শেষ ওয়ানডেতে ব্যাটে-বলে দারুণ পারফরম্যান্সে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছে আয়ারল্যান্ড।
Published : 08 Oct 2024, 10:10 AM
সিরিজ জয়ের ট্রফি নিয়ে ছবি তোলার আনুষ্ঠানিকতা সেরে নিচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটাররা। কিন্তু তাদের মুখে চওড়া হাসি নেই, উদযাপনে উচ্ছ্বাস নেই। বরং আইরিশ ক্রিকেটারদের উল্লাসই চোখে পড়ার মতো। ‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার’, এই কথা যদিও আয়ারল্যান্ডের জন্য বলার উপায় নেই। সিরিজ হেরে গেছে তারা আগেই। তবে শেষ ম্যাচের জয়ও তো তাদের জন্য কম নয়!
প্রথম দুই ম্যাচ জিতেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ ওয়ানডেতে তাদেরকে ৬৯ রানে হারিয়ে দিয়েছে আয়ারল্যান্ড।
দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও প্রোটিয়াদের একটি ম্যাচে হারিয়েছিল আইরিশরা। এবার ওয়ানডেতেও একটি জয় মিলিয়ে সিরিজ থেকে তাদের প্রাপ্তি যথেষ্টই।
আবু ধাবিতে সোমবার ব্যাটিং ও বোলিংয়ের শুরুটাই জয়ের পথে এগিয়ে নেয় আয়াররল্যান্ডকে। পল স্টার্লিংয়ের দুর্দান্ত ইনিংস ও শতরানের উদ্বোধনী জুটির পর ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৮৪ রান তোলে আইরিশরা।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ৯১ রানের লড়িয়ে ইনিংস খেলে নিজেকে চেনান মাত্রই দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা জেসন স্মিথ। তার পরও তারা গুটিয়ে যায় ২১৫ রানেই।
ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় জয় এটি।
সিরিজে প্রথমবার টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা আইরিশদের দারুণ শুরু এনে দেন স্টার্লিং ও অ্যান্ড্রু বালবার্নি। শুরুর জুটিতে ১০১ রান যোগ করেন অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান।
৭৩ বলে ৪৫ রান করে ফেরেন বালবার্নি। দ্বিতীয় উইকেটে কার্টিস ক্যাম্পারের সঙ্গে ৫৮ রানের জুটি গড়েন স্টার্লিং।
ওটনিল বার্টম্যানের পরপর দুই ওভারে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন এই দুজনই। ৩৬ বলে ৩৪ রান করে ক্যাম্পার ফেরেন আগে। শতরানের আশা জাগানো স্টার্লিং আউট হয়ে যান ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ৯২ বলে ৮৮ রান করে।
জোড়া ধাক্কার পর বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরেকটি অর্ধশত রানের জুটি গড়েন হ্যারি টেক্টর ও লর্কান টাকার।
২৬ রান করে টাকারের বিদায়ের পর দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় শেষ দিকে একের পর এক উইকেট হারায় আইরিশরা। তাদের শেষ ছয় ব্যাটসম্যানের কেউ দু অঙ্ক ছুঁতে পারেননি।
তবে টেক্টরের দারুণ ইনিংস পথেই রাখে দলকে। ৪৮ বলে ৬০ রান করে রান আউট হন তিনি শেষ ওভারে।
রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা বিপাকে পড়ে যায় শুরুতেই। আগের দুই ম্যাচেও দেখা গেছে, ম্যাচের দ্বিতীয় ভাগে কৃত্রিম আলোয় বল সুইং করে বেশ, দারুণ সহায়তা পান পেসাররা। এই ম্যাচে সুইংয়ের মাত্রা ছিল আরেকটু বেশি।
কন্ডিশনকে কাজে লাগান দুই আইরিশ পেসার মার্ক অ্যাডায়ার ও গ্রাহাম হিউম। ১০ রানের মধ্যে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
চতুর্থ উইকেটে কাইল ভেরেইনা ও ট্রিস্টান স্টাবস গড়েন ৪৯ রানের জুটি। শেষ পর্যন্ত এটিই হয়ে থাকে দলের সেরা জুটি।
মিডল অর্ডারে ছোবল দেন আইরিশদের আরেক পেসার ক্রেইগ ইয়াং। ৩৬ বলে ৩৮ রান করে থমকে যান ভেরেইনা। আগের ম্যাচে বিধ্বংসী সেঞ্চুরি করা স্টাবস এবার ৪৫ বল খেলে করতে পারেন কেবল ২০।
৭৯ রানে পাঁচ উইকেট হারানো দলের হয়ে লড়াই চালিয়ে যান জেসন স্মিথ। অভিষেক ওয়ানডেতে শূন্য রানে ফেরা অলরাউন্ডার দারুণ কিছু শটে নিজের সামর্থ্যের জানান দেন। তবে ম্যাচ আসলে তাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে আগেই।
স্মিথ সেঞ্চুরি করতে পারেন কি না, সেটিই ছিল কেবল দেখার। ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ৯৩ বলে ৯১ করে তিনি আউট হয়ে যান নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে। এরপর ম্যাচ শেষ হতে দেরি হয়নি।
দারুণ ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা আইরিশ অধিনায়ক পল স্টার্লিং। শেষ ম্যাচে চারটিসহ সিরিজে ১১ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দা সিরিজ প্রোটিয়া পেসার লিজাড উইলিয়ামস।
আয়ারল্যান্ডের কাছে দুই সংস্করণের দুটি হারের ঠিক আগে শারজাহতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের পরের চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ, যা শুরু ২১ অক্টোবর।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আয়ারল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৮৪/৯ (বালবার্নি ৪৫, স্টার্লিং ৮৮, ক্যাম্পার ৩৪, টেক্টর ৬০, টাকার ২৬, ডকরেল ৬, অ্যাডায়ার ৮, হ্যান্ড ০, হিউম ০, হামফ্রিজ ২*, ইয়াং ০*; এনগিডি ৯-০-৭০-০, উইলিয়ামস ১০-২-৫৬-৪, বার্টম্যান ৮-০-৩২-২, ফোরটান ৮-১-৪৪-০, স্মিথ ৫-০-২৯-০, ফেলুকোয়ায়ো ৮-০-৩২-২, স্টাবস ২-০-১৫-০)।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৬.১ ওভারে ২১৫ (রিকলটন ৪, হেনড্রিকস ১, ফন ডার ডাসেন ৩, ভেরেইনা ৩৮, স্টাবস ২০, স্মিথ ৯১, ফেলুকোয়ায়ো ২৩, ফোরটান ১১, উইলিয়ামস ২, এনগিডি ৯, বার্টম্যান ০*; অ্যাডায়ার ৯-১-৫৪-২, হিউম ৯.১-৩-২৯-৩, হ্যান্ড ৮-০-৪৪-১, ইয়াং ৮-০-৪০-৩, ক্যাম্পার ৫-০-২৮-০, হামফ্রিজ ৭-২-১৬-১)।
ফল: আয়ারল্যান্ড ৬৯ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা ২-১ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: পল স্টার্লিং।
ম্যান অব দা সিরিজ: লিজাড উইলিয়ামস।