একমুখী ক্রিকেট নয়, বরং সব পরিস্থিতির দাবি মেটানোর মতো করে দলকে গড়ে তুলতে চান ভারতের কোচ।
Published : 15 Oct 2024, 09:56 AM
টেস্ট ক্রিকেটে এই সময়ের আলোড়নের নাম ‘বাজবল।’ ইংল্যান্ডের পথ ধরে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার পথ বেছে নিতে আগ্রহী অনেকেই। প্রথাগত টেস্ট ক্রিকেটকে এখন অচল বলেও মনে করেন অনেকে। তবে গৌতাম গাম্ভিরের কাছে কোনো কৌশলই ফেলনা নয়। পরিস্থিতি বুঝে যেমন প্রথাকে আলিঙ্গন করতে চান তিনি, তেমনি প্রয়োজনে ছুটতে চান রকেটের গতিতে। দলকে সব পরিস্থিতির উপযোগী করে গড়ে তুলতে চান ভারতীয় কোচ।
গাম্ভিরের কোচিংয়ে ভারতের প্রথম দুই টেস্টে কোচের সেই চাওয়ার প্রতিফলন পড়েছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে চেন্নাই টেস্টে কিছুটা চাপে পড়লেও শেষ পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়িয়ে বড় ব্যবধানে জিতেছে ভারত। পরের টেস্টে কানপুরে বৃষ্টি, সময় ও বাংলাদেশ, সব কিছুকেই হারিয়ে রোমাঞ্চকর ক্রিকেট খেলে ম্যাচ জিতে নিয়েছে তারা। ম্যাচের আড়াই দিনের বেশি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পরও দুই দিনের কম সময়ে জিতে টেস্ট ক্রিকেটে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে গাম্ভির-রোহিতদের দল।
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে ভারতের কোচ বললেন, সব পরিস্থিতির দাবি মেটানোর মতো দল গড়ে তুলতে চান তিনি।
“আমরা এমন দল হয়ে উঠতে চাই, যারা এক দিনে ৪০০ রান তুলতে পারে কিংবা প্রয়োজনে দুই দিন ব্যাট করে ম্যাচ ড্র করতে পারে। এরকম পারলে তবেই সেটিকে উন্নতি বলা যায়, মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা বলা যায়, সেটিকেই টেস্ট ক্রিকেট বলা যায়। স্রেফ একমুখী ক্রিকেট খেললে উন্নতি হয় না।”
“বিশ্ব ক্রিকেটের কথা বলতে পারব না। প্রতিটি দলের আলাদা কৌশল, ধরন, দর্শন, পদ্ধতি আছে টেস্ট ক্রিকেট খেলার। আমি কেবল আমার দলের কথা বলতে পারি। এরকম পরিস্থিতি যদি আসে যে, ম্যাচ বাঁচাতে দুই দিন ব্যাট করতে হবে, আমাদের ড্রেসিং রুমে তেমন ক্রিকেটার আছে। আমাদের মূল লক্ষ্য অবশ্যই ম্যাচ জেতা। তবে এরকম পরিস্থিতি যদি তৈরি হয় যে, ড্রয়ের জন্য খেলতে হবে দলকে, সেই পথও আমরা খোলা রাখব। এই ধরনের টেস্ট ক্রিকেট আমরা খেলতে চাই।”
বাংলাদেশের বিপক্ষে কানপুর টেস্ট যখন বৃষ্টির কারণে ড্রয়ের পথে এগোচ্ছে অবধারিতভাবে, তখন ভারতীয় দল অবিশ্বাস্য ক্রিকেট উপহার দিয়ে চমকে দেয় ক্রিকেট বিশ্বকে। ৩৪.৪ ওভারে ২৮৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে দেয় তারা। ওভারপ্রতি রান ছিল ৮.২২, টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৭ বছরের ইতিহাসে ১০০ রান ছোঁয়া দলীয় স্কোরগুলির মধ্যে যা সর্বোচ্চ।
গাম্ভির বললেন, জয়ের তাড়না থেকে এভাবেই ভাবনা ও সামর্থ্যের সীমানা বাড়িয়ে নিতে চান তারা।
“অবশ্যই আমরা চাই ছেলেরা আগ্রাসী ক্রিকেট খেলবে। আমরা চাই ছেলেরা মাঠে নেমে সহজাত ক্রিকেট খেলবে। সহজাত ক্রিকেট খেলেই যদি দিনে ৪০০-৫০০ রান তুলতে পারে, তাহলে কেন নয়? আমরা এই ধরন বেছে নেব, ‘ঝুঁকি বেশি, পুরস্কারও বেশি, ঝুঁকি বেশি, ব্যর্থতার সুযোগও বেশি।’ এই পথে এমন দিনও আসতে পারে, আমরা একশর নিচে গুটিয়ে যাব। তবু ক্রিকেটারদের পাশে থাকব আমরা।”
“এভাবেই আমরা খেলতে চাই এবং দেশের মানুষকে বিনোদন দিতে চাই। টেস্ট ক্রিকেটেও আমরা খেলাটাকে সামনে এগিয়ে নিতে চাই এবং পরিস্থিতি যেমনই হোক, ফল বের করে আনতে চাই।”
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে এবার দারুণ পারফরম্যান্সে সবার ওপরে আছে ভারত। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের এই সিরিজের পর অস্ট্রেলিয়ায় পাঁচ ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ খেলবে গাম্ভিরের দল। অতি নাটকীয় পতন না হলে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে টানা তিনটি ফাইনালে ভারতের খেলার সম্ভাবনা প্রবল।
তবে এখনই অত দূরে না তাকিয়ে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট নিয়ে ভাবছেন ভারতীয় কোচ।
“টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল তো আগামী জুনে। অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ শুরু ২২ নভেম্বর। এই মুহূর্তে আমাদের ভাবনায় কেবলই নিউ জিল্যান্ড, অন্য কিছু নয়।”
“আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সময় কেউ এভাবে ভাবে না অস্ট্রেলিয়া সিরিজের প্রস্তুতি বা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের প্রস্তুতি এখন কীভাবে নেব। এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ১৬ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টার জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেব (বেঙ্গালুরু টেস্ট শুরুর সময়)। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অনেক দূরে কেউ তাকায় না।”