষ হয়ে যেতে পারে ম্যাচ। দুই দলের স্পিনারদের নৈপুণ্যে আড়াই দিনেই শেষ হয়ে গেল খেলা।
এই ম্যাচে দুই দল মিলিয়ে মোট বল হয়েছে ১ হাজার ৬৪টি। পাকিস্তানের মাটিতে ফল হওয়া কোনো টেস্টে যা সর্বনিম্ন।
৩ উইকেটে ১০৯ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করা পাকিস্তানকে বেশিদূর যেতে দেননি ওয়ারিক্যান। তার ছোবলে স্রেফ ১৫৭ রানে গুটিয়ে যায় প্রথম ইনিংসে ২৩০ রান করা শান মাসুদের দল।
দিনের প্রথম বলেই সাউদ শাকিলকে ফিরিয়ে দেন ওয়ারিক্যান। এই স্পিনারের পরের ওভারে লেগ স্লিপে ধরা পড়েন রিজওয়ান। কামরান গুলামকে বিদায় করে টেস্টে নিজের প্রথম পাঁচ উইকেটের স্বাদ নেন ওয়ারিক্যান। আগের দিন দুই শিকার ধরেছিলেন তিনি।
নোমানের পর সাজিদকেও দ্রুত ড্রেসিং রুমে পাঠিয়ে দেন ওয়ারিক্যান। আরেকটি উইকেটেও তিনি রাখেন অবদান। তার সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হন খুররাম শাহজাদ। সালমান আগাকে ফিরিয়ে পাকিস্তানের ইনিংস গুটিয়ে দেন গুডাকেশ মোটি।
৪৮ রানে শেষ ৭ উইকেট হারায় পাকিস্তান। প্রথম ইনিংসের ৯৩ রানের লিডের সুবাদে প্রতিপক্ষকে আড়াইশ রানের লক্ষ্য দিতে পারে তারা।
সহায়ক উইকেটে এই রানই দলের জন্য যথেষ্ট করে তোলেন সাজিদ। তার স্পিনে ৩৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে ক্যারিবিয়ানরা। তিনি শিকার ধরা শুরু করেন ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে দিয়ে। তার পরের ওভারে কট বিহাইন্ড হন কেসি কার্টি।
খানিক বাদে পরপর দুই ওভারে চমৎকার দুটি ডেলিভারিতে সাজিদ বোল্ড করেন দেন কাভেম হজ ও মিকাইল লুইকে। নোমান আলির বলে এলবিডব্লিউর বিপক্ষে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান জাস্টিন গ্রিভস। তাকে নিজের পরের ওভারে এলবিডব্লিউ করেই ফেরান নোমান।
ব্যাটিং ধসে ৫৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে তখন ভীষণ চাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকে আর তাদের ঘুরে দাঁড়াতে দেননি আবরার। টেভিন ইমলাককে কট বিহাইন্ড করার কয়েক ওভার পর এই লেগ স্পিনারর পরপর দুই বলে বিদায় করেন কেভিন সিক্লেয়ার ও মোটিকে।
সতীর্থদের ব্যর্থতার দিনে এক প্রান্তে লড়াই চালিয়ে ৪৮ বলে ফিফটি করেন আলিক আথানেজ। তাকে এলবিডব্লিউ করে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন সাজিদ। ওয়ারিক্যানকে বোল্ড করে পাকিস্তানকে জয়ের উল্লাসে ভাসান আবরার।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ ৪ উইকেট হারায় ১২৩ রানে দাঁড়িয়ে।
মুলতানেই দ্বিতীয় টেস্ট শুরু আগামী শনিবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ২৩০
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ১৩৭
পাকিস্তান ২য় ইনিংস: ৪৬.৪ ওভারে ১৫৭ (আগের দিন ১০৯/৩) (কামরান ২৭, শাকিল ২, রিজওয়ান ২, সালমান ১৪, নোমান ৯, সাজিদ ৫, খুররাম ০, আবরার ০*; মোটি ১১.৪-০-৪৮-১, সিলস ১০-০-৩৭-০, সিনক্লিয়ার ৫-১-১৬-০, ওয়ারিক্যান ১৮-৩-৩২-৭, হজ ২-০-১৩-০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৫১) ৩৬.৩ ওভারে ১২৩ (ব্র্যাথওয়েট ১২, লুই ১৩, কার্টি ৬, হজ ০, আথানেজ ৫৫, গ্রিভস ৯, ইমলাক ১৪, সিনক্লেয়ার ১০, মোটি ০, ওয়ারিক্যান ০, সিলস ০*; সাজিদ ১৫-৩-৫০-৫, আবরার ১১.৩-২-২৭-৪, নোমান ১০-১-৪২-১)
ফল: পাকিস্তান ১২৭ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাজিদ খান
সিরিজ: ২ টেস্টের সিতিজে ১-০তে এগিয়ে পাকিস্তান