দক্ষিণ আফ্রিকায় সেই পুরানো বাংলাদেশ

দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে ব্যাটিং যেন ভুলে গেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। কোথায় লেগ স্টাম্প, কোথায় অফ স্টাম্প যেন মনেই নেই তাদের। কোন বল ছাড়তে হবে, কোনটা খেলতে হবে সেই বোধও বোধহয় গুলিয়ে গেছে। দিতে হয়েছে তার মাশুল, পেতে হয়েছে প্রথম টেস্টের চেয়েও বড় হারের তেতো স্বাদ।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতব্লুমফন্টেইন থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2017, 12:48 PM
Updated : 8 Oct 2017, 04:06 PM

দক্ষিণ আফ্রিকার এবারের সফরে দেখা গেছে যেন পুরানো সেই বাংলাদেশকে। ভুলে যাওয়ার মতো এই সিরিজে বাকি ছিল একটাই- ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়। সেই অভিজ্ঞতা হল দ্বিতীয় টেস্টে। কাগিসো রাবাদার দারুণ বোলিংয়ে মুশফিকুর রহিমের দল হেরেছে ইনিংস ও ২৫৪ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে পরাজয়।

তৃতীয় দিন দুই সেশনও টিকেনি বাংলাদেশের ইনিংস। অধৈর্য ব্যাটসম্যানদের ১০ উইকেট তুলে নিতে স্বাগতিকদের লেগেছে ৪২.৪ ওভার। প্রথম ইনিংসে ১৪৭ রানে গুঁড়িয়ে যাওয়া অতিথিরা দ্বিতীয় ইনিংসে করেছে ১৭২ রান।  

ম্যানগাউং ওভালে বিনা উইকেটে ৭ রান নিয়ে রোববারের খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। ইনিংস পরাজয় এড়াতে দরকার ছিল আরও ৪১৯ রান। তার ধারে কাছেও যাওয়া যায়নি।

শুরুতেই ফিরেন সৌম্য সরকার। ২ রানে জীবন পাওয়া বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে উইকেট উৎসব শুরু করেন রাবাদা। সৌম্যকে বিদায় করে চলতি বছরে প্রথম বোলার হিসেবে নেন ৫০ উইকেট।

শুরু থেকে রানের জন্য ছটফট করা মুমিনুল হক পা দেন পাতা ফাঁদে। শর্ট বলে ধরা পড়েন ডিপ স্কয়ার লেগের ফিল্ডার কেশভ মহারাজের হাতে। তাকে খুব একটা নড়তে হয়নি ক্যাচ নিতে।

শূন্য রানেই ফিরতে পারতেন মুশফিক। বেঁচে যান ফিল্ডারের থ্রো স্টাম্পে না লাগায়। ১১ রানে ডুয়ানে অলিভিয়েরের বাউন্সার হেলমেটে আঘাত হানার পর লুটিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর উঠে দাঁড়িয়ে নতুন হেলমেট নিয়ে ব্যাটিং শুরু করেন। কিন্তু দলকে টেনে তুলতে পারেননি।

ওয়েইন পার্নেলের বল ছেড়ে দিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে শেষ হয় মুশফিকের প্রতিরোধ। প্রথম ইনিংসের সেরা ব্যাটসম্যান লিটন দাসের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর জুটিতে ছিল লড়াইয়ের আভাস। সহজেই দক্ষিণ আফ্রিকার আক্রমণ সামলাচ্ছিলেন দুই জনে।

জমে উঠা জুটি ভাঙে লিটনের বিদায়ে। আন্দিলে ফেলুকওয়ায়োর বল ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হন তিনি। এর আগে প্রথম টেস্টে দ্বিতীয় টেস্টে এলবিডব্লিউ হয়েছিলেন বল ছেড়ে দিয়ে।

লিটনের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকেননি মাহমুদউল্লাহ। ৭টি চার আর একটি ছক্কায় ৪৩ রান করা ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে নিজের শততম উইকেট নেন রাবাদা।

শেষ বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান ফিরেন ফেলুকওয়ায়োর বলে ফাফ দু প্লেসির দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত হয়ে। তাইজুল ইসলাম ও রুবেল হোসেনকে ফিরিয়ে ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট নেন রাবাদা। টেস্টে এনিয়ে তৃতীয়বার পেলেন ১০ উইকেট।

শেষটায় একটু বিরক্ত করেছে দশম উইকেট জুটি। মুস্তাফিজুর রহমানকে বোল্ড করে তার ইতি টানেন ফেলুকওয়ায়ো। এই অলরাউন্ডার ৩ উইকেট নেন ৩৬ রানে।

প্রথম ইনিংসে ৩৩ রানে ৫ উইকেট নেওয়া রাবাদা এবার ৫ উইকেট নেন ৩০ রানে। ৬৬ রানে ১০ উইকেট। দারুণ বোলিংয়ের জন্য জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। একের পর এক বাউন্সারে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দেওয়া অলিভিয়ের ৩৯ রানে নেন ১ উইকেট। সিরিজে দুটি সেঞ্চুরি করা ডিন এলগার জেতেন সিরিজ সেরার পুরস্কার।

প্রথম টেস্টের চেয়ে আরও বাজে খেলে হারল বাংলাদেশ। এমন হার নাড়িয়ে দেয় আত্মবিশ্বাস। সেখান থেকে টেনে তুলতে আগামী কয়েকদিন প্রাণবন্ত খাটতে হবে ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৫৭৩/৪ ডি.

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৪৭

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ১৭২ (ইমরুল ৩২, সৌম্য ৩, মুমিনুল ১১, মুশফিক ২৬, মাহমুদউল্লাহ ৪৩, লিটন ১৮, সাব্বির ৪, তাইজুল ২, রুবেল ৭, শুভাশিস ১২, মুস্তাফিজ ৭; রাবাদা ৫/৩০, অলিভিয়ের ১/৩৯, মহারাজ ০/৩০, পার্নেল ১/৩১, ফেলুকওয়ায়ো ৩/৩৬)

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস ও ৫৪ রানে জয়ী

সিরিজ: দক্ষিণ আফ্রিকা ২-০ ব্যবধানে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কাগিসো রাবাদা

ম্যান অব দ্য সিরিজ: ডিন এলগার