হতশ্রী ব্যাটিংয়ে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ

চার দিনের মধ্যে গ্যালারিতে এ দিনই দর্শক সবচেয়ে বেশি। এক-দুই রানেও সে কী চিৎকার! কিন্তু রেজিস চাকাভার হাতে যখন জমল আরিফুল হকের ক্যাচ, গ্যালারিতে তখন যেন কবরের নিস্তব্ধতা। নীরবতা বিদীর্ণ করছিল মাঠে জিম্বাবুয়ের ফিল্ডারদের উল্লাসধ্বনি। পরম আরাধ্য এক জয়ে তারা ভাসছিলেন হাওয়ায়। আর বাংলাদেশ? আশার আবাহনে শুরু দিন যখন ডুবে গেল হতাশার তিমিরে, স্টেডিয়ামের ঘড়িতে তখন সময় কেবল দুপুর পৌনে দুইটা!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Nov 2018, 09:33 AM
Updated : 6 Nov 2018, 03:34 PM

সিলেটের টেস্ট অভিষেকে বাংলাদেশ খেলতে পারল না চার দিনও। পাত্তাই পেল না জিম্বাবুয়ের কাছে। রানের ব্যবধানে হার ১৫১ রানের। তবে লড়াইয়ের মানসিকতায় হারের ব্যবধান আরও অনেক বেশি। টেস্ট ক্রিকেটে দেড় যুগের পথচলায় এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বিব্রতকর পরাজয়গুলোর একটি।

শেষ ইনিংসে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৩২১, শেষ দুই দিনে ২৯৫। বাংলাদেশ করতে পেরেছে কেবল ১৬৯। টেস্টে দুইশর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার বিষাদযাত্রা দীর্ঘায়িত হলো টানা অষ্টম ইনিংসে।

জিম্বাবুয়ের জন্য এই জয় বয়ে এনেছে দীর্ঘ খরার পর মুষলধারে বৃষ্টির আনন্দ। মাসের পর মাস বেতন পান না ক্রিকেটাররা, কোচিং স্টাফ বদলায় প্রতিনিয়ত। মাঠের বাইরে হাজার সমস্যায় জর্জরিত তাদের ক্রিকেট। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও অভাবনীয় জয়ে গেয়ে উঠল তারা সামর্থ্যের জয়গান।

২০১৩ সালে পাকিস্তানকে হারানোর পর প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পেল তারা। দেশের বাইরে এটি মাত্র তৃতীয় টেস্ট জয়, ২০০১ সালের পর প্রথম। সেবার তারা জিতেছিল বাংলাদেশের বিপক্ষেই, চট্টগ্রামে।

অথচ দিনের শুরুটা বাংলাদেশের আশার স্রোতকে তীব্র করেছিল আরও। মেঘলা আকাশের নিচে যখন শুরু হয়েছিল খেলা, প্রথম ঘণ্টা নিয়েই ছিল মূল শঙ্কা। ইমরুল কায়েস ও লিটন দাস খুব আস্থায় খেলতে পারেননি। জীবন পেয়েছেন দুজনই, ব্যাটের কানায় লেগেছে বল বারবার। তার পরও টিকে গেছেন। সময় কাটিয়েছেন। জুটি ছাড়িয়ে গেছে ফিফটি। বাংলাদেশ পেয়ে গেছে ভিত্তি।

কিন্তু এরপরই ফিরে এলো প্রথম ইনিংসের ভূত। আবারও দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী। একের পর এক আত্মঘাতী শটে নিজেদের কবর খোড়ার আয়োজন। উইকেট ছুঁড়ে আসার মহড়া।

২১ রানে জীবন পেয়ে লিটন ফিরলেন ২৩ রানে। সিকান্দার রাজার শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড়। ৫৬ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙল। উইকেটের দুয়ার খুলে গেল।

দারুণ দুটি চারের পর মুমিনুল হক আউট হলেন কাইল জার্ভিসের বল স্টাম্পে টেনে এনে। রাজার বোলিংয়েও ততক্ষণে যেন মুত্তিয়া মুরালিধরন, সাকলায়েন মুশতাকের মতো অফ স্পিনারের প্রতিচ্ছবি দেখতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। তার শিকার পরে আরও দুইজন!

২২ রানে জীবন পেলেন ইমরুল, লড়াই করলেন অনেকক্ষণ। কিন্তু ৪৩ রানে ঠিকই রাজাকে উইকেট উপহার দিলেন। সুইপ করতে গিয়ে পায়ের পেছন দিয়ে বোল্ড।

টেস্টে বাজে ফর্মে থাকা মাহমুদউল্লাহ নিজেকে চারে তুলে এনে দিতে চেয়েছিলেন ইতিবাচক বার্তা। একটু পরই বোঝালেন সেই বার্তা ছিল ভুল। রাজাকেই দিয়ে এলেন উইকেট।

জিম্বাবুয়েরে মূল দুই স্পিনার ব্র্যান্ড মাভুটা ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজা তখনও বলই হাতে পাননি। যখন তারা ডাক পেলেন, বাংলাদেশের পরাজয় ঘনিয়ে এলো আরও। নাজমুল হোসেন শান্ত আবারও সুযোগের অপচয় করলেন মাভুটার বলে বাজে শটে। এই লেগ স্পিনারের বলেই মুশফিক আউট হলেন আরও একবার প্রিয় সুইপ খেলে।

রেকর্ড রান তাড়ায় যদি এভাবে উইকেট উপহার দেয় প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানই, দলের তখন মান বাঁচানোই হয় দায়। প্রথম ইনিংসের মতোই লড়াইয়ের চেষ্টা ছিল কেবল আরিফুল হকের ব্যাটে। আরেক প্রান্তে সঙ্গীদের হারিয়ে খেললেন কিছু শট। ৪টি চার ও ২ ছক্কায় করলেন ৩৮। গ্যালারির দর্শকেরা পেল খানিকটা বিনোদন।

ম্যাচের বাস্তবতা তাতে খুব পাল্টাল না। পরাজয় বিশাল ব্যবধানেই। ব্যাটিংয়ের ধরন আর মানসিকতায় যখন টেস্ট ক্রিকেটের ভাষাই থাকে উপেক্ষিত, পরিস্থিতির দাবিকে দেখানো হয় বুড়ো আঙুল, তখন সেসব কেবল পরাজয়কেই আলিঙ্গন করে সাদরে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২৮২

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৪৩

জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস: ১৮১

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩২১) ৬৩.১ ওভারে ১৬৯ (আগের দিন ২৬/০)(লিটন ২৩, ইমরুল ৪৩, মুমিনুল ৯, মাহমুদউল্লাহ ১৬, শান্ত ১৩, মুশফিক ১৩, আরিফুল ৩৮, মিরাজ ৭, তাইজুল ০, অপু ০, আবু জায়েদ ০*; জার্ভিস ১৪-৫-২৯-১, চাটারা ৯-২-২৫-০, রাজা ১৭-১-৪১-৩, উইলিয়ামস ৮-২-১৩-০, মাভুটা ১০-২-২১-৪, ওয়েলিংটন ৫.১-০-৩৩-২)।

ফল: জিম্বাবুয়ে ১৫১ রানে জয়ী

সিরিজ: ২ ম্যাচ সিরিজে জিম্বাবুয়ে ১-০তে এগিয়ে

ম্যান অব দা ম্যাচ: শন উইলিয়ামস