নিউ জিল্যান্ডে সেঞ্চুরি করলেও এবার বাংলাদেশে এই শতরানকে ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস মনে করেন দক্ষিণ আফ্রিকার কিপার-বাটসম্যান।
Published : 22 Oct 2024, 08:19 PM
‘কেন যে কুর্নিশ করলাম, জানি না… তবে করার পর ভালোই লেগেছে…”, একটু লাজুক হাসিতে বললেন কাইল ভেরেইনা। সেঞ্চুরি করার পর উদযাপনে ফুটে উঠেছিল তার উচ্ছ্বাসের মাত্রা কতটা। তবে আবেগময় ও বহুমাত্রিক সেই দীর্ঘ উদযাপনের পেছনে কোনো গল্প নেই বলেই জানালেন দক্ষিণ আফ্রিকার কিপার-ব্যাটসম্যান। উদযাপনের আড়ালে তেমন কিছু না থাকলেও অবশ্য ইনিংসটি সাজানোর পেছনের গল্প তিনি বললেন আগ্রহ নিয়েই। তার প্রতিটি শব্দে ফুটে উঠল, এই ইনিংস কতটা সন্তুষ্টি দিয়েছে তাকে।
ভেরেইনার ১১৪ রানের ধ্রুপদি ইনিংসটিই মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে দুইশর বেশি রানের লিড এনে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
তার টেস্ট ক্যারিয়ারে এখনও প্রভাত বেলা। আগের ১৮ টেস্টে সেঞ্চুরি ছিল একটি। ২০২২ সালে ক্রাইস্টচার্চে সেই সেঞ্চুরিটি করেছিলেন টিম সাউদি, ম্যাট হেনরি, নিল ওয়্যাগনার, কাইল জেমিসন ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের পঞ্চমুখী পেস সামলে।
এবার তার অভিজ্ঞতা উল্টো। যদিও কার্তিক মাস শুরু হয়ে গেছে বাংলাদেশে, শীত এই এলো বলে। গরম অনেকটাই সহনীয় এখন। তার পরও ভেরেইনাদের জন্য এই গরমও কঠিন চ্যালেঞ্জ। আরও বড় পরীক্ষার নাম মিরপুরের স্পিন সহায়ক উইকেট ও বাংলাদেশের ত্রিমুখী স্পিন আক্রমণ।
উপমহাদেশে আগে কখনও টেস্ট খেলার সুযোগ তিনি পাননি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পঞ্চাশের বেশি গড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার রান করলেও উপমহাদেশে খেলেছেন আগে মোটে একটি ম্যাচ। সেই তিনিই সব প্রতিকূলতাকে জয় করে দলকে উপহার দিলেন অসাধারণ এক ইনিংস।
দিনশেষে সংবাদ সম্মেলনে ২৭ বছর বয়সী কিপার-ব্যাটসম্যান দুয়ার খুলে দেখালেন, এই ইনিংসটা তার হৃদয়ের কোথায় জায়গা পেয়ে গেছে।
“কন্ডিশন ও ম্যাচের পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখলে, এই সেঞ্চুরির অনুভূতি আগেরটির চেয়ে ভালো। নিউ জিল্যান্ডের কন্ডিশন তো আমাদের অনেকটাই মতো। কিন্তু এই উপমহাদেশের এত কঠিন উইকেটে ও কঠিন কন্ডিশনে, এটা আরও ভালো ইনিংস। খুবই খুশি আমি। নিউ জিল্যান্ডের সেঞ্চুরিটির পর অনেক দিন পেরিয়ে গেছে, আরেকটি পেয়ে তাই ভালো লাগছে।”
“অবশ্যই এটা আমার টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। গরম ও তাপমাত্রার দিক থেকে এত কঠিন কন্ডিশনে আর খেলিনি আগে। দেশে আমরা এত লম্বা সময় স্পিন বোলিং খেলি না। এখানে তো ৯০ শতাংশ সময় শুধু স্পিনই খেলতে হয়েছে। সবকিছুই খুব দ্রুত হয়ে যায় এখানে। এই ইনিংস অবশ্যই ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ফলপ্রসূ।”
ভেরেইনার ইনিংসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল সুইপ শট। একের পর এক সুইপ আর রিভার্স সুইপ করে বাংলাদেশের স্পিনারদের কার্যকর হতে দেননি তিনি।
তার অবশ্য দাবি, উইকেটের কথা ভেবে সুইপের আলাদা পরিকল্পনা তার ছিল না। বরং সব উইকেট ও কন্ডিশনেই এই শটকে কার্যকর মনে করেন তিনি।
“মনে হয় না, সুইপ শটে বাড়তি গুরুত্বের কিছু আছে। স্পিনারদের খেলা নিয়ে অনেক কাজ করেছি। শুধুমাত্র উপমহাদেশে খেলার জন্যই নয়, দেশের মাঠেও স্পিনের বিপক্ষে যতটা সম্ভব এই শট খেলব। আজকে অনেক বেশি স্পিন বোলিং খেলতে হয়েছে, এজন্যই এই শট এত খেলার চেষ্টা করেছি।”
এই ম্যাচের আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সবশেষ ম্যাচে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে ট্রেন্ট ব্রিজে ১৪৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ভেরেইনা। সেখান থেকে কন্ডিশন ও উইকেট পুরোপুরি ভিন্ন। তিনি জানালেন, ভালো প্রস্তুতির পথ ধরেই এখানে মানিয়ে নিতে পেরেছেন দ্রুত।
“ওই ইনিংসের (কাউন্টি) পর ওয়ানডে ক্রিকেটে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেছি আমরা। ম্যাচগুলি খেলেছি আবু ধাবিতে। সেখানেও এরকম গরম ছিল এবং স্পিন বোলিং অনেক বেশি খেলেছি। এটা এখানে কাজে লেগেছে। এখানে আসার আগে প্রিটোরিয়াতে খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা। এখানে আসার পরও ৪-৫ দিন খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি। এটা আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে মাঠে নামার আগে।”