বাবর আজমকে সমর্থন করে শাহিন শাহ আফ্রিদির একটি বানোয়াট বিবৃতি প্রকাশ করে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড, যা নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিতর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে।
Published : 01 Apr 2024, 10:50 AM
মাত্র এক সিরিজ দেখেই কেড়ে নেওয়া হয়েছে নেতৃত্ব। শাহিন শাহ আফ্রিদি এমনিতেই খুবই হতাশ। এরপর তিনি দেখলেন, তার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি), অথচ তিনি সেটির কিছুই জানেন না! সব মিলিয়ে তিনি প্রচণ্ডরকম ফুঁসে উঠেছিলেন বলেই খবর পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের। পাল্টা বিবৃতি দেওয়ার উদ্যোগও নিয়েছিলেন বাঁহাতি এই ফাস্ট বোলার।
অবস্থা বেগতিক বুঝে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনা করে তাকে আপাতত নিবৃত্ত করে পিসিবি। তার সঙ্গে সোমবার আরেক দফায় বৈঠকে বসবেন পিসিবির চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি।
পাকিস্তান দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন ঘিরে এই সঙ্কটের শুরু। গত নভেম্বরে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর তিন সংস্করণের নেতৃত্ব থেকেই পদত্যাগ করেন বাবর আজম। যদিও তার ইচ্ছা ছিল না এমন কিছুর, মূলত বোর্ডের মনোভাব বুঝেই তিনি দায়িত্ব ছাড়তে বাধ্য হন। তখন পাকিস্তানের টেস্ট অধিনায়ক করা হয় শান মাসুদকে, টি-টোয়েন্টির দায়িত্ব পান আফ্রিদি। ওয়ানডে ম্যাচ ছিল না বলে কাউকে তখন অধিনায়ক করা হয়নি, তবে সেটিও পাওয়ার কথা ছিল আফ্রিদির।
নভেম্বরেই নিউ জিল্যান্ড সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দেন আফ্রিদি। শুরুর সেই সিরিজই পরে হয়ে থাকে তার অধিনায়কত্বের শেষ সিরিজ। আফ্রিদিকে সরিয়ে রোববার আবার সাদা বলের দুই সংস্করণের নেতৃত্বে আনা হয় বাবরকে।
এই নিয় তোলপাড়ের মাঝেই রোববার আফ্রিদির একটি বিবৃতি প্রকাশ করে পিসিবি, যেখানে বাবর আজমের পাশে থাকার ঘোষণা দেন এই পেসার।
“(নেতৃত্বের) সুযোগ পাওয়া ও স্মৃতিগুলোকে আমি সবসময়ই লালন করব। দলের একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমার দায়িত্ব আমাদের অধিনায়ক বাবর আজমের পাশে থাকা। তার নেতৃত্বে আগেও খেলেছি এবং তার প্রতি আমার কেবল সম্মানই আছে। মাঠের ভেতরে বাইরে তাকে সহায়তা করার চেষ্টা করব। আমরা সবাই এক, আমাদের লক্ষ্যও একই, পাকিস্তানকে বিশ্বের সেরা দল হয়ে ওঠায় সহায়তা করা।”
চমৎকার এই বিবৃতি নিয়ে স্তুতির জোয়ারে ভেসে যান আফ্রিদি। সাবেক ক্রিকেটারদের অনেকে সামাজিক মাধ্যমে দারুণ প্রশংসা করেন তার।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, আফ্রিদি আসলে এসবের কিছুই বলেননি! তার কাছ থেকে কিছু শুনে এই বিবৃতি দেওয়া হয়নি। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের খবর, আফ্রিদির নামে পিসিবি এই বিবৃতি চালিয়ে দিয়েছে বিতর্ক থামাতে।
এতে বেজায় চটে যান আফ্রিদি। বোর্ডের বিবৃতিকে অস্বীকার করে পাল্টা একটি বিবৃতি তিনি প্রায় দিয়েই ফেলেছিলেন। বোর্ড তা জানতে পেরে তার সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে কথা বলে তাকে আপাতত থামিয়ে রাখে। এরপর বোর্ড চেয়ারম্যান সোমবার তার সঙ্গে কথা বলে আবার ব্যাখ্যা করবেন পরিস্থিতি।
ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোর খবর, নেতৃত্বের বদলটা যেভাবে হয়েছে, তাতে এমনিতেই হতাশ ও বিরক্ত আফ্রিদি। অধিনায়কত্ব নেওয়ার সময় তিনি চেয়েছিলেন লম্বা সময়ের জন্য দায়িত্ব। সেই প্রতিশ্রুতিও তিনি পেয়েছিলেন। কিন্তু হলো উল্টো। এছাড়া যেভাবে এই বদলটা এসেছে, সেটিও ভালো লাগেনি ২৩ বছর বয়সী পেসারের। তাকে কোনো কিছু ব্যাখ্যা করা হয়নি বা পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি। এরপর এই বিবৃতি-বিতর্ক আফ্রিদিকে আরও খেপিয়ে তুলেছে।
নেতৃত্বের এবারের বদল পাকিস্তান দলের ভেতরের পরিবেশকেও ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে, এমন আলোচনা হচ্ছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে। দলের সবচেয়ে বড় দুই তারকার সম্পর্ক এমনিতে এতদিন দারুণ ছিল। বাবরের নেতৃত্বের খারাপ সময়ে প্রকাশ্যেই তার পাশে থেকেছেন আফ্রিদি। কিন্তু এবারের ঘটনায় তাদের সম্পর্কের টোনাপোড়েন তৈরি হতে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে।
গত নভেম্বরে যে পরিস্থিতিতে বাবরকে নেতৃত্ব ছাড়তে হয়েছিল, তাতে এখনই আবার তার নেতৃত্ব নেওয়াটাও বিস্মিত করেছে অনেককে। তবে পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর, বেশ কিছু নিশ্চয়তা পেয়ে তবেই আবার দায়িত্বে আসতে রাজি হয়েছেন স্টাইলিশ এই ব্যাটসম্যান। জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তান ভালো করতে না পারলেও তার নেতৃত্ব হুমকিতে পড়বে না বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তাকে। এছাড়া দল নির্বাচনেও আগের চেয়ে বেশি ভূমিকার নিশ্চয়তা পেয়েছেন তিনি।
এই মাসে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে শুরু হবে বাবরের নেতৃত্বের নতুন অধ্যায়।