‘আই গট ইমোশনাল’, সেই কথার ঝড় নিয়ে বললেন মাহমুদউল্লাহ

এমনিতে অন্তর্মুখী হিসেবেই পরিচিতি মাহমুদউল্লাহর। মাঠের ভেতরে-বাইরে আবেগের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় কমই। সেই তিনিই পাপুয়া নিউ গিনিকে হারানোর পর সংবাদ সম্মেলনে বইয়ে দেন কথার ঝড়। তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয় তুমুল। সময়ের সঙ্গে ভিন্ন উপলব্ধি হয় মাহমুদউল্লাহর নিজেরও। হতাশায় মোড়ানো বিশ্বকাপ অভিযান শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, সেদিনের সেই ক্ষোভের উত্তাল ঢেউয়ের পেছনে ছিল আবেগের স্রোত।

ক্রীড়া প্রতিবেদকদুবাই থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2021, 04:10 PM
Updated : 4 Nov 2021, 08:11 PM

প্রাথমিক পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন মাহমুদউল্লাহ, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমরা। এই তিন জনের প্রকাশ্য সমালোচনা করেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান। পাপুয়া নিউ গিনিকে উড়িয়ে দিয়ে সুপার টুয়েলভ নিশ্চিত করার পর সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহ বইয়ে দেন টর্নেডো। সেদিন ছাড়েননি তিনি গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সমর্থক থেকে শুরু করে বিসিবি প্রধান, কাউকেই।

পরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আশা জাগিয়েও হেরে যাওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক বলেন, সমালোচকদের আয়নায় মুখ দেখা উচিত। দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলেন তারা, সমালোচকরা নন। এভাবে কথা আর পাল্টা কথায় উত্তপ্তই থাকে পরিস্থিতি।

কথার এই লড়াইয়ে জড়িয়ে অধিনায়ক ও ক্রিকেটাররা নিজেদের ওপর বাড়তি চাপ নিয়ে ফেলেছিলেন কিনা, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। বিশেষ করে, মাঠে ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষায় চাপের প্রকাশ ফুটে ওঠে স্পষ্ট। সুপার টুয়েলভের সব ম্যাচ হেরে যাওয়া দলের মানসিকতাও বেশির ভাগ ম্যাচে ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।

সবচেয়ে খারাপটা জমা ছিল যেন শেষের জন্য। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭৩ রানে গুটিয়ে বাংলাদেশ হারে ৮ উইকেটে। শূন্য হাতে বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের পর বাংলাদেশ অধিনায়কের সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসে আগের সেই আলোচিত সংবাদ সম্মেলনের প্রসঙ্গও। মাহমুদউল্লাহ বললেন, আবেগের বশে ওসব বলেছিলেন তিনি।

“সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যাপারে.. সম্ভবত, আই গট ইমোশনাল। হয়তো এ কারণে আমি ওভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলাম। এটার জন্য আমি…।”

তবে সে দিনের মতো এ দিনও মাহমুদউল্লাহ বললেন, সমালোচনার ক্ষেত্রে সীমাটা মনে রাখা উচিত।

“সমালোচনা সবসময়ই হবে এবং আমি কখনোই বলিনি যে, সমালোচনা হবে না। সমালোচনা হবে এবং এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। কারণ, দেশ ও দলের জন্য পারফর্ম করা আমাদের দায়িত্ব। যখন আপনি (পারফর্ম) করবেন না, তখন আপনাকে সমালোচিত হতে হবে। সবকিছুরই একটা নির্দিষ্ট সীমানা থাকে।”

“অনেক কিছু আমরা বুঝি, আবার অনেক সময় হয়ত এড়িয়েও যাই। ওমানের ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলাম, সেটাতে আমি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। আমার ভেতর অনেক সময় অনেক আবেগ কাজ করে। হয়ত আবেগ থেকেই আমি সেই সব কথা বলেছিলাম।”

পরে আবেগ পেয়ে বসার পেছনে কারণও ব্যাখ্যা করলেন মাহমুদউল্লাহর। জানালেন জৈব সুরক্ষা বলয়ে টানা খেলে যাওয়ার কারণে মানসিক ক্লান্তির কথা। 

“সম্ভবত, আমরা গত ৪-৫ মাস ধরে টানা ক্রিকেট খেলছি। পরিবার থেকে দূরে আছি। জৈব সুরক্ষা বলয়ে যে একটা ফ্যাটিগ থাকে, সেটা আপনারাও জানেন। শরীর এবং মনের ক্লান্তিরও একটা ব্যাপার থাকে। এগুলো কোনো অজুহাত হিসেবে বলছি না।”

“আমার মনে আছে, আমি প্রিমিয়ার লিগ খেললাম টানা ২৬ দিন। এর দুদিন পর আমরা জিম্বাবুয়েতে গেলাম, খেললাম। জিম্বাবুয়ে থেকে এসে জৈব সুরক্ষা বলয়ে প্রবেশ করে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেললাম। এর এক সপ্তাহ পর আবারও জৈব সুরক্ষা বলয়ে প্রবেশ করে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে খেললাম। সম্ভবত বিরতি পেতাম না, যদি ইংল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজটা হতো। আমি খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে বলছি যে, এটা ওদের জন্য অনেক সময় কঠিন, অনেক বিষয় মানিয়ে নেয়া। আমার মনে হয় যে, জৈব সুরক্ষা বলয়ের কারণে কিন্তু অনেক খেলোয়াড়ের ভোগান্তি হয়।”