খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ফরচুন বরিশালের রোমাঞ্চকর জয়ে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন বিভাগেই দারুণ অবদান রেখেছেন রিশাদ হোসেন।
Published : 23 Jan 2025, 10:14 AM
জাহান্দাদ খানের শর্ট বল পুল করে তড়িঘড়ি করে দুই রানের জন্য ছুটলেন মাহিদুল ইসলাম। ডিপ মিড উইকেট থেকে ডান দিকে অনেকটা দৌড়ে এক হাতে বল ধরলেন রিশাদ হোসেন। দৌড় না থামিয়েই করা থ্রো করে দিলেন তিনি। মাপা থ্রো, ঠিক স্টাম্পের ওপর। বল ধরে স্টাম্প ভাঙার আনুষ্ঠানিকতা সারতে সমস্যাই হলো না মুশফিকুর রহিমের। মাহিদুল তখনও ক্রিজের কাছাকাছিও নেই।
ম্যাচ শেষে খুলনা টাইগার্সের ব্যাটিং কোচ নাসিরউদ্দিন ফারুক বললেন, এই রান আউটের চড়া মূল্য দিতে হয়েছে তাদের। যেটি সম্ভব হয়েছে মূলত রিশাদের দারুণ দক্ষতায়। ওই রান আউট করার আগে বোলিং-ব্যাটিংয়েও বড় অবদান রেখেছেন রিশাদ। তিন বিভাগে দারুণ পারফর্ম করেই ফরচুন বরিশালকে জিতিয়েছেন তরুণ লেগ স্পিনার।
গত বছরের মে মাসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে সংবাদমাধ্যমে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং মিলিয়ে তার দলের ‘কমপ্লিট প্যাকেজ’ রিশাদ। বিপিএলের এই ম্যাচটিতে সেই কথা অক্ষরে অক্ষরেই যেন মিলিয়ে দিলেন ২২ বছর বয়সী লেগ স্পিনার।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে বুধবার দুর্দানত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে বিপিএলে প্রথমবার ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি পান রিশাদ। ব্যাট হাতে ১৯ বলে ৩৯ রানের পর বোলিংয়ে তিনি নিয়েছেন এক উইকেট। এরপর ফিল্ডিংয়ে ওই রানআউট।
টস হেরে ব্যাটিং নেমে বরিশালের ব্যাটিংয়ের অবস্থা ছিল বেশ নাজুক। আট নম্বরে ব্যাটসম্যান হিসেবে রিশাদ যখন ক্রিজে যান, স্কোরবোর্ডে রান ১৩ ওভারে মাত্র ৮৭। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে মিলে পরের ওভার দেখেশুনে কাটিয়ে দেন রিশাদ।
এরপর শুরু হয় ঝড়। খুলনার বোলারদের উল্টো স্বাদ উপহার দিয়ে শেষ ৬ ওভারে ৭৬ রান যোগ করে বরিশাল। যেখানে রিশাদের অবদান ১৬ বলে ৩৭ রান। জিয়াউর রহমানের বলে টানা তিন চার মেরে তার যাত্রা শুরু। পরে আমের জামালের বলে মারেন বাউন্ডারি। জিয়ার পরের ওভারে চারের পর ওড়ান ছক্কা।
ইনিংসের শেষ ওভারে রান আউটে থামে রিশাদের ইনিংস। ওপরের সারির ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় একপর্যায়ে কোনো রকমে একশ পেরোনোর আশায় থাকা বরিশাল মূলত রিশাদের ক্যামিওর সৌজন্যেই পায় ১৬৭ রানের পুঁজি।
পরে খুলনার ইনিংসে দ্বাদশ ওভারে আক্রমণে আনা হয় রিশাদকে। মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও অ্যালেক্স রসের সামনে খরচ করেন মাত্র ৫ রান। পরের ওভারের প্রথম বলেই তিনি বিদায় করে দেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান রসকে, স্পিনের বিপক্ষে দক্ষ হিসেবে যার পরিচিতি আছে।
এরপর অবশ্য আর বোলিং পাননি। দ্বিতীয় ওভারে আফিফ হোসেনের কাছে একটি করে চার-ছক্কা হজম করায় কিছুটা খরুচে হয় তার বোলিং বিশ্লেষণ। সেটি পুষিয়ে দেন ফিল্ডিংয়ে, ড্রেসিং রুমের পথ দেখান বিপজ্জনক মাহিদুলকে।
গত বছর মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতেও এমন অলরাউন্ড পারফর্ম করেন রিশাদ। বল হাতে ২ উইকেটের সঙ্গে করেন একটি রান আউট। পরে ব্যাটিংয়ে ৭ ছক্কায় খেলেন ৫৩ রানের ইনিংস। তবে সেদিন দলকে জেতাতে পারেননি তিনি।
দশ মাস পর এবার বিপিএলে সব কিছুতেই অবদান রেখে দলকে জেতানোয় তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার। স্বীকৃতি গ্রহণ করে ছোট্ট প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, নিজের সামর্থ্যে আস্থা রেখেই পেয়েছেন ফল।
“নিজের প্রতি ধৈর্য্য ও বিশ্বাস রেখেছিলাম। নিজের শক্তিমত্তার বাইরে যাইনি। চেষ্টা করেছি দলকে কীভাবে ব্যাটিংয়ে সাহায্য করা যায়।”
সাত ওভার বাকি থাকতে ক্রিজে গিয়ে সঙ্গী হিসেবে মাহমুদউল্লাহকে পান রিশাদ। চাপ দূর করতে পাল্টা আক্রমণের পথ ধরে দুজন মিলে গড়ে তোলেন ২৮ বলে ৪৭ রানের জুটি। যেখানে রিশাদের অবদান ১৫ বলে ২৯ রান।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে নিজের ব্যাটিংয়ের পুরো কৃতিত্ব মাহমুদউল্লাহকেই দেন তরুণ লেগ স্পিনার।
“আমি শুধু নিজের পরিকল্পনায় ছিলাম। (মাহমুদউল্লাহ) রিয়াদ ভাই ছিলেন, অনেক সহায়তা করেছেন। তিনি বলছিলেন, নিজের শক্তিতে থাকতে, ভালো বল সম্মান দেখাতে এবং বাজে বল মেরে দিতে।”
“আসলে কোনো কিছু নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে যাইনি। রিয়াদ ভাই সঙ্গে ছিলেন। তিনি শুধু বলেছিলেন, কখন কী করতে হবে। তো এখানে আগের থেকে কী হবে না হবে, সেসব পরিকল্পনা করার কিছু নেই।”
রিশাদের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে খুলনার ব্যাটিং কোচ বলেন, মাহিদুলের রান আউট তাদের জন্য বড় ধাক্কা ছিল। পরে রিশাদ জানালেন, এটা তার অধ্যাবসায়ের ফসল।
“আসলে সীমানায় ফিল্ডিং করলে এরকম সুযোগ কয়েকটা আসে। (দৌড়ে) ধরে ফেলতে পেরেছি, এজন্য অ্যাডজাস্ট করে (থ্রো) মেরে দিয়েছি আর কী।”
“এসবের জন্য ফিল্ডিং অনুশীলন একটু ভিন্ন হয়... আক্রমণাত্মক, যেহেতু সীমানায় ফিল্ডিং করি। স্লগ ওভারে সীমানায় ফিল্ডিং করলে একটু আক্রমণাত্মক ও আগ্রাসী থাকতে হয়।”