৫০ চার ও ২২ ছক্কায় ১৭০ বলে ৪০৪ রানের ইনিংস খেললেন মুস্তাকিম, ৫০ ওভারে দলের রান ৭৭০, বাংলাদেশের স্বীকৃত পর্যায়ের কোনো ধরনের ক্রিকেটে এমন কিছুর নজির আর নেই।
Published : 18 Mar 2025, 06:42 PM
শুরুর ঝড় সামলে পঞ্চম ওভারে চার বলের মধ্যে দুই উইকেট নিলেন স্যামসন রায়। মনে হচ্ছিল, রানের জোয়ারে হয়তো বাধ দিতে পারবে সেন্ট গ্রেগরি হাই স্কুল এন্ড কলেজ। কিন্তু হলো ঠিক উল্টো। বাকি ৪৫ ওভারে সেন্ট গ্রেগরির বোলারদের নিয়ে স্রেফ ছেলেখেলা করলেন মুস্তাকিম হাওলাদার ও সোয়াদ পারভেজ। দুজনের ব্যাটে রচিত হলো ইতিহাস।
মুস্তাকিম খেললেন ৪০৪ রানের ইনিংস, সোয়াদ করলেন ২৫৬ রান। দুজনের ৬৯৯ জুটিতে ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ পেল ৭৭০ রানের সংগ্রহ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে মঙ্গলবার প্রাইম ব্যাংক স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের বিভাগীয় পর্যায়ের খেলায় দেখা গেল এমন অবিশ্বাস্য কীর্তি। স্বীকৃত ক্রিকেটে এমন কিছুর নজির নেই তো বটেই, দেশের যে কোনো পর্যায়ের ক্রিকেটেই ব্যক্তিগত ৪০০ বা দলীয় ৭০০ রান বিরল।
প্রাইম ব্যাংক স্কুল ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, কোনো ব্যাটসম্যানের চারশ রানের ইনিংস টুর্নামেন্টে এটিই প্রথম।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৫ ওভারে দুই উইকেট হারায় ক্যামব্রিয়ান। স্কোরবোর্ডে ততক্ষণে অবশ্য ৭১ রান যোগ করে ফেলে তারা। এরপর জুটি বেধে বানের জলের মতো রান বাড়াতে থাকেন মুস্তাকিম ও সোয়াদ।
শেষ পর্যন্ত খেলে দলকে ৭৭০ রানে নিয়ে যান দুই ব্যাটসম্যান। অবিচ্ছিন্ন জুটিতে আসে ৬৯৯ রান।
১৭০ বলের ইনিংসে চার-ছক্কার পসরা সাজান মুস্তাকিম। ২৩৭.৬৪ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে ৫০টি চারের সঙ্গে ২২টি ছক্কা মারেন তিনি।
ম্যারাথন জুটিতে তার সঙ্গী সোয়াদের ব্যাট থেকে আসে ৩২ চার ও ১৩ ছক্কা। তার ২৫৬ রান এসেছে ১২৪ বলে।
আড়াইশ রানের ইনিংস খেলার পর বল হাতেও ৪ উইকেট নেন সোয়াদ। তার দলের হাসান হৃদয় পান ১১ রানে ৬ উইকেট।
পাহাড়সম লক্ষ্যে মাত্র ১১.৪ ওভারে ৩২ রানে গুটিয়ে যায় সেন্ট গ্রেগরি। ৭৩৮ রানের জয় পায় ক্যামব্রিয়ান।
ম্যাচ শেষে মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আসেন মুস্তাকিম ও পারভেজ। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে চারশ রানের ইনিংস খেলার পথে সঙ্গীর সমর্থন পাওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানান মুস্তাকিম।
"দুজনেরই আজকে ভালো ব্যাটে লাগছিল বল। তাই দুজন মিলেই শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। পঞ্চাশ রানে (আসলে ৭১) ২ উইকেট পড়ার পর একটু ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিলাম। তখন এক দিকে আমি মেরে খেলছিলাম। আর ওকে বলেছিলাম ধরে খেলতে।"
"ও (সাদ পারভেজ) আর আমি অনেক ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে খেলছি। ও আমাকে অনেক সহায়তা করেছে। শেষ দিকে তো ওভার কম ছিল। ও আমাকে স্ট্রাইক দিয়ে দিয়ে রানটা বেশি করাতে সাহায্য করেছিল। তাই ওকে ধন্যবাদ।"
এরই মধ্যে অনূর্ধ্ব-১৮ বিভাগীয় পর্যায়ে খেলেছেন মুস্তাকিম। চলতি তৃতীয় বিভাগ বাছাই লিগে তেজকুনিপাড়া ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলছেন তিনি। এবার স্কুল ক্রিকেটে অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলার পর তিনি মুস্তাকিম বললেন, বড় কিছু করার বিশ্বাস ছিল তার।
"নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস ছিল আজকে কিছু একটা করার। ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক সংযোগ করার চেষ্টা করছিলাম। পরে দেখলাম যে ভালো লাগছে, তখন মনে হচ্ছিল পারব। আগে অনেক জায়গায়, অনেক টুর্নামেন্টে এমন বড় বড় ইনিংস খেলেছি। তাই বিশ্বাস ছিল যে পারব।"