বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজ
দারুণ পারফরম্যান্সে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ফেরার সিরিজ রাঙিয়েছেন শারমিন আক্তার, লক্ষ্য এবার ধারাবাহিকতা ধরে রাখার।
Published : 02 Dec 2024, 08:58 PM
ওয়ানডে সিরিজে ডাক পাওয়ার পর দিনের ঘটনা। অনুশীলন শেষ করে ফেরার সময় শারমিন আক্তারকে মনে করিয়ে দেওয়া হলো, ২০১১ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেই ছিল তার ওয়ানডে অভিষেক। সেদিন ফিফটি করেছিলেন তখনকার তরুণ ব্যাটার। একই দলের সঙ্গে ফেরার সিরিজে এবার সেঞ্চুরি করতে চান কি-না, জানতে চাওয়া হলে ছোট্ট হাসিতে শারমিন বলেন, ‘নির্দিষ্ট করে কিছু বলব না, ভালো করতে চাই।’
সেই ভালোর ব্যাপ্তি কতটা বা কতটুকু ভালো করতে চান, তা অব্যক্ত রেখে মাঠে নিজের ব্যাট দিয়েই যেন বাকি কথা বললেন শারমিন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে চমৎকার ব্যাটিংয়ে স্বপ্নীল এক ফেরার গল্প লিখলেন ২৮ বছর বয়সী ব্যাটার। প্রায় দেড় বছর পর ওয়ানডেতে ফিরে তিনিই দলের সবচেয়ে সফল ব্যাটার।
ফেরার ম্যাচে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে অল্পের জন্য সেঞ্চুরি করতে পারেননি। চমৎকার ব্যাটিংয়ে ৮৯ বলে তিনি খেলেন ৯৬ রানের ঝলমলে ইনিংস। পরের দুই ম্যাচেও বজায় রাখেন ধারাবাহিকতা। দ্বিতীয়টিতে ৪৩ রানে ফেরার পর শেষ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে ৭২ রানের ইনিংস।
বাংলাদেশের সিরিজ জয়ে শারমিনের অবদান ৭০.৩৩ গড়ে ২১১ রান। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো ব্যাটার করেন দুইশর বেশি রান। প্রথম ম্যাচে রেকর্ড ১৪ চার মারা শারমিনের ব্যাট থেকে পরের দুই ম্যাচে আসে আরও ১৫টি বাউন্ডারি। এটিও এক সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ চারের রেকর্ড।
এই সিরিজের আগে ৩৫ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মাত্র ১৬.৫২ গড় ও ৪৬.৭১ স্ট্রাইক রেটে ৫৬২ রান করেছিলেন শারমিন। আইরিশদের ভুগিয়ে নিজের পরিসংখ্যানও বেশ সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। গড় বেড়ে হয়েছে ২০.৮৯ আর স্ট্রাইক রেট এখন ৫৩.৫৬।
সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশের রেকর্ড বইয়ে ঝড় তুললেও, তুলনামূলক দুর্বল প্রতিপক্ষ হওয়ায় হয়তো খাটো করে দেখা হতে পারে শারমিনের অর্জন। তবে এই সিরিজে তার ব্যাটিংয়ের ধরনও ছিল প্রশংসনীয়। ফেরার সিরিজে ইতিবাচক মানসিকতার পাশাপাশি উইকেটের চারপাশে শট খেলা, পায়ের কাজ, রানিং বিট্যুইন দা উইকেট কিংবা পেশির জোর কাজে লাগানোর সামর্থ্যও দেখান অভিজ্ঞ ব্যাটার।
তিন নম্বরে নেমে প্রতি ম্যাচেই ফারজানা হককে সঙ্গী হিসেবে পান শারমিন। জুটিতে অগ্রণী ভূমিকা রেখে তিন ম্যাচে ১০৪, ৮৫ ও ১৪৩ রান যোগ করেন তিনি। অন্য প্রান্তে ফারজানা রয়েসয়ে খেললেও শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাটিং করেন শারমিন।
গত বছরের জুলাইয়ের পর প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমেই তিনি গড়েন দেশের হয়ে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড, ৪১ বলে। সেদিন তার ১০৭.৮৬ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসটি বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংসগুলোর মধ্যে একশর বেশি স্ট্রাইক রেটের মাত্র দ্বিতীয় নজির।
পরের দুই ম্যাচেও ইতিবাচক মানসিকতা দেখান শারমিন। উইকেটে গিয়ে তিনি বাড়িয়ে দেন ওপেনারদের রক্ষণাত্মক ব্যাটিংয়ে কমতে থাকা রান রেট। বাংলাদেশের ব্যাটারদের জন্য যা বিরলই বটে। রান করলেও স্ট্রাইক রেট বেশি রাখার ক্ষেত্রে সামর্থ্যের ঘাটতি প্রায়ই দেখা যায় ফারজানা, নিগার সুলতানাদের।
আইরিশদের বিপক্ষে সিরিজ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ব্যাটিংয়ের মানসিকতার এই পরিবর্তনের পেছনে স্কিলের উন্নতির কথা বললেন শারমিন।
“হাতে যদি ৪-৫টা অস্ত্র থাকে, তখন আরেকজনকে আক্রমণ করতে ভালো লাগবে (হাসি)। আমার মনে হয়, আমার ক্রিকেটটা এখন উন্নত হচ্ছে। আমি সেই প্রক্রিয়ায় আছি।”
“এখন আমি যে শটগুলো খেলছি, এজন্য প্রচুর অনুশীলন করেছি। তাই মানসিকতা বদলানো সহজ হয়ে যাচ্ছে। আগে যেটা হতো, শুধু মানসিকতা ঠিক থাকলে তো হবে না, ওই শটটা খেলাও জানতে হবে। এখন স্কিল বেড়েছে বলে মানসিকতাও পরিবর্তন হয়েছে।”
আর এই স্কিল বাড়ানোর অভিযানে জাতীয় পুরুষ দলের বর্তমান প্রধান সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সহযোগিতা নেন শারমিন। চার বছর আগে পেশাদার ক্রিকেটকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার তাগিদ থেকে সালাউদ্দিনের পুরোনো কর্মস্থল মাসকো-সাকিব ক্রিকেট একাডেমিতে অনুশীলন শুরু করেন শারমিন।
ওই একাডেমিতে সালাউদ্দিনের সঙ্গে দিনের পর দিন কাজ করে নিজের ব্যাটিংয়ের ধরনে আমূল পরিবর্তন আনেন ২৮ বছর বয়সী ব্যাটার। প্রায় দশ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে ফেলার পর এই পরিবর্তন আনতে শুরুতে কিছুটা দ্বিধায় ছিলেন শারমিন। তবে সালাউদ্দিনের ওপর আস্থা রেখেই সাফল্যের সিঁড়ি খুঁজে পেয়েছেন তিনি।
“কোচের প্রতি বিশ্বাস থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। (সালাউদ্দিন) স্যার যে কাজ করিয়েছেন... প্রথমত, টেকনিক্যাল অনেক জিনিস বদলে ফেললে যে কোনো ব্যাটার মেনে নিতে চায় না। কারণ দীর্ঘদিন খেলার পর টেকনিক্যাল কিছু পরিবর্তন করলে অনেক সময় অস্বস্তি লাগে।”
“আমার বিশ্বাসটা ছিল স্যারের প্রতি। আমাকে যে ড্রিলটা করাতেন, খুব বিশ্বাস নিয়ে প্রক্রিয়াটা মেনে চলার চেষ্টা করতাম। এখনও অনেক কিছু নিয়ে তর্ক হয়। খেলা নিয়ে আমাদের অনেক তর্ক হয়, অনেক আলোচনা হয়। তবে আমি অনেক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। স্যারের কাছে অনুশীলন করে আমার গেম সেন্সে উন্নতি হয়েছে।”
দেড় বছর পর ওয়ানডেতে প্রত্যাবর্তনের গল্প লেখা শারমিনের সামনে এবার টি-টোয়েন্টিতেও নতুন শুরুর সুযোগ। কুড়ি ওভারের সংস্করণের দলে প্রায় দুই বছর পর ডাক পেয়েছেন তিনি আইরিশদের বিপক্ষে।