অনেক আলোচনা ও প্রবল কৌতূহল জাগিয়ে অবশেষে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলে জায়গা পেলেন ন্যাথান ম্যাকসুয়েনি।
Published : 10 Nov 2024, 01:10 PM
বেশ কিছুদিন ধরে তুমুল আলোচনা, অনেকের অনেক কৌতূহলের পর অবশেষে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্নটির উত্তর জানা গেছে। অস্ট্রেলিয়ার নতুন টেস্ট ওপেনারের নাম ন্যাথান ম্যাকসুয়েনি। ভারতের বিপক্ষে ২২ নভেম্বর শুরু পার্থ টেস্টে উসমান খাওয়াজার সঙ্গে ইনিংস শুরু করবেন ২৫ বছর বয়সী ডানহাতি এই ওপেনার।
বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির প্রথম টেস্টের অস্ট্রেলিয়া স্কোয়াডে ছোটখাটো একটা চমকও আছে। ১৩ সদস্যের দলে ডাক পেয়েছেন জশ ইংলিস। মূলত রিজার্ভ ব্যাটসম্যান হিসেবে রাখা হয়েছে ২৯ বছর বয়সী কিপার-ব্যাটসম্যানকে।
তবে পাদপ্রদীপের আলো আপাতত ম্যাকসুয়েনিকে ঘিরে। ডেভিড ওয়ার্নারের অবসরের পর ওপেনিংয়ে উঠে এসেছিলেন স্টিভেন স্মিথ। কিন্তু সেই পরীক্ষা চার টেস্টেই শেষ, এই মৌসুমে আবার চার নম্বরে ফিরছেন তিনি। নতুন ওপেনার বাছাইয়ের প্রকল্প শুরু হয় তখন থেকেই।
কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা মার্কাস হ্যারিস, ঘরোয়া ক্রিকেটে গত দুই মৌসুমে রানের জোয়ার বইয়ে দেওয়া ক্যামেরন ব্যানক্রফট ছিলেন প্রবল দাবি নিয়ে। গত মাসে শেফিল্ড শিল্ডে এক ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরির পর লড়াইয়ে চলে আসেন তরুণ স্যাম কনস্টাস। তবে গত কয়েক দিনে ম্যাকসুয়েনি বেশ আলোচনায় চলে আসেন।
সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং কদিন আগে জানান, অস্ট্রেলিয়ার নতুন ওপেনার হিসেবে ম্যাকসুয়েনিকেই তার পছন্দ। মূলত যার উত্তরসূরী হচ্ছেন এই ওপেনার, সেই ডেভিড ওয়ার্নারও কদিন আগে তার পক্ষে রায় দিয়ে বলেছেন, তাকে ‘কমপ্লিট’ ব্যাটসম্যান মনে হচ্ছে তার।
ম্যাকসুয়েনির প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার এমনিতে খুব সমৃদ্ধ নয়। ৩৪ ম্যাচে ৬ সেঞ্চুরিতে ২ হাজার ২৫২ রান করেছেন তিনি ৩৮.১৬ গড়ে। তবে গত দুই মৌসুমে তার গড় ৪৩.৪৪। ৬টি সেঞ্চুরিই করেছেন এই সময়ে।
শুধু পরিসংখ্যানই নয়, অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকরা বিবেচনায় নিয়েছেন কেমন কন্ডিশন-উইকেট, কতটা শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে কে কেমন রান করেছেন। গত মৌসুমে নিউ সাউথ ওয়েলস ও কুইন্সল্যান্ডের দুর্দান্ত পেস আক্রমণের সামনে সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। হোবার্টে ভয়ঙ্কর এক উইকেটের স্ট্রোকের ছটায় ১১৭ রানের ইনিংস খেলেছেন। গত মাসে নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে সিডনিতে ৫৫ ও অপরাজিত ১২৭ রানের ইনিংস খেলেছেন, যে ম্যাচে আট উইকেট নিয়েছেন ন্যাথান লায়ন।
তার পরও সংশয় কিছুটা থাকলে তা দূর করে দেন তিনি সপ্তাহখানেক আগে। ভারতীয় ‘এ’ দলের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে আনঅফিসিয়াল টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৩৯ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেন ম্যাচ জেতানো ৮৮ রানের ইনিংস।
এছাড়া তার অফ স্পিনের হাতও খারাপ নয়। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য এক নেতাও লুকিয়ে আছে তার মাঝে। সাউথ অস্ট্রেলিয়াকে তো নেতৃত্ব দিচ্ছেনই, অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের অধিনায়কত্বও করেছেন।
তার পক্ষে গেছে বয়সও। ১৪ টেস্ট খেলা হ্যারিসের বয়স ৩২ পেরিয়ে গেছে, ১০ টেস্ট খেলা ব্যানক্রফটের ৩২ হবে কদিন পরই। কনস্টাসের বয়স আবার মাত্র ১৯। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে যদিও এসব বড় ব্যাপার নয়, তবে ম্যাকসুয়েনির ২৫ বছর বয়সকে প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলি বলেছেন ‘সুপার।’
তাকে নিয়ে বড় একটা প্রশ্নের জায়গা অবশ্য তবু আছেই। ওপেনার হিসেবে নেওয়া হলেও তিনি ওপেনার নন। আগে মিডল অর্ডারে খেলতেন। কিছুদিন হলো সাউথ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিন নম্বরে খেলতে শুরু করেছেন। ভারতীয় ‘এ’ দলের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটিতেও ব্যাট করেছেন চারে। শেফিল্ড শিল্ডে কখনও ওপেন করেননি তিনি।
প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে ওপেন করার একমাত্র অভিজ্ঞতা হলো তার মাত্রই ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে দ্বিতীয় আনঅফিসিয়াল টেস্টে। সেই ম্যাচে দুই ইনিংসেই ব্যর্থ হন তিনি। জায়গার লড়াইয়ে থাকা মার্কাস হ্যারিস সেখানে প্রথম ইনিংসে করেন ৭৪।
ওপেনার না হলেও ম্যাকসুয়েনিকে ওপেনিংয়ের জন্য বেছে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন নির্বাচক বেইলি।
“তিন নম্বর থেকে ওপেনিংয়ে উঠে আসাটা খুব বড় পরিবর্তন নয়। সাউথ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে যে ১৫টির মতো ম্যাচে সে তিন নম্বরে খেলেছে, এর মধ্যে ২০ বারই সম্ভবত ১০ ওভারের মধ্যে ক্রিজে যেতে হয়েছে তাকে। অনেক অভিজ্ঞতা তার আছে। তার খেলার যে ধরন এবং যেভাবে সে খেলে, আমার মনে হয় না খুব বেশি মানিয়ে নিতে হবে তাকে (ওপেনিংয়ে)।”
ম্যাকসুয়েনি নিজেও ব্যাপারটিকে একইভাবে দেখেন।
“স্রেফ একটি পজিশন ওপরে খেলতে নামা ছাড়া বাকি সবকিছুই একইরকম, আমার প্রস্তুতিও। তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ের জন্য আমাকে নতুন বল খেলাই অনুশীলন করতে হয়। তিনে খেললেও অনেক সময় প্রথম ওভারে ক্রিজে যেতে হয়।”
তবে হ্যারিস ও ব্যানক্রফট নিজেদের দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন। ঘরোয়া ক্রিকেটের ধারাবাহিক পারফর্মার ছিলেন দুজনই। গত কয়েক মৌসুম ব্যানক্রফট ছিলেন তো অসাধারণ। কিন্তু চলতি মৌসুমের শুরুটা ভয়ঙ্কর বাজে হয়েছে তার। আট ইনিংসে মোট রান করেছেন ২৯, চারবার আউট হয়েছেন শূন্যতে। হ্যারিস মৌসুম শুরু করেছেন একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ফিফটি দিয়ে। আপাতত বাস্তবতা মেনে নিতে হচ্ছে তাদের।
টেস্ট দলে ডাক পাওয়া ইংলিস এখন সীমিত ওভারে অস্ট্রেলিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। নিয়মিত কয়েকজনের অনুপস্থিতিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়াকে, টি-টোয়েন্টি সিরিজে নেতৃত্বও দেবেন তিনি। তবে লাল বলের ক্রিকেটেও তার পারফরম্যান্স ভালো।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩ হাজারের বেশি রান করেছেন। চলতি মৌসুমে শেফিল্ড শিল্ডে দুটি ম্যাচ খেলে সেঞ্চুরি করেছেন দুটিতেই। সেটিরই পুরস্কার পেলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডারে অবশ্য জায়গা ফাঁকা নেই। আপাতত তাই একাদশের বাইরেই থাকতে হবে তাকে।
মূল তিন পেসার প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, জশ হেইজেলউডের সঙ্গে বাড়তি পেসার হিসেবে অনুমিতভাবেই আছেন স্কট বোল্যান্ড।
ভারতের বিপক্ষে এই টেস্ট সিরিজের প্রস্তুতির জন্য পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলবেন না কামিন্স, স্টার্ক, হেইজেলউড, হেড, মার্শরা।
অস্ট্রেলিয়া দল: প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), উসমান খাওয়াজা, ন্যাথান ম্যাকসুয়েনি, মার্নাস লাবুশেন, স্টিভেন স্মিথ, ট্রাভিস হেড, মিচেল মার্শ, অ্যালেক্স কেয়ারি, ন্যাথান লায়ন, মিচেল স্টার্ক, জশ হেইজেলউড, জশ ইংলিস, স্কট বোল্যান্ড।