একটি সুযোগ ও অনেক হতাশার দিন বাংলাদেশের

উইকেটে বোলারদের জন্য নেই প্রায় কিছুই। বোলারদের অস্ত্র ভাণ্ডারেও নেই এই উইকেটের জন্য কিছু। না আছে ধার, না আছে ব্যাটসম্যানদের ভড়কে দেওয়ার বৈচিত্র। সবকিছুর যোগফল, হতাশার পর হতাশা। প্রথম সেশনে মুখ থুবড়ে পড়ল বাংলাদেশের ব্যাটিং। পরের দুই সেশনে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারলেন না বোলাররা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2021, 12:41 PM
Updated : 27 Nov 2021, 04:15 PM

চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশের লড়াই উধাও হয়ে গেল দ্বিতীয় দিনে। ব্যাটে-বলে দারুণ পারফরম্যান্সে ম্যাচের লাগাম নিয়ে নিল পাকিস্তান।

জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে শনিবার বাংলাদেশকে প্রথম ইনিংসে ৩৩০ রান আটকে রেখে পাকিস্তান দিন শেষ করে কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৪৫ রান নিয়ে।

আলোকস্বল্পতায় দিনের খেলা শেষ হয় ৬ ওভার আগে। নাহলে হয়তো এ দিনই সেঞ্চুরি হয়ে যেত আবিদ আলির। দিনশেষে তিনি অপরাজিত ৯৩ রানে। অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমে আব্দুল্লাহ শফিক দিন শেষ করেন ৫২ রানে।

এই জুটি ভাঙার একটি সুযোগ বাংলাদেশ পেয়েছিল ত্রয়োদশ ওভারে। তাইজুল ইসলামের বল লেগেছিল শফিকের প্যাডে। তবে বল আগে ব্যাটে লেগেছিল নাকি প্যাডে, এই দ্বিধায় রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশ। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল আগে লাগে প্যাডেই এবং আউট ছিলেন শফিক।

এটি ছাড়া আর কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানদের বিপাকে ফেলার পরিস্থিতিও হয়নি খুব একটা।

বাংলাদেশের হতাশার শুরু দিনের দ্বিতীয় ওভার থেকেই। ১১৩ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামা লিটন আউট হয়ে যান আর কেবল এক রান যোগ করেই। ৮২ রানে দিন শুরু করে মুশফিকুর রহিম আউট হন ৯১ রানে। হাসান আলির দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে মেহেদী হাসান মিরাজ (৩৮*) ছাড়া লড়তে পারেননি আর কেউ।

আগের দিনের সঙ্গে ৭৭ রান করেই বাংলাদেশ হারায় শেষ ৬ উইকেট। হাসান আলি নেন ৫১ রানে ৫ উইকেট। এ বছর ৭ টেস্টে তার পঞ্চম ৫ উইকেট এটি।

বোলারদের পারফরম্যান্সে উজ্জীবিত দুই ওপেনার এরপর টানা দুই সেশন কাটিয়ে দেন নির্বিঘ্নে। কোনো অস্বস্তিই দেখা যায়নি তাদের ব্যাটিংয়ে। বাংলাদেশের কোনো বোলারই পারেনি তাদেরকে ভোগাতে।

আবু জায়েদ চৌধুরি শুরুর দিকে খানিকটা সুইং আদায় করতে পারলেও বিপজ্জনক হতে পারেননি। বল পুরনো হওয়ার পর আরও কমে যায় তার ধার। ইবাদত হোসেন চৌধুরি পারেননি বিন্দুমাত্র প্রভাব রাখতেও। তার এটি নবম টেস্ট চলছে, বোলিং গড় দাঁড়িয়েছে ৯৫.৩৮!

বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম শুরুতে একটু নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন। উইকেট থেকে কিছুটা টার্ন ও বাউন্সও আদায় করে নেন তিনি। কিন্তু ওই রিভিউ না নেওয়া ছাড়া আর কোনো সুযোগ গড়তে পারেননি তিনিও। মেহেদী হাসান মিরাজও ছিলেন একদম নির্বিষ।

দুই ওপেনারের রান সংখ্যা দেখেই তাদের ব্যাটিংয়ের ধারণা পাওয়া যায়। আবিদ আলি শুরু থেকেই ছিলেন সাবলীল। শফিক আঁকড়ে রাখেন উইকেট। ৮৪ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন আবিদ, ১৫৩ বলে শফিক।

ক্যারিয়ারের প্রথম দুই টেস্টেই সেঞ্চুরি করা আবিদ গত মে মাসে পেয়েছেন ডাবল সেঞ্চুরিও। অপেক্ষায় এখন তিনি চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরির।

২২ বছর বয়সী শফিকের টেস্ট অভিষেক হয়েছে কেবল তিনটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেই। প্রথমটি তিনি খেলেছিলেন সেই ২০১৯ সালে, অভিষেকেই করেছিলেন সেঞ্চুরি। গত বছর আবার পাকিস্তান ক্রিকেটে আলোচনায় উঠে আসেন তিনি অভিষেক টি-টোয়েন্টিতে ৫৮ বলে সেঞ্চুরি করে। এর পর এই মাসেই পাকিস্তান শাহিনসের (‘এ’ দল) হয়ে শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন আনঅফিসিয়াল টেস্টে। এবার টেস্ট অভিষেকেও ফিফটি পেরিয়ে তার দৃষ্টি সেঞ্চুরিতে।

এই মাঠের উইকেট বরাবরই দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে থাকে ব্যাটিংয়ের জন্য দারুণ। উইকেটে থিতু হওয়া দুই ব্যাটসম্যান। বোলারদের নাটকীয় কোনো বদল না এলে তৃতীয় দিনেও বাংলাদেশের অপেক্ষায় কঠিন সময়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১১৪.৪ ওভারে ৩৩০ (আগের দিন ২৫৩/৪) (মুশফিক ৯১, লিটন ১১৪, ইয়াসির ৪, মিরাজ ৩৮*, তাইজুল ১১, আবু জায়েদ ৮, ইবাদত ০; আফ্রিদি ২৭-৮-৭০-২, হাসান ২০.৪-৫-৫১-৫, ফাহিম ১৪-২-৫৪-২, সাজিদ ২৭-৫-৭৯-১, নুমান ২৬-৬-৬২-০)।

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৫৭ ওভারে ১৪৫/০ (আবিদ ৯৩*, শফিক ৫২*; আবু জায়েদ ১০-০-৩০-০, ইবাদত ১২-৩-৩১-০, তাইজুল ১৫-৫-৩৯-০, মিরাজ ১৩-৩-৩৩-০, মুমিনুল ৩-০-১২-০)।