ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা অলরাউন্ডারের অপরাজিত সেঞ্চুরি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পৌঁছে দেয় সাড়ে চারশ রানে।
Published : 24 Nov 2024, 12:08 PM
ডানা মেলে ভেসে চলা, উল্লাসে লাফিয়ে ওঠা, ব্যাট উঁচিয়ে ধরা, হেলমেটে বোর্ডের প্রতীকে চুম্বন, সবই হলো। তার পরও একটু দীর্ঘায়িত হলো উদযাপন। মুহূর্তটি যেন লম্বা করতে চাইলেন জাস্টিন গ্রেভস। মুখে ফুটে উঠল স্মিত হাসি, কিন্তু চোখের কোণে যেন চিকচিক করছিল জল। দিনের খেলা শেষে লাজুক হাসিতে এই অলরাউন্ডার বললেন, সেঞ্চুরি ছোঁয়ার মুহূর্তটি তার জন্য ছিল খুবই আবেগময়।
অ্যান্টিগা টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শুরুটা নড়বড়ে হয়েছির ওয়েস্ট ইন্ডিজের। হাসান মাহমুদ দ্রুতই বিদায় করেছিলেন জশুয়া দা সিলভা ও আলজারি জোসেফকে। তার পরও যে সাড়ে চারশ রানের ঠিকানায় যেতে পারল ক্যারিবিয়ানরা, সেটির মূল কৃতিত্ব গ্রেভসের। এই টেস্ট দিয়েই দলে ফেরা ব্যাটসম্যান লড়িয়ে ব্যাটিংয়ে উপহার দেন অপরাজিত সেঞ্চুরি।
গত জানুয়ারিতে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকে অস্ট্রেলিয়া সফরে চার ইনিংস খেলে তার মোট রান ছিল ৬৮। ৩০ বছর বয়সী ক্রিকেটার এবার দলে ফিরে প্রায় সোয়া ছয় ঘণ্টা ক্রিজে কাটিয়ে ১১৫ রানে অপরাজিত থাকেন ২০৬ বল খেলে।
দিনের শেষে গ্রেভস বললেন, অনেক দিনের অনেক পরিশ্রমের ফল পেয়ে এই সেঞ্চুরি তার কাছে বিশেষ কিছু।
“খুবই খুবই স্পেশাল মুহূর্ত। খুব আবেগময়ও… সম্ভবত কিছুটা চোখের পানিও ঝরেছে। সব মিলিয়ে খুবই খুশি যে, দলকে ভালো একটা জায়গায় নিতে পেরেছি।”
“অনেক কষ্ট করতে হয়েছে… আড়ালে অনেক ঘাম ঝরাতে হয়েছে। অনেকটা পথ পেরিয়ে এই জায়গা এসেছি। মানসিকভাবেও অনেক কাজ করতে হয়েছে। সবকিছুই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।”
দ্বিতীয় দিন সকালে হাসানের জোড়া ছোবলের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ছিল ৭ উইকেটে ২৬১। সেখান থেকেই দলকে চারশ পার করায় গ্রেভস ও কেমার রোচের জুটি। ১৪০ রানের জুটি গড়েন তারা, অষ্টম উইকেটে যা বাংলাদেশের বিপক্ষে যে কোনো দলের রেকর্ড।
২৫২ সিনিট ক্রিজে থেকে ক্যারিয়ার সেরা ৪৭ রানের ইনিংস খেলেন রোচ।
গ্রেভস জানালেন, ৮২ টেস্ট খেলা রোচ বোলার হলেও উইকেটে তাকে দারুণভাবে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন।
“কিমার রোচের মতো সিনিয়র একজন ক্রিকেটারকে সঙ্গী হিসেবে পাওয়া দারুণ ছিল। তিনি ক্রমাগত বলছিলেন যে, ইতিবাচক তাড়না ধরে রাখতে এবং নিজেকে কিছুটা সময় দিতে। ওদেরকে যতটা সম্ভব ক্লান্ত করে তুলতে এবং বোলারদেরকে চতুর্থ-পঞ্চম স্পেলে আসতে বাধ্য করতে। একটা একটা প্রান্তে ধীরস্থির রয়ে গেছে আর আমি নিজের খেলাটা খেলে গেছি।”
দুজনের এই ১৪০ রানের জুটি আসে ২৮৯ বলে। স্ট্রাইক রেট ছিল পঞ্চাশের নিচে। গ্রেভসের ১১৫ রানের ইনিংসে বাউন্ডারি কেবল চরটি। ১৪৪ বল খেলে দুটি বাউন্ডারি মারেন রোচ।
গ্রেভস বললেন, দ্রুত রান তোলার তাড়া তাদের কখনোই ছিল না।
“স্কোরিং রেট কখনোই কোনো সমস্যা ছিল না। কিমার স্রেফ বলে গেছেন যে, নিজের মতো করে খেলতে এবং প্রতিটি বল দেখে খেলতে ও লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে।”
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৫০ রানে ইনিংস ঘোষণার পর ২০ ওভার খেলে ২ উইকেটে ৪০ রান নিয়ে দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
অ্যান্টিগায় এবার উইকেট আগের মতো পেস-সহায়ক নয়। দ্বিতীয় দিনে তো কিছুটা মন্থরও হয়ে এসেছে উইকেট। বোলারদের কাজটা এখানে কঠিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ সাজিয়েছে চার পেসার নিয়ে। গ্রেভস বললেন, তৃতীয় দিনে বোলারদের ধৈর্য ধরে নিজেদের কাজটা করে যেতে হবে।
“শক্ত অবস্থানেই আছি আমরা। অবশ্যই আজকে আরও দুটি উইকেট নিতে পারলে ভালো লাগত। তবে খুব বেশি পাওয়ার আশা করা উচিত নয়। কালকে আমাদেরকে অনেক শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে। পিচ অনেকটাই সহজ হয়ে এসেছে। তবে লম্বা সময় ধরে ধারাবাহিক হতে পারলে আমরা ভালো জায়গায় থাকতে পারব।”