ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে সাইফের ঝড়ো ৯৫ আর জাকেরের লড়াই

সিলেটে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে তৃতীয় দিনে আগ্রাসী ইনিংস খেলে ফিফটির কাছে গিয়ে আউট হন আফিফ হোসেন, একটুর জন্য সেঞ্চুরি পাননি সাইফ হাসান।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2023, 02:30 PM
Updated : 18 May 2023, 02:30 PM

লেগ স্টাম্পের বাইরের নিরীহ এক ডেলিভারি। সেটিতেই ফ্লিক করতে গিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে শর্ট কাভারে ক্যাচ তুলে দিলেন সাইফ হাসান। বোলার জেইর ম্যাকঅ্যালিস্টার নিজেই ছুটে গিয়ে দারুণ ডাইভিং ক্যাচ নিলেন। সাইফ কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে রইলেন হতভম্ব হয়ে। এই শট যে কোনো পরিস্থিতিতেই হতাশাজনক। সাইফের যন্ত্রণা আরও বেশি হওয়ার কথা, সেঞ্চুরি থেকে তখন যে স্রেফ ৫ রানে দূরে তিনি!

অথচ ওই শটের আগ পর্যন্ত দুর্দান্ত খেলছিলেন সাইফ। দারুণ সব স্ট্রোকের ছটায় আগ্রাসী এক সেঞ্চুরির কাছে গিয়েই খেই হারালেন তিনি। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং উপহার দেন আফিফ হোসেনও। তবে সাইফের মতো তিনিও লেগ স্টাম্পের বলে টাইমিংয়ে গড়বড় করে কাভারে ক্যাচ তুলে দেন ফিফটির কাছে গিয়ে।

এই দুজনের স্ট্রোকসমৃদ্ধ ইনিংসের পাশে লড়িয়ে ফিফটি করে অপরাজিত থাকেন জাকের আলি। কিন্তু এই তিন জন ছাড়া ব্যর্থ দলের আর সবাই। তিন দিনে অনেকটা সময় বৃষ্টির কারণে খেলা না হলেও তাই প্রথম আনঅফিসিয়াল টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে হারের শঙ্কায় বাংলাদেশ ‘এ’ দল।

সিলেটে বৃহস্পতিবার ম্যাচের তৃতীয় দিনে ক্যারিবিয়ানরা প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ৭ উইকেটে ৪২৭ রানে। বাংলাদেশ ‘এ’ প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় ২৬৭ রানে।

ওপেনিংয়ে ১৪ চার ও ২ ছক্কায় ৭১ বলে ৯৫ রানের ইনিংস খেলেন টেস্ট দলে জায়গা হারানো সাইফ হাসান। দেড় বছর পর প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলতে নেমে অধিনায়ক আফিফ করেন ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৪১ বলে ৪৭। চলতি মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ ফর্মে থাকা জাকের ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন ১২৩ বল খেলে।

গতি আর বাউন্সে বাংলাদেশকে ভুগিয়ে ৫ উইকেট নেন জেইর ম্যাকঅ্যালিস্টার। মাত্র কিছুদিন আগে স্বীকৃতি ক্রিকটে অভিষিক্ত বারবাডোজের এই ফাস্ট বোলার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথমবার পেলেন এই স্বাদ। তার লেংথ ও বডিলাইন বাউন্সের সামনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা অস্বস্তিতে পড়েন বারবার।

ফলো অনে পড়ে শেষ বিকেলে ব্যাটিংয়ে নেমে ২ ওভার স্বস্তিতে শেষ করেন জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম।

ক্যারিবিয়ানদের ব্যাটিং দিয়ে শুরু হয় দিন। ৪৭ রানে অপরাজিত থাকা কেভিন সিনক্লেয়ার পৌঁছে যান ফিফটিতে। তবে ৭৩ রানে দিন শুরু করা জশুয়া দা সিলভা পারেননি সেঞ্চুরিতে যেতে। ৭৭ রানেই তাকে আউট করেন নাঈম হাসান। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক আউট হতেই ঘোষণা করে দেন ইনিংস।

এরপর ক্যারিবিয়ানদের দুই পেসার আকিম জর্ডান ও রেমন রিফারের সামনে বাংলাদেশের দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও জাকির হাসানের শুরুটা ছিল নড়বড়ে। প্রথম ধাক্কাও আসে দ্রুতই। বাঁহাতি পেসার রিফারের ফুল লেংথ বলে শরীর থেকে দূরে খেলে স্লিপে ক্যাচ দেন সাদমান।

রিফারের ওই ওভারেই কাভার ড্রাইভে চার মেরে শুরু করেন সাইফ। এরপর এগোতে থাকেন তিনি বাউন্ডারির ভেলায় চেপেই। রিফারের পরের ওভারে আরও দুটি ড্রাইভে চার মারেন তিনি, আকিম জর্ডানকে চার মারেন পরপর দুটি কাট শটে।

জাকিরের প্রথম তিন বাউন্ডারির দুটিই আসে ব্যাটের কানায় লেগে। তবে এরপর কিছুটা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন তিনিও। তবে ইনিংসটি বড় করতে পারেননি টেস্ট ক্রিকেটে দারুণ শুরু করা ওপেনার। আলগা শটে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি ৩০ রান করে। পরের ওভারে বাজে শটে বিদায় নেন মাহমুদুল হাসান জয়ও।

এরপরই সাইফ হাসান ও আফিফ হোসেনের জুটি। প্রথম বলেই আফিফ শুরু করেন বাউন্ডারি দিয়ে। দুই প্রান্ত থেকে চলতে থাকে বাউন্ডারি পর বাউন্ডারি। ম্যাকঅ্যালিস্টারের বলে শর্ট আর্ম পুল শটে ছক্কা মারেন সাইফ। তার ফিফটি আসে ৩৯ বলে।

আফিফ তো পেয়ে বসেন গুডাকেশ মোটিকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট দলের বাঁহাতি স্পিনারের প্রথম ওভারেই তিন চার ও এক ছক্কায় নেন তিনি ১৮ রান! একটু পর মোটির এক ওভারে ছক্কা মারেন আফিফ ও সাইফ দুজনই।

জুটি ভাঙে আফিফের বিদায়ে। লেগ স্টাম্পে থাকা বলটি পিচ করে হয়তো একটু থমকে আসে। আফিফের ব্যাটের কানায় লেগে সহজ ক্যাচ যায় শর্ট কাভারে।

দুজনের জুটিতে ১০১ রান আসে কেবল ৭৯ বলে।

এরপর ছোট একটি ধস। মুহূর্তের অমনোযোগীতায় উইকেট হারান সাইফ। নাঈম হাসান পারেননি টিকতে। ইয়ানিক ক্যারাইয়াহর লেগ স্পিনে বাজেভাবে স্লগ করত গিয়ে উইকেট হারান রিশাদ হোসেন।

জাকের আলির লড়াই চলতে থাকে তখন। তাকে কিছুটা সঙ্গ দেন রেজাউর রহমান রাজা। সেটিও খুব দীর্ঘ হয়নি। ১১ রান করে রাজা বোল্ড হন ম্যাকঅ্যালিস্টারের গতিময় বলে লেংথ বুঝতে না পেরে।

এরপর শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান জাকের। দুই পেসার রিপন মন্ডল ও মুশফিক হাসান রান করতে পারেননি কোনো। তবে তারা কিছুক্ষণ টিকে থাকায় আরেক প্রান্তে রান রান বাড়ান জাকের। ম্যাকঅ্যালিস্টারের বল শাফল করে চোখধাঁধানো এক পুল শটে ছক্কা মারেন তিনি।

শেষ পর্যন্ত সঙ্গী হারিয়ে অপরাজিত থেকে যান জাকের। শেষ তিন জুটিতে ৬৭ রান করে বাংলাদেশ, এর মধ্যে জাকেরের ব্যাট থেকেই আসে ৫৪ রান।

ফলো অনের পর শেষ বিকেলের কয়েক মিনিটে উইকেট না হারানোর স্বস্তি পায় বাংলাদেশ। তবে শেষ দিনে তাদের অপেক্ষায় ম্যাচ বাঁচানোর লড়াই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ ১ম ইনিংস: ১২৬.৩ ওভারে ৪২৭/৭ (ডি.) (আগের দিন ৪১৭/৬) (জশুয়া ৭৭, সিনক্লেয়ার ৫৩*; মুশফিক ২০-৪-৫৪-৩, রিপন ২৪-৭-৬৬-১, রাজা ১৪-১-৭৯-০, নাঈম ৩৯.৩-৯-১১৬-২, রিশাদ ১১-০-৬১-০, আফিফ ৫-০-১৭-০, সাইফ ১০-২-১৮-১, জয় ৩-০-১৪-০)।

বাংলাদেশ ‘এ’ ১ম ইনিংস: ৬৭.৪ ওভারে ২৬৭ (সাদমান ২, জাকির ৩০, সাইফ ৯৫, জয় ২, আফিফ ৪৫, জাকের ৬৪, নাঈম ৪, রিশাদ ২, রাজা ১১, রিপন ০, মুশফিক ০; জর্ডান ১৪.৪-১-৫৩-২, রিফার ১০-২-৪৪-২, ম্যাকঅ্যালিস্টার ১৫-২-৬০-৫, সিনক্লেয়ার ৫-০-১২-০, মোটি ১০-০-৫৮-০, ক্যারাইয়াহ ১৩-২-৩১-১)।

বাংলাদেশ ‘এ’ ২য় ইনিংস: (ফলো অনের পর) ২ ওভারে ৫/০ (সাদমান ৫*, জাকির ০*; জর্ডান ১-০-১-০, রিফার ১-০-৪-০)।