ব্যাটে হাতে প্রায় একইরকম হতাশায় ঘেরা সময় কাটছিল মুশফিকুর রহিমেরও। তিনিও পেয়েছেন রানের দেখা। লিটনের মতে, কঠিন সময়কে পেছনে ফেলেছেন চট্টগ্রাম টেস্টে বড় জুটিতে তার সঙ্গী মুশফিকও।
টেস্টে বছর জুড়েই সময় ভালো কাটছে লিটনের। কিন্তু আগের ম্যাচটা তো খেলেছিলেন মাস চারেক আগে। এর মাঝে অন্য সংস্করণে ঘটে গেছে কত কিছু। দেশের মাটিতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে পাননি রান। পরে বিশ্বকাপেও ছিলেন নিদারুণ ব্যর্থ। জায়গা হারান পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে।
টি-টোয়েন্টি সিরিজে থাকলে নিশ্চিতভাবেই টেস্ট সিরিজের জন্য বেশি সময় পেতেন না লিটন। ওই সংস্করণে যেমন খেলছিলেন তাতে একটা বিরতি হয়ত দরকারও ছিল। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একটা ম্যাচ খেলেছেন। খুব ভালো করতে পারেননি, তবে অনেক দিন পর লাল বলে খেলার সুযোগ সেই ম্যাচে হয়েছে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম দিন কঠিন সময়ে নেমে দলকে পথ দেখান লিটন। দারুণ সব শটের পসরা সাজিয়ে করেন টেস্টে প্রথম সেঞ্চুরি। সেদিন দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন ব্যাটিং কোচ অ্যাশওয়েল প্রিন্স। জানা যায়নি লিটনের প্রতিক্রিয়া। শনিবার দ্বিতীয় দিনের শেষে এই কিপার-ব্যাটসম্যান জানালেন, তার সেঞ্চুরির পেছনে একটা ভূমিকা থাকতে পারে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে না থাকারও।
মুশফিকের ব্যাপারে প্রধান নির্বাচক বলেছিলেন, টেস্টে ভালো করার জন্য তাকে টি-টোয়েন্টিতে বিশ্রাম দিয়েছেন তারা। তবে অভিজ্ঞ এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান নিজে এটাকে দেখছেন বাদ হিসেবে। পণ করেছেন ভালো করে আবার টি-টোয়েন্টি দলে ফেরার।
২০ ওভারের সংস্করণে তার খেলা নিয়ে কখনও কখনও প্রশ্ন যে ওঠে না তা নয়। তবে ওয়ানডে ও টেস্ট তিনি দলে অপরিহার্য। এই দুই সংস্করণে তার নিজেকে প্রমাণের কিছু নেই। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে তিনিও কাটাচ্ছিলেন কঠিন সময়।
প্রথম দিন এই দুই ব্যাটসম্যান যখন জুটি বাঁধেন তখন ৪৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কাঁপছে বাংলাদেশ। সেখান থেকে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় দলকে টেনে তোলেন লিটন ও মুশফিক। মাঠে পাকিস্তানের বোলারদের বিপক্ষে একটা লড়াই তো ছিলই, লিটনের মতে তাদের লড়াইয়ের পরিধি ছিল আসলে আরও বড়।
“(মুশফিক) ভাইয়ার সঙ্গে জুটি তো আসলে...ছোট ছোট জুটি তো তার সঙ্গে অনেক ম্যাচেই করেছি। এই জুটি অনেক বড় ছিল।”
“নিজের কাছেও অনেক ভালো লাগে, যখন অন্য পাশে সঙ্গী অনেক সাহায্য করে, অনুপ্রাণিত করে। সব মিলিয়ে আমরা দুজনেই কঠিন পরিস্থিতিতে ছিলাম, দুজনেই তা উতরাতে পেরেছি। দুজনেই দুজনকে সহায়তা করেছি। এটাই সবচেয়ে বড় জিনিস।”
দিনের শেষ সেশনে লিটনের কাছে বারবার যেতে হচ্ছিল ফিজিওর। ক্র্যাম্প করায় খুব অস্বস্তিতে ছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। তিনি জানালেন, মুশফিক সে সময় বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন, যেভাবেই হোক উইকেটে পড়ে থাকতে হবে।
“ভাইয়া বারবার আমার কাছে আসছিল, কারণ আমার শরীরে খুব ক্র্যাম্প করছিল। তাই নতুন বল আসাতে উনি বারবার বলেছিলেন, ‘যতটুক পারা যায় উইকেটে থেকে খেলার চেষ্টা কর।’ কারণ, নতুন ব্যাটসম্যান এলে তাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।”
দাঁত কামড়ে সেই সময়টা পার করে দেন লিটন। অপরাজিত থাকেন ১১৩ রানে। শনিবার অবশ্য যেতে পারেননি বেশিদূর। বিদায় নেন স্রেফ এক রান যোগ করেই। ইনিংস আরও বড় করতে না পারার আক্ষেপ আছে লিটনের তবে দীর্ঘ অপেক্ষার পর সেঞ্চুরি পাওয়ার খুশিটাই বেশি।
“সেঞ্চুরির অনুভূতি তো সব সময় ভালো। কোনো ব্যাটসম্যান যদি সেঞ্চুরি করে এর থেকে বড় কিছু থাকে না পাওয়ার। গত দুই তিনটা খেলায় আমি কাছাকাছি গিয়েছিলাম, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচটাতেও কাছাকাছি গিয়েছিলাম (আউট হয়েছিলেন ৯৫ রানে)। কিন্তু হয়নি, এটা ক্রিকেটের অংশ। ক্রিকেটে এটা হবেই। এখন সেঞ্চুরি করেছি, নিজের কাছে ভালো লাগছে। কিন্তু এটা যদি আরেকটু বড় করতে পারতাম, তাহলে হয়ত দলের জন্য ভালো হত।”