ওয়ানডে ক্রিকেটের সব যেন বাংলাদেশের আত্মস্ত। প্রিয় সংস্করণে সাফল্যও ঢের। আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগে আছে শীর্ষে, প্রথম দল হিসেবে অর্জন করেছে ১০০ পয়েন্ট। কিন্তু টি-টোয়েন্টি এলেই সব গুলিয়ে যায়।
গত অক্টোবর-নভেম্বরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চরম ব্যর্থতার পরপরই পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। সেখানেও চিত্রটা হতাশারই; ঘরের মাঠে হয় হোয়াইটওয়াশড। এ বছরের শেষ দিকে মাঠে গড়াবে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ। সময় খুব বেশি নেই। ব্যর্থতার জাল ছিঁড়তে মাহমুদউল্লাহর কণ্ঠে তাই দ্রুত নিজস্ব ধরন খুঁজে নেওয়ার তাড়া।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। খেলা শুরু হবে বিকাল তিনটায়।
মুখোমুখি লড়াইয়ে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ কিছুটা এগিয়ে থাকলেও টি-টোয়েন্টিতে এগিয়ে আফগানিস্তান। ৬ ম্যাচের চারটিতেই জিতেছে তারা, দুটিতে বাংলাদেশ।
রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, মোহাম্মদ নবিরা বিশ্বজুড়ে খেলে বেড়ান টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে। ফজলহক ফারুকির মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটারেরও অভাব নেই তাদের। তবে কঠিন এই চ্যালেঞ্জ দিয়েই নিজেদের চেনানোর পালা শুরু করতে চান মাহমুদউল্লাহ।
“টি-টোয়েন্টি সংস্করণটাই এমন, প্রায় সময়ই আমি বলি, যেকোনো দিন যেকোনো দল জিতে যেতে পারে। তো আমাদের ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। আমরা কালকের ম্যাচটাতে মনোযোগ দিচ্ছি। আমাদের শুরুটাতে আমরা মনোযোগ দিচ্ছি। যদি আমরা ভালো শুরু করি, আশা করি আমরা এই ভিত কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে পারব।”
দলে সব চেনা মুখের ভীড়ে অচেনা আছেন একজন-প্রথম ডাক পাওয়া মুনিম শাহরিয়ারই আশা দেখাচ্ছেন এই বাধা উড়িয়ে দেওয়ার। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে আলো ছড়ানো তরুণ এই ওপেনার দাঁড়িয়ে অভিষেকের দুয়ারে। টি-টোয়েন্টিতে লড়াইয়ের পুঁজি পেতে মাহমুদউল্লাহ চান এই ঘরানার ভয়ডরহীন ব্যাটিং।
“স্টাইলের বিষয়টা হয়তো আমি ঠিক সেভাবে বর্ণনা করতে পারব না। আমি সবসময় পছন্দ করি ইনটেন্ট নিয়ে ব্যাটিং করা। ইতিবাচক অ্যাপ্রোচে ব্যাটিং করা। নির্ভয়ে ব্যাটিং করা। একই সঙ্গে বোলারদেরও একই ধরনের মানসিকতা থাকা প্রয়োজন। যদি আমরা শুরুতে উইকেট নিতে পারি তাহলে আমরা ম্যাচে থাকব। সব সময় ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে খেলাই আমরা প্রেফার করব। চেষ্টা করব কালকে একই অ্যাটিটিউড নিয়ে যেন আমরা খেলতে পারি।”
পাওয়ার প্লের পাশাপাশি বাংলাদেশের আরেক বড় দুর্বলতা ফিনিশিং, যাকে ভাবা হয়েছিল সমাধান সেই শামীম হোসেন কাজে লাগাতে পারেননি সুযোগ। টানা ব্যর্থতায় বাদ পড়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। আপাতত সেই দায়িত্ব পেতে পারেন ইয়াসির আলি চৌধুরি। বিপিএলে ঝড় তোলার সামর্থ্য দেখিয়েছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
ব্যাটিং অর্ডারে ঘাটতিগুলো পূরণের সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করে নিতে হবে নিজস্ব ঘরানা। স্কিল হিটিং যে পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশ এগোচ্ছিল, গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেটা কোনো কাজে আসেনি। অধিনায়ক জানালেন, নিজস্ব ঘরানা ঠিক করার আগে দরকার দলটাকে প্রস্তুত করা।
“বিশ্বকাপ এখনও অনেক দূর। ছয়-সাত মাস বাকি আছে। তবে সামনে আমাদের যে সব টি-টোয়েন্টি ম্যাচ আছে সেগুলোতে আমাদের দলটি দাঁড় করানো প্রয়োজন। আমরা কী ধরনের ক্রিকেট খেলতে চাই (সেটা ঠিক করা প্রয়োজন)। সফল হতে পারি কিংবা নাও হতে পারি, কিন্তু আমাদের ইনটেন্ট আর অ্যাটিটিউড সব সময় যেন একই থাকে সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
ব্যাট হাতে অধিনায়কের নিজেরও সময়টা ভালো কাটছে না। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৭৯ বল খেলে মারতে পারেন কেবল একটি বাউন্ডারি। স্ট্রাইক রেট পঞ্চাশের একটু বেশি। বিবর্ণ ব্যাটিংয়ের সঙ্গে ছিল ফিল্ডিংয়ে ব্যর্থতা, সীমানায় প্রায় একইভাবে ছাড়েন দুটি ক্যাচ।
টি-টোয়েন্টিতেও সময় ভালো যাচ্ছে না। গত বিশ্বকাপে প্রাথমিক রাউন্ডে পাপুয়া নিউ গিনির সঙ্গে ঝড়ো ফিফটির পর এখনও পর্যন্ত ৮ ইনিংসে ভালো কিছু করতে পারেননি। সবশেষ সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচে করেন ৬, ১২ ও ১৩। কোনো ম্যাচেই স্ট্রাইক রেট একশ ছুঁতে পারেননি।
নিজেরও ফিরতে হবে স্বরূপে, সঙ্গে দলকে ফেরাতে হবে কক্ষপথে। টানা আট ম্যাচে হেরে যাওয়া দলকে জয়ে ফেরানো কঠিন। মাহমুদউল্লাহ সেই কাজটি করতে চান প্রক্রিয়া ঠিক রেখে।
“টি-টোয়েন্টিতে আপনি র্যাঙ্কিংয়ের সেরা দলের বিপক্ষেই খেলেন আর ১০/১২ নাম্বার দলের বিপক্ষেই খেলেন, এটা কেবল একটা জুটি বা বোলিং জুটির ব্যাপার। ওয়ানডে আর টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর সময় পাওয়া যায়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সেই সময়টা মেলে না। যেটাই করতে হবে, তাৎক্ষণিকভাবে করতে হবে। কোনো দিন সাফল্য আসবে, কোনোদিন আসবে না, কিন্তু প্রক্রিয়া যদি ঠিক রাখি, বিল্ডআপ ঠিক রাখি, তাহলে ফল আমরা পরে পাব।”