গতি ও আগ্রাসনে ব্যাটসম্যানদের চমকে দিতে চান মুশফিক

ঘরোয়া ক্রিকেটের মতো্ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও বোলিংয়ে নিজের আগ্রাসন ধরে রাখতে চান বাংলাদেশ টেস্ট দলে জায়গা পাওয়া তরুণ এই পেসার।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 June 2023, 01:40 PM
Updated : 8 June 2023, 01:40 PM

‘ভয় পাওয়ার কিছু নেই… স্বাভাবিক থাকুন’, সংবাদ সম্মেলনের মাঝেই মুশফিক হাসানকে থামিয়ে কিছুটা অভয় দেওয়ার চেষ্টা করলেন এক সাংবাদিক। এরপরও ঠিক স্বচ্ছন্দ হতে পারলেন না টেস্ট দলের নবীন এই সদস্য। আড়ষ্টতা নিয়েই শেষ করলেন বাকি কথা। তবে ক্যামেরা-মাইক্রোফোনের সামনে তিনি যেমনই হোক, বল হাতে ব্যাটসম্যানদের জন্য একরকম হুমকিই দিয়ে রাখলেন তরুণ পেসার।

ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রথম শ্রেণির সংস্করণে প্রতিভার ছাপ রেখে বাংলাদেশ টেস্ট দলে জায়গা করে নিয়েছেন মুশফিক। গত রোববার দল ঘোষণা হলেও ‘এ’ দলের সিরিজ খেলে ছুটিতে থাকায় ২০ বছর বয়সী পেসার অনুশীলনে যোগ দেন বৃহস্পতিবার।

প্রথম দিনের অনুশীলনে বেশ লম্বা সময় নেটে লাল বলে বোলিং করেন মুশফিক। কাছ থেকে তাকে পর্যবেক্ষণ করেন জাতীয় দলের পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড ও বাংলাদেশ টাইগার্সের পেস বোলিং কোচ চাম্পাকা রামানায়েকে। কিছুক্ষণ পরপর মুশফিকের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় তাদের। 

প্রায় দুই ঘণ্টার বোলিং সেশনের পর ফিল্ডিংয়েও চনমনে দেখা যায় মুশফিককে। ক্যাচিং ও গ্রাউন্ড ফিল্ডিং- উভয় ক্ষেত্রেই প্রায় নির্ভুল ছিলেন তিনি। কিন্তু মাঠের মুশফিক যতটা চঞ্চল, সংবাদমাধ্যমের সামনে যেন ততটাই শান্ত। তুলে ধরলেন তিনি প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা।

“অনেক ভালো লাগছে। আজকেই আমি প্রথম ক্যাম্পে যোগ দিয়েছি। কোনো কিছু মনে হচ্ছে না যে... সাকিব (আল হাসান) ভাই বললেন, ‘অভিনন্দন মুশফিক। চালিয়ে যাও।’ অ্যালান ডোনাল্ডের সঙ্গে সবশেষ কাজ করেছিলাম। তিনিও স্বাগত জানিয়েছেন।”

ঘরোয়া ক্রিকেট বা ‘এ’ দলের সিরিজে মুশফিকের বোলিংয়ে নিয়মিতই দেখা গেছে ফাস্ট বোলারের সহজাত আগ্রাসন। জাতীয় দলের দুয়ারে দাঁড়িয়ে সেই মানসিকত ধরে রাখার বার্তা দিলেন তিনি।

“এটা (গতি ও আগ্রাসন) আমার সহজাত। আমি সবসময় এটা ধরে রাখার চেষ্টা করি। বড় ভাইরা, স্যাররাও বলেন, ‘তোমার যেটা সহজাত সেটা ধরে রাখবে, তাহলে ভবিষ্যতে ভালো করতে পারবে।”

শুধু তাই নয়, ব্যাটসম্যানদের মনোজগতে নিজের দাপট প্রতিষ্ঠার ছবি এঁকে নিয়েছেন মুশফিক।

“অবশ্যই এটা (ব্যাটস্যানদের মনে আতঙ্ক তৈরি করার কথা) তো মনের ভেতরে কাজ করেই। প্রথমে লাইন-লেংথ ঠিক রেখে মাঝেমধ্যে সারপ্রাইজ কিছু দিয়ে ব্যাটসম্যানকে আতঙ্কে রাখার চেষ্টা করি।”

গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দলে ছিলেন মুশফিক। ওই আসরে একটির বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি তিনি। পরে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও বেশিরভাগ সময় কাটে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের বেঞ্চে বসে। তিনটি ম্যাচ খেলে তিন উইকেটের দেখা পান দেদার রান বিলিয়ে।

ঘরোয়া ক্রিকেটে সাদা বলের শুরুটা তেমন ভালো না হলেও লাল বলে অভিষেক ম্যাচেই ৫ উইকেট নেন মুশফিক। এই মৌসুমের জাতীয় ক্রিকেট লিগে চ্যাম্পিয়ন রংপুর বিভাগের হয়ে ৬ ম্যাচে পান ২৫ উইকেট। 

পরে ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে আনঅফিসিয়াল টেস্ট, বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে আনঅফিসিয়াল টেস্ট সিরিজেও সামর্থ্যের জানান দেন তরুণ পেসার। সব মিলিয়ে সাত মাসের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে ১৩ ম্যাচে মুশফিকের ঝুলিতে রয়েছে ৪৯ উইকেট।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে হতাশাজনক শুরুর পর মুশফিকের ঘুরে দাঁড়ানোয় ভূমিকা রেখেছে হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) ইউনিটে কাজ করা।

“গত বছর আমি এইচপিতে ছিলাম। অনেক পরিশ্রম করেছি ফিটনেস নিয়ে, বোলিং নিয়ে। তালহা জুবায়ের ভাই (সাবেক জাতীয় পেসার ও কোচ) ছিলেন, চাম্পাকা ছিলেন। সবার সঙ্গে আলোচনা করেছি। ভালো হয়েছে৷”

বয়সভিত্তিক পর্যায়ে পেরিয়ে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন মুশফিক। এরপর পেয়েছেন ‘এ’ দলের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা। সামনে এখন আন্তর্জাতিক মঞ্চের হাতছানি। বড় সম্ভাবনার সামনে থাকলেও নিজের মানসিকতায় কোনো পরিবর্তন আনতে চান না তিনি।

“(ঘরোয়া ক্রিকেট ও ‘এ’ দলের) পার্থক্য বলতে আমি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এনসিএল ও বিসিএল যেভাবে খেলেছি, ঠিক ওভাবেই ‘এ’ দলে খেলেছি। যদি জাতীয় দলে সুযোগ পাই, তাহলে একইভাবে খেলব।”

স্কোয়াডে ডাক পেলেও টেস্ট অভিষেকের জন্য কঠিন লড়াইয়ে পড়তে হবে মুশফিককে। স্কোয়াডে পেসার আছে আরও চার জন- তাসকিন আহমেদ, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, ইবাদত হোসেন চৌধুরি, শরিফুল ইসলাম। তাদের প্রত্যেকেরই আছে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা।

এই পেসারদের টপকে মূল একাদশে খেলার চেয়ে বরং তাদের সঙ্গে থেকে শেখার সুযোগ পাওয়াই বড় মুশফিকের কাছে।  

“(ভালো করার) আত্মবিশ্বাস না থাকলে তো এখানে আসতে পারতাম না। বড় ভাইরা ভালো করছে, উনাদের দেখে অনুপ্রাণিত হই। এখন বাংলাদেশের পেসারদের দেখে অনেক কিছু শেখার আছে। তারা অনেক পরিশ্রম করেন। তাদের দেখে অনেক কিছু শিখতে পারছি। আমাকে অনেক সাহায্য করছেন। আমি মনে করি, সব মিলিয়ে আমি সৌভাগ্যবান।”