১৯২ স্ট্রাইক রেটের ইনিংস খেললেও ফিফটিকেই আটকে গেলেন অভিজ্ঞ এনামুল হক বিজয়, আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ফিফটি করলেন সাদিকুর রহমানও।
Published : 13 Mar 2025, 05:46 PM
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে হঠাৎ করেই যেন রান করতে ভুলে গেলেন ব্যাটসম্যানরা। শুরুর তিন রাউন্ডে নিয়মিত বড় রানের ম্যাচ হলেও চতুর্থ রাউন্ডে দুইশ করাই হয়ে গেল কঠিন। ছয় ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে দুইশ ছাড়াল দলীয় স্কোর।
চতুর্থ রাউন্ডের প্রথম তিন ম্যাচের একটিতেও দুইশ করতে পারেনি কোনো দল। বৃহস্পতিবারের দুই ম্যাচেও একই দশা। রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব ও গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের ম্যাচে শুধু দুইশর বেশি রানের দেখা মিলল।
এনামুল হক করেন ঝড়ো ফিফটি। তবে আগের ম্যাচের মতো এবারও আটকে যান তিনি ফিফটিতেই। তাকে অনুসরণ করেন সাদিকুর রহমানও। একইভাবে জাওয়াদ আবরার ও অমিত মজুমদার বড় করতে পারেননি সম্ভাবনাময় ইনিংস।
বল হাতে আলো ছড়ান রবিউল হক, আসাদুজ্জামান পায়েল, শামিম মিয়া, তোফায়েল আহমেদরা।
হারের বৃত্তে রূপগঞ্জ টাইগার্স
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবকে ৬ উইকেটে হারায় গুলশান ক্রিকেট ক্লাব। ২২৯ রানের লক্ষ্য ১৯ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলে তরুণ ও নবীন ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া দলটি।
জয়ে আসর শুরুর পর টানা দুই ম্যাচ হেরেছিল গুলশান। এই ম্যাচ দিয়ে জয়ে ফিরল তারা। লিগের একমাত্র দল হিসেবে চার ম্যাচের সবকটিই হারল রূপগঞ্জ টাইগার্স।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে তেমন সুবিধা করতে পারেনি রূপগঞ্জ টাইগার্স। ওপেনার অমিত মজুমদার ছাড়া আর কেউই বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকতে পারেননি।
৩২তম ওভারে ড্রেসিং রুমে ফেরার আগে ১০ চার ও ১ ছক্কায় ১১০ বলে ৮৮ রান করেন অমিত। দুইশর আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে যায় তারা।
আট নম্বরে নেমে আরিফুল হকের ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৫ বলে ৪০ রানের ইনিংসে দুইশ পার করে তারা।
গুলশানের পক্ষে ৫৩ রানে ৪ উইকেট নেন পায়েল।
রান তাড়ায় দলকে উড়ন্ত শুরু এনে দেন আজিজুল হাকিম ও জাওয়াদ আবরার। দুজন মিলে মাত্র ৮৬ বলে যোগ করেন ৯৫ রান। প্রথম তিন ম্যাচে হতাশ করা আজিজুল এবার খেলেন ৩৭ বলে ৪০ রানের ইনিংস।
বর্তমান অনূর্ধ্ব-১৯ অধিনায়কের বিদায়ের আগেই ফিফটি করেন যুবাদের ওপেনার জাওয়াদ। তবে ইনিংস বেশি দূর টেনে নিতে পারেননি তিনি। লিগে নিজের দ্বিতীয় ফিফটিতে ৭৫ বলে ৬৭ রান করেন তরুণ ব্যাটসম্যান।
দারুণ শুরুর পর জয়ের জন্য আর বেগ পায়নি গুলশান। তিন নম্বরে নামা খালিদ হাসান ৪৩ রান করেন। পরে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন ইফতেখার হোসেন ও হাবিবুর শেখ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২২৮/৯ (মজিদ ৩, অমিত ৮৮, মইনুল ১২, মাহমুদুল ২৩, আল আমিন ২৮, তানবীর ০, ফয়সাল ১২, আরিফুল ৪০, হুসনা হাবিব ৬, এনামুল ১*, ফাহাদ ১*; মেহেদি ১০-০-৩২-১, ফরহাদ ৪-০-১৯-১, আজিজুল ৫-০-২২-০, পায়েল ১০-০-৫৩-৪, ইফতেখার ২-০-৯-০, নাঈম ৭-০-৩০-০, ইলিয়াস ২-০-১৫-০, নিহাদ উজ জামান ১-০-৪৫-৩)
গুলশান ক্রিকেট ক্লাব: ৪৬.৫ ওভারে ২৩২/৪ (জাওয়াদ ৬৭, আজিজুল ৪০, খালিদ ৪৩, নাঈম ২১, ইফতেখার ২৫*, হাবিবুর ২৪*; ফাহাদ ৬-০-৩২-১, এনামুল ৪.৫-০-৩২-০, মাহমুদুল ৯-১-৪৭-৩, হুসনা হাবিব ১০-১-৪০-০, মইনুল ৭-০-৪৮-০, ফয়সাল ১০-০-৩১-০)
ফল: গুলশান ক্রিকেট ক্লাব ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আসাদুজ্জামান পায়েল
এনামুল-সাদিকুরের ঝড়ো ফিফটি
শামিম মিয়া ও তোফায়েল আহমেদের দারুণ বোলিংয়ে বেশি দূর যেতে পারেনি শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব। ছোট লক্ষ্যে ঝড় তোলেন সাদিকুর রহমান ও এনামুল। অনায়াসে জিতে যায় গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স।
বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে শাইনপুকুরকে ৮ উইকেটে হারায় গাজী গ্রুপ। ১৬২ রানের লক্ষ্য মাত্র ১৭.৫ ওভারেই ছুঁয়ে ফেলে এনামুলের নেতৃত্বাধীন দল।
চার ম্যাচে গাজী গ্রুপের এটি তৃতীয় জয়। পয়েন্ট টেবিলের তিন নম্বরে উঠেছে তারা। সমান ম্যাচে শাইনপুকুরের জয় স্রেফ একটি।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই নিয়মিত উইকেট হারায় শাইনপুকুর। দশম উইকেট জুটিতে আসে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৩৩ রান। আট নম্বরে নেমে ৪৬ রান করে দলকে দেড়শ পার করান জুবায়ের হোসেন।
গাজী গ্রুপের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নেন শামিম ও তোফায়েল। ১০ ওভারে ৪ মেডেনসহ মাত্র ১৭ রানে ২ উইকেট শিকার করেন আবু হাশিম।
রান তাড়ায় ম্যাচটিকে যেন টি-টোয়েন্টি বানিয়ে ফেলেন সাদিকুল ও এনামুল। মাত্র ৯ ওভারে ৯২ রানের জুটি গড়েন দুই ওপেনার। ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৩০ বলে ৫০ রান করে আউট হন সাদিকুর।
পরের ওভারে একই পথ ধরেন এনামুল। ৮ চারের সঙ্গে ২ ছক্কায় তিনি করেন ২৭ বলে ৫২ রান।
পরপর দুই ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়ে লিগ শুরুর পর এনামুলের এটি টানা দ্বিতীয় ফিফটি। তবে দুই ম্যাচেই ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ তিনি। আগের রাউন্ডে ৬৯ রানে আউট হন গাজী গ্রুপ অধিনায়ক।
দুই ওপেনারের বিদায়ের পর ৫০ বলে ৬০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন সালমান হোসেন ও শামসুর রহমান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ৪৫.২ ওভারে ১৬১ (রহমতউল্লাহ ৯, মইনুল ১৬, অনিক ২৯, রহিম ৫, রাফসান ২৬, ফারজান ০, কিবরিয়া ১২, জুবায়ের ৪৬, রাফি ৬, ফাহাদ ৫, মাসুম ০*; হাশিম ১০-৪-১৭-২, আরিদুল ১০-১-৪২-০, শামিম ৯-৩-২২-৩, সাকলাইন ৩.২-০-৭-১, পারভেজ ৮-০-৪০-১, তোফায়েল ৪-০-২৪-৩, শামসুর ১-০-৪-০)
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ১৭.৫ ওভারে ১৬২/২ (সাদিকুর ৫০, এনামুল ৫২, সালমান ২৩*, শামসুর ৩৩*; ফাহাদ ৩-০-৩৭-১, রাফি ৬-০-৪২-১, রহিম ২-০-৩০-০, মাসুম ৪-০-৩১-০, রহমতউল্লাহ ১-০-১০-০, রাফসান ১.৫-০-১০-০)
ফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: শামিম মিয়া
রবিউলের তোপে অগ্রণী ব্যাংকের জয়
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাবকে ৫ উইকেটে হারায় অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। ধানমন্ডিকে মাত্র ১১৫ রানে গুঁড়িয়ে ৬৭ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জেতে এবার প্রিমিয়ার লিগে ফেরা দলটি।
চার ম্যাচে অগ্রণী ব্যাংকের এটি তৃতীয় জয়। সমান ম্যাচে দুটি করে জয়-পরাজয় ধানমন্ডির।
মাত্র ১৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের জয়ের বড় কারিগর রবিউল হক। এছাড়া দুই বাঁহাতি স্পিনার আরিফ আহমেদ ও তাইবুর রহমান নেন ২টি করে উইকেট।
সাত নম্বরে নামা মইন খানের ৩৫ রানের সৌজন্যে কোনোমতে একশ করতে পারে ধানমন্ডি।
ছোট লক্ষ্যে মাত্র ২৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছিল অগ্রণী ব্যাংক। তবে অপরাজিত ৫১ রানের ইনিংসে দলের জয় নিশ্চিত করেন মার্শাল আইয়ুব। ৯২ বলের ইনিংসে ৬ চার ও ১ ছক্কা মারেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব: ৩৩.৫ ওভারে ১১৫ (আশিকুর ২, জাকিরুল ১৯, ফজলে মাহমুদ ১, ইয়াসির ১, সানজামুল ১৮, সোহান ২২, মইন ৩৫, জিয়াউর ২, এনামুল ৪, কামরুল ০*, মুরাদ ০; রবিউল ৫.৫-০-১৪-৪, আরিফ ৯-৪-১১-২, নাঈম ৬-০-২৯-১, রুয়েল ৩-০-৭-০, শুভাগত ৫-০-২৪-১, তাইবুর ৫-০-২৪-২)
অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৩৮.৫ ওভারে ১২০/৫ (ইমরানউজ্জামান ১১, সাদমান ১৮, ইমরুল ০, অমিত ২, মার্শাল ৫১*, তাইবুর ২২, শুভাগত ৯*, এনামুল ১০-১-২৫-১, কামরুল ১-০-৩-০, মুরাদ ১০-২-৩০-২, মইন ৯-৩-১৯-১, সানজামুল ৫.৫-০-৩৪-০, ফজলে মাহমুদ ৩-০-৮-১)
ফল: অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রবিউল হক