চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথম খেলতে নেমেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অধরা সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন তাওহিদ হৃদয়, ষষ্ঠ উইকেটে জাকের আলির সঙ্গে গড়লেন রেকর্ড গড়া জুটি।
Published : 20 Feb 2025, 07:31 PM
বেশ কিছুক্ষণ ধরেই তীব্র পানিশূন্যতায় ভুগছিলেন তাওহিদ হৃদয়। রান নিচ্ছিলেন প্রায় হেঁটে হেঁটে। এর মধ্যেই কুলদিপ ইয়াদাভের একটি বল পয়েন্টের দিকে খেলে রান নেওয়ার তাড়াহুড়ায় ধপাস! তবে ওভাবে পড়ে থাকলে তো চলবে না! খুঁড়িয়েই ছুটতে শুরু করলেন, শেষ মুহূর্তে পুরো শরীর ভাসিয়ে লম্বা ডাইভে কোনোমতে ঢুকলেন ক্রিজে।
এই সিঙ্গল তাকে পৌঁছে দেয় ৯৯ রানে। পরের ওভারে পৌঁছে যান কাঙ্ক্ষিত মাইলফলকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি! হেলমেট খুলে যখন উদযাপন করছেন, তার মুখায়বে তখন ক্লান্তি-শ্রান্তির ছাপ, কিন্তু ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি।
হৃদয়ের ওই তৃপ্তিমাখা হাসি পায়ের ক্র্যাম্পকে জয় করে সেঞ্চুরি ছোঁয়ার কারণেই শুধু নয়, চরম বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেওয়ারও। একসময় ১০০ রানকেও যে দলের জন্য মনে হচ্ছিল দূরের পথ, সেই দল ২২৮ করতে পারল মূলত হৃদয়ের দৃঢ়তা আর সংকল্পে।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ শুরুর ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় মাত্র ৩৫ রানে হারিয়ে ফেলে ৫ উইকেট। সেখান থেকে জাকের আলির সঙ্গে জুটিতে রেকর্ডের মালা গেঁথে অসাধারণ ইনিংস খেলেন হৃদয়।
জাকের ৬৮ রান করে ফিরলেও থামেননি হৃদয়। পানিশূন্যতায় পেশির টান সামলে তিনি খেলেন ১০০ রানের ইনিংস। ১১৮ বলের ইনিংসটি সাজান ৬ চার ও ২ ছক্কায়।
৪৫তম ওভার থেকে ক্র্যাম্পের কারণে প্রবলভাগে ভুগতে হয় হৃদয়কে। শেষ দিকে তো নড়তেই পারছিলেন না। সেটির প্রভাব পড়ে ব্যাটিংয়ে। নইলে তার ও দলের রান বেশি হতে পারত আরও।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজের প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি করা বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হৃদয়। ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৮ রান করেছিলেন তামিম ইকবাল।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দুই ওভারে দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সপ্তম ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজও ফিরলে ক্রিজে যান হৃদয়। এক ওভার পর আরেকপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তিনি দেখেন, টানা দুই বলে বিদায় নেন তানজিদ হাসান ও মুশফিকুর রহিম। এরপর জাকেরকে নিয়ে শুরু হয় তার প্রতিরোধের অভিযান।
হৃদয়-জাকের জুটিও অবশ্য প্রথম বলেই ভাঙতে পারত। আকসার প্যাটেলের হ্যাটট্রিক বলে প্রথম স্লিপে সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন রোহিত শার্মা। এরপর ২৩ রানে থাকা হৃদয়ের ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন হার্দিক পান্ডিয়া। জাকের পরে ২৪ রানে রক্ষা পান স্টাম্পড হওয়া থেকে।
জীবন পেয়ে সুযোগ কাজে লাগান দুজনই। নবম ওভার থেকে শুরু করে ৪৩তম ওভার পর্যন্ত খেলে তারা যোগ করেন ১৫৪ রান।
ওয়ানডেতে ষষ্ঠ উইকেটে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি। সবশেষ ওয়ানডেতেই গত ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট পড়ার পড় ১৫০ রান যোগ করেছিলেন জাকের ও মাহমুদউল্লাহ।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড এখন হৃদয়-জাকেরের। ২০০৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪২ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর ১৩১ রানের জুটি গড়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার মার্ক বাউচার ও জাস্টিন কেম্প।
ভারতের বিপক্ষে ষষ্ঠ উইকেটে প্রায় ২০ বছর পুরোনো রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছেন তারা। ২০০৫ সালে ১৩৩ রানের বন্ধন গড়েছিলেন শ্রীলঙ্কার মারভান আতাপাত্তু ও রাসেল আর্নল্ড।
বাংলাদেশের জন্য ভারতের বিপক্ষে এটি যে কোনো উইকেটেই সেরা জুটি।
বিপর্যয় সামলে ঘুরে দাঁড়াতে স্বাভাবিকভাবেই শুরুতে সময় নেন হৃদয় ও জাকের। পঞ্চাশ রানের জুটি গড়তে তাদের খেলতে হয় ৮৪ বল। পরের পঞ্চাশ রান করতেও লেগে যায় আরও ৮০ বল। এরপর রানের গতি কিছুটা বাড়ান হৃদয়। জুটির শেষ ৪২ বলে আসে ৫৪ রান।
শুরু থেকে একই গতিতে খেলে ৮৭ বলে পঞ্চাশ করেন জাকের। পরেও দ্রুত রান তোলার চাহিদা মেটাতে পারেননি তিনি। সব মিলিয়ে ১১৪ বলের ইনিংসে ৪টি চার মারেন ২৬ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
হৃদয়ের শুরুটাও হয় মন্থর। ক্যারিয়ারের অষ্টম ফিফটি করতে খেলেন ৮৫ বল। মাইলফলক ছুঁয়ে নতুন রূপে জেগে ওঠেন তিনি। কুলদিপ ইয়াদাভের বলে কাভারের ওপর দিয়ে মারেন ম্যাচের প্রথম ছক্কা। পরের ওভারে রাভিন্দ্রা জাদেজার বল স্লগ সুইপ করে পাঠান সীমানার ওপারে।
এই ছন্দ ধরে রেখে এগোতে থাকেন তিনি। এর মাঝেই একটি রান নিতে গিয়ে পেশিতে টান অনুভব করেন ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। বাকি সময় আর স্বচ্ছন্দে দৌড়াতে পারেননি তিনি।
তবু পঞ্চাশ থেকে একশতে পৌঁছাতে মাত্র ২৯ বল লাগে হৃদয়ের। এরপর অবশ্য আর কোনো রান যোগ করতে পারেননি তিনি।
তবে যা করেছেন, সেটিই তো স্মরণীয় হয়ে থাকবে দারুণভাবে।