জাভেদ মিয়াঁদাদের ঐতিহাসিক সেই ছক্কা, শহিদ আফ্রিদির বিখ্যাত ছক্কার সঙ্গে পাকিস্তান ক্রিকেটে যোগ হলো আরও দুটি অবিশ্বাস্য ছক্কা।
Published : 08 Sep 2022, 10:05 AM
জাভেদ মিয়াঁদাদের ছক্কা। ব্যস, আর কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে না। ক্রিকেটের রূপকথায় চিরস্থায়ী জায়গা পেয়ে যাওয়া সেই ছক্কার ঘটনা জানা ক্রিকেটের অনুসারী প্রায় সবার। শহিদ আফ্রিদিরও মনে রাখার মতো দুটি ছক্কায় ম্যাচ জেতানোর নজির আছে ৮ বছর আগে এশিয়া কাপের মঞ্চেই। এবার নাসিম শাহর ছক্কায় বাবর আজমের মনে পড়েছে মিয়াঁদাদকে। এই দুই ছক্কা মিয়াঁদাদ-আফ্রিদির ছক্কার মতোই বিখ্যাত হয়ে থাকবে বলে মনে করেন অলরাউন্ডার শাদাব খান।
এশিয়া কাপে বুধবার পাকিস্তানের অবিশ্বাস্য এক জয়ের নায়ক নাসিম। এমনিতে ফাস্ট বোলার হলেও দলকে এ দিন জেতান তিনি শেষ ওভারে ব্যাট হাতে দুটি ছক্কায়।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন পড়ে ১১ রানে। উইকেটে ১০ ও ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান। বল হাতে ছুটে আসেন তখনও পর্যন্ত ম্যাচের সেরা বোলার ফজলহক ফারুকি। কিন্তু এবার ইয়র্কার করতে গিয়ে গড়বড়। বলটি হয়ে যায় ফুল টস। দশে নামা নাসিম শাহ সেটিকে উড়িয়ে মারেন লং অফের ওপর দিয়ে। পরের বলটি আবারও ইয়র্কার করার চেষ্টায় ফুল টস, এবারও ওই একই জায়গা দিয়ে ছক্কায় উড়িয়ে দলকে অবিস্মরণীয় জয় এনে দেন নাসিম।
প্রেক্ষাপট এমন যে, মিয়াঁদাদের সেই ছক্কার কথা মনে পড়তে বাধ্যই। এই শারজাহতেই জন্ম হয়েছিল সেই ইতিহাসের, সম্ভবত ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত ছক্কা সেটি।
১৯৮৬ সালে অস্ট্রেলেশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে জয়ের জন্য শেষ বলে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৪ রান। ভারতের পেসার চেতন শর্মা ওই বলটি করে বসেন ফুল টস। মিয়াঁদাদ সেটিকে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কায় উড়িয়ে বাঁধানহারা উদযাপনে মেতে ওঠেন। এবার দলকে জেতানোর পর নাসিমের উদযাপনও ছিল খ্যাপাটে।
ম্যাচ শেষে পুরষ্কার বিতরণীতে নাসিমের ছক্কার প্রসঙ্গে অবধারিতভাবেই যেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম তুলে আনলেন মিয়াঁদাদের সেই ছক্কার প্রসঙ্গ।
“এই ছক্কা দেখে তো জাভেদ ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেছে। শারজাহতে উনি ছক্কা মেরেছিলেন। সেরকম কিছুই হলো আজ।”
পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছিলেন এদিন রবি শাস্ত্রী। মিয়াঁদাদের সেই ছক্কার ম্যাচে খেলা সাবেক ভারতীয় এই অলরাউন্ডার একটু মজাও করলেন বাবরের কথা শুনে, “আমি ছিলাম সেদিন মাঠে… মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ!”
১৩০ রান তাড়ায় এ দিন আফগান বোলিংয়ের সামনে বারবার ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং। তাদের শেষ ভরসা আসিফ আলি যখন আউট হন শেষের আগের ওভারে, আফগানদের জয়ই তখন মনে হচ্ছিল অবিশ্যম্ভাবী। কিন্তু শেষ ওভারে দুই চলে ছক পাল্টে দিলেন নাসিম।
বাবর বললেন, দলের ব্যাটিংয়ে আশাহত খানিকটা আশা তার মনে ছিল নাসিমকে নিয়ে।
“ড্রেসিং রুমেই ছিলাম তখন। টেনশন তো ছিলই। তবে মনের মধ্যে সামান্য একটু উঁকি দিয়েছিল যে, নাসিম শাহ হয়তো কিছু করতে পারে… খেলাটা ক্রিকেট, যে কোনো কিছুই হতে পারে। ওকে দেখেছি নানা সময়ে ভালোই ব্যাটিং করে। সামান্য আশা ছিল যে সে করে ফেলতেও পারে। যেভাবে করল, অসাধারণ।”
মিয়াঁদাদের ওই ছক্কার মতো বিখ্যাত নয় আফ্রিদির ছক্কা। তবে প্রেক্ষাপটে আরও বেশি মিল আছে সেবারের সঙ্গে এবারের। সেটিও ছিল এশিয়া কাপ এবং উইকেটে ছিল শেষ জুটি। সেবারও পরপর দুটি ছক্কা!
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সেদিন ভারতের বিপক্ষে শেষ ওভারে ২ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১০ রান। শেষ ওভারটি করেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ওভারের প্রথম বলে বোল্ড হন সাঈদ আজমল। পরের বলে একটি রান নেন শেষ ব্যাটসম্যান জুনাইদ খান। ৪ বলে যখন প্রয়োজন ৯ রান, পরপর দুই বলে দুটি ছক্কায় পাকিস্তানকে জিতিয়ে দেন শহিদ আফ্রিদি।
এবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরা হওয়া শাদাব খান ম্যাচ শেষে বললেন, নাসিমের এই দুই ছক্কাও অমর হয়ে থাকবে ক্রিকেটে।
“নাসিম শাহ যে দুটি ছক্কা মারল… যেভাবে জাভেদ ভাই আর শহিদ ভাইয়ের ছক্কা লোকে সবসময় মনে রাখে, এই দুই ছক্কাও সেভাবে মনে থাকবে। নাসিমের ক্যারিয়ারের শেষ পর্যন্ত এই দুই ছক্কার চর্চা হবে। অসাধারণ দুটি শট…।”
তবে এই দুই শট যে কোনো ‘ফ্লুক’ নয়, এমবের পেছনে পরিকল্পনাও আছে, তা জানিয়ে দিলেন শাদাব।
“আমাদের যেভাবে পরিকল্পনা হয়, ম্যানেজমেন্ট কিন্তু বোলারদেরও যথেষ্ট ব্যাটিং করায় নেটে। কারণ, টি-টোয়েন্টিতে যে কোনো কিছু হতে পারে। কবে কোন পরিস্থিতিতে কোন বোলার কাজে লেগে যায় ব্যাটিংয়ে, কে জানে। আজকে নাসিমের ক্ষেত্রে সেটিই হলো। আমাদের সব বোলারেরই ব্যাটিংয়ে এই সামর্থ্য আছে যে, প্রয়োজন হলে ম্যাচ শেষ করতে পারে।”