জ্যামাইকা টেস্টে বাংলাদেশকে ১৬৬ রানে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই ম্যাচের সিরিজ জিতে নিয়েছে ২-০তে। অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছিল দুই দিন ও এক সেশনে।
বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করে ক্যারিবিয়ানরা নিশ্চিত করেছে টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের আটে ওঠা। বাংলাদেশ নেমে যাচ্ছে নয়ে।
বাংলাদেশের হয়ে এদিন লড়লেন কেবল সাকিব আল হাসান। বল হাতে রেকর্ড গড়া পারফরম্যান্সের পর ব্যাটিংয়েও লড়িয়ে ফিফটি। কিন্তু বিবর্ণ দলের বাকিরা। প্রতিপক্ষ অধিনায়কের বোলিংয়ের কোনো জবাব পায়নি বাংলাদেশ।
অথচ দিনের প্রথম ভাগ ছিল বাংলাদেশেরই। ১ উইকেটে ১৯ রান নিয়ে দিন শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে যায় ১২৯ রানে। ৩৩ রানে ৬ উইকেট নিয়ে বিদেশের মাঠে বাংলাদেশের সেরা বোলিংয়ের কীর্তি গড়েন সাকিব।
ব্যাটিংয়ে যথারীতি ফিরে আসে দু:স্বপ্ন। হতাশার প্রহরে হারিয়ে যায় ভালো বোলিংয়ের স্বস্তি।
ব্যর্থতার শুরু দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালকে দিয়েই। প্রথম ইনিংসে শেষ দুই বলে উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের অপেক্ষায় ছিলেন জেসন হোল্ডার। তামিম তাকে হ্যাটট্রিক বঞ্চিত করেছেন। কিন্তু উইকেট বঞ্চিত রাখতে পারেননি।
রাউন্ড দা উইকেটে করা হোল্ডারের ডেলিভারি কাট করে ভেতরে ঢুকে লাগে প্যাডে। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তামিম। টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টমবার আউট হয়েছেন শূন্য রানে।
আরেক পাশে লিটন দাস শুরুতে ছিলেন নড়বড়ে। হঠাৎ করেই আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। হোল্ডারের এক ওভারে মারেন চারটি চার। ক্যারিবিয়ান অধিনায়কের পরের ওভারেই শর্ট বলে চার মারেন ফ্রন্ট ফুট পুলে।
নড়বড়ে শুরুর পর ততক্ষণে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন মুমিনুল। সিরিজে আগের ৩ ইনিংসে ১ রান করা ব্যাটসম্যান মারলেন দারুণ তিনটি বাউন্ডারি। কিন্তু কলি থেকে ফুল হয়ে ফুটল না তার ইনিংসও। অফ স্পিনার রোস্টন চেইসের সোজা বলে এলবিডব্লিউ ১৫ রানেই।
মাহমুদউল্লাহ যেভাবে আউট হলেন, পরিস্থিতির বিবেচনায় সেটি অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। চেইসের অফ স্পিনে এমন কোনো বিষ ছিল না। তার পরও কী মনে করে যেন, পরপর দুই বল অফ স্টাম্পের বাইরে শাফল করে খেললেন মাহমুদউল্লাহ। পরের বলে বেরিয়ে এসে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন শর্ট মিড উইকেটে।
টেস্ট দলে মাহমুদউল্লাহর জায়গা নিয়ে প্রশ্নগুলোকেই আরও উচ্চকিত করবে এই শট ও এই সিরিজে তার পারফরম্যান্স।
মুশফিক প্রথম দুই বলেই অল্পের জন্য আউট হননি। তবে সামলে নেন শুরুর ধাক্কা। জুটি গড়ে তোলেন সাকিবের সঙ্গে। ঝুঁকি পূর্ণ শট যদিও কিছু খেলেছেন, পাশাপাশি খেলেছেন কয়েকটি ভালো শটও।
পঞ্চম উইকেটে ৫৪ রানের জুটি ভেঙেছে চেনা পথে মুশফিকের বিদায়ে। হোল্ডারের ভেতরে ঢোকা বলে আবারও বোল্ড হলেন ব্যাট-প্যাডের মধ্যে বিশাল ফাঁক দিয়ে।
পুনরাবৃত্তির পালা চলল এরপরও। ঠিক প্রথম ইনিংসের মতোই ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে প্রথম বলেই এলবিডব্লিউ নুরুল হাসান সোহান। দুই ইনিংসেই প্রথম বলে আউট, ক্রিকেটের পরিভাষায় ‘কিং পেয়ার।’
এক ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তিনটি স্টাম্পিং করে এদিন রেকর্ড বইয়ে ঢুকেছিলেন সোহান। একই দিনে নাম লেখালেন অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডেও। বাংলাদেশের হয়ে ‘কিং পেয়ার’ পেয়েছিলেন আগে কেবল একজন। ২০০৭ সালে ভারতের বিপক্ষে ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিম।
সাকিব লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। চেইসকে বাউন্ডারি মেরে ক্যারিয়ারের ২৩তম ফিফটি স্পর্শ করেন ৭৯ বলে।
তার প্রতিরোধ শেষ হয় দুর্দান্ত এক গোলায়, যেটি বের হয়েছে প্রতিপক্ষ অধিনায়কের হাত থেকে। রাউন্ড দা উইকেটে করা ডেলিভারি অ্যাঙ্গেলের পাশাপাশি একটু রির্ভাস সুইং করেও ভেতরে ঢোকে অনেকটুকু। ছোবল দেয় সাকিবের লেগ স্টাম্পে।
শেষ দুটি উইকেটও দ্রুতই নিয়েছেন হোল্ডার। বাংলাদেশের সান্ত্বনা, টানা ৫ ইনিংস পর অবশেষে পার হতে পেরেছে দেড়শ রান! ব্যাটিং দুর্দশার যেটি বড় দলিল।
গোটা সিরিজে সম্ভাব্য ৩০ সেশনের মাত্র ১৬ সেশন খেলা হয়েছে। বাংলাদেশের হয়তো একটা স্বস্তি, বিভীষিকার টেস্ট সিরিজ শেষ তো হলো!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৩৫৪
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৪৯
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: ১২৯
বাংলাদেশ: (লক্ষ্য ৩৩৫) ৪২ ওভারে ১৬৮ (তামিম ০, লিটন ৩৩, মুমিনুল ১৫, সাকিব ৫৪, মাহমুদউল্লাহ ৪, মুশফিক ৩১, সোহান ০, মিরাজ ১০, তাইজুল ১৩*, কামরুল ০, আবু জায়েদ ০; হোল্ডার ৬/৫৯, গ্যাব্রিয়েল ১/২৯, পল ১/৩৪, কামিন্স ০/২০, চেইস ২/১৪)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬৬ রানে জয়ী
সিরিজ: ২ ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-০তে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: জেসন হোল্ডার
ম্যান অব দা সিরিজ: জেসন হোল্ডার