নতুন উচ্চতায় ওঠার স্বপ্ন বাংলাদেশের

এক ম্যাচ হাতে রেখেই কোয়ার্টার-ফাইনাল নিশ্চিত করা বাংলাদেশ বাজে সময় পেছনে ফেলার ইঙ্গিত দিয়েছিল গত বছরের শেষ দিকেই। আর চলতি বছরের শুরুতে আরও ওপরে ওঠার স্বপ্ন দেখছেন মাশরাফি বিন মুর্তজারা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2015, 07:53 AM
Updated : 16 March 2015, 02:33 PM

গত বছরের শেষ দিকে ভাবা যায়নি, অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের বিশ্বকাপে এতো দূর যাবে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে একের পর এক ম্যাচ হারা বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডের মতো বৈরী কন্ডিশনে ভালো করবে এমন ভাবাটা বেশ কঠিনই ছিল। তবে দুরূহ কাজটা সহজেই করেছেন মাশরাফিরা।

দুই সহ-আয়োজক আর শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ডের সঙ্গে একই গ্রুপে থাকায় বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনালের পথটা কঠিনই ছিল। আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের কাছে কোনোভাবেই হারা যাবে না, এই চাপও সঙ্গী ছিল তাদের। সহযোগী দেশের কাছে হারের কোনো অজুহাতই থাকত না।

নিউ জিল্যান্ডকে ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে উড়তে থাকা বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জেতার মতো অবস্থানে থেকেই ৩-০ ব্যবধানের হার দিয়ে বিপর্যের শুরু হয় বাংলাদেশের। দেশের মাটিতে এশিয়া কাপে চরমভাবে ব্যর্থ হয় আগের আসরের রানার্সআপরা। ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার কাছে হারা দলটি পেরে ওঠেনি সহযোগী দেশ আফগানিস্তানের সঙ্গেও।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ‘বাছাই পর্বে’ আফগানিস্তানকে সহজেই হারালেও হংকংয়ের কাছে আবার হারের লজ্জায় ডোবে ক্রিকেটাররা। ‘আসল’ বিশ্বকাপে কোনো জয় পায়নি তারা; হারে চার ম্যাচেই।

দেশের মাটিতে ভারতের কাছে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-০ ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয় অন্য ম্যাচটি। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তারা ওয়ানডে সিরিজ হারে ৩-০ ব্যবধানে।

এই সময়ে কী হয়নি বাংলাদেশের, কত ভাবেই না হেরেছে তারা। নিজেদের সর্বোচ্চ রান করেও জেতা হয়নি তাদের। জয় আসেনি প্রতিপক্ষকে সর্বনিম্ন রানে (বাংলাদেশের বিপক্ষে) অলআউট করেও! ব্যাটিং-বোলিং আর ফিল্ডিং তিন বিভাগ এক সঙ্গে জ্বলে উঠতে পারেনি এই সময়ে। কোনো দিন ব্যাটিং ভালো হলে বোলিং-ফিল্ডিং ডোবায় বাংলাদেশকে। আবার কখনো বোলারদের দারুণ লড়াই হতাশায় শেষ করেন ব্যাটসম্যানরা। বোলার-ব্যাটসম্যানদের ঘাম ঝরানো প্রচেষ্টা কখনো ব্যর্থ হয় সহজ ক্যাচ হাতছাড়ায়।

জেতার মতো অবস্থানে থেকেও একের পর এক হারে আত্মবিশ্বাস তলানিতে নেমে আসে বাংলাদেশের। আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে যে কোনো মূল্যে একটি জয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলেন ক্রিকেটাররা। তবে একটি নয়, টেস্ট-ওয়ানডে মিলিয়ে পরপর আটটি জয়ে বাজে সময় পেছনে ফেলেন তারা।

টানা হারের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে। ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব হারান দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। নেতৃত্বে ফেরানো হয় দেশসেরা পেসার মাশরাফিকে।

বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরুটাও এই সময়ে। জিম্বাবুয়েকে ৩-০ ব্যবধানে টেস্ট আর ৫-০ ব্যবধানে ওয়ানডেতে উড়িয়ে দিয়ে ছন্দে ফেরে বাংলাদেশ।  

১ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পঞ্চম ও শেষ ওয়ানডে খেলে চন্দিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। এরপর থেকে কঠোর পরিশ্রমে ওয়ানডের সেরা টুর্নামেন্টের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে তারা।

গত ১২ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক বিশ্বকাপ প্রস্তুতি। দেশে নয় দিন আর ব্রিসবেনে দুই সপ্তাহের অনুশীলন ক্যাম্পে নিজেদের ঝালিয়ে নেন মাশরাফিরা।

বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে টানা চার ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কাছে দুটি হার আর বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের কাছে হারা বাংলাদেশ নিজেদের ফিরে পেতে বেশি সময় নেয়নি।

বিশ্বকাপের প্রথম প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানই ছিল মাশরাফিদের জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। এশিয়া কাপের হারের কারণে ভীষণ রকম চাপে ছিল বাংলাদেশ। শতরানের সেই জয় দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করা মুশফিকদের আর পেছনে তাকাতে হয়নি।

শ্রীলঙ্কার কাছে হার বাংলাদেশকে দমাতে পারেনি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে তিনশ’ রানের লক্ষ্য করে জয় আর নিজেদের ক্রিকেটে ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় বাংলাদেশকে স্বপ্নের পরিধি আরো বিস্তৃত করার সুযোগ করে দিয়েছে।

বাজে সময় পেছনে ফেলার পথে অনেক কিছুই শিখেছেন ক্রিকেটাররা। টানা হারের পর প্রতিটি ম্যাচের আগে আর পরের সংবাদ সম্মেলনে সেই সময়ের অধিনায়ক মুশফিক কেবল ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলতেন। দেরিতে হলেও দল ঘুরে দাঁড়িয়েছে আর তাতে দারুণ অবদান এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের।

ব্যাটিংয়ে মুশফিক, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে যোগ হয়েছেন তরুণ সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমান।

পেস বোলিংয়ের নেতৃত্ব যথারীতি মাশরাফির কাঁধেই। সঙ্গে আছেন রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদ। যেকোনো ব্যাটিং লাইনআপকে পরীক্ষায় ফেলায় সামর্থ্য বাংলাদেশের বোলারদের রয়েছে।

শ্রীলঙ্কা ম্যাচ ছাড়া বাকি চার ম্যাচে ব্যাটিং-বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে ভালো সমন্বয়ই ছিল বাংলাদেশের। কোনো ম্যাচে ব্যাটসম্যানরা আবার কোনো ম্যাচে বোলাররা নেন বাড়তি দায়িত্ব। তাতেই পূরণ হয় কোয়ার্টার-ফাইনালে খেলার প্রাথমিক লক্ষ্য।

শেষ আটের লড়াইয়ে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ খুবই চেনা- ভারত। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি ক্রিকেটাররা খেলতে যাচ্ছেন আগামী বৃহস্পতিবার। মেলবোর্নে সেদিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে শেষ চারে যাওয়ার স্বপ্ন বুনছেন ক্রিকেটাররা।