ভারত-নিউ জিল্যান্ড সিরিজ
নিউ জিল্যান্ডের পেসারদের দুর্দান্ত বোলিং আর ফিল্ডারদের অসাধারণ ক্যাচিংয়ে দেশের মাঠে সবচেয়ে কম রানে গুটিয়ে যাওয়ার রেকর্ড গড়ল ভারত।
Published : 17 Oct 2024, 02:02 PM
ধারাভাষ্যে হার্শা ভোগলে বললেন, “দয়া করে চোখ কচলাবানে না, যা দেখছেন, সেটিই সত্যি…।” টিভি পর্দায় চোখ রাখলে তবু বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ঘোরে পড়ে যেতে পারেন অনেকেই। আসলে কী ভারতের স্কোরকার্ড এটি!
ঘোর থাকলেও ইতিহাস গড়া হয়েই গেছে। ভারতের প্রবল পরাক্রমশালী ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে পড়েছে তাসের ঘরের মতো। কিউই পেসারদের নিখুঁত লাইন-লেংথ, দুর্দান্ত সুইং ও সিম বোলিং আর ফিল্ডারদের অসাধারণ ক্যাচে দেশের মাঠে সবচেয়ে কম রানে গুটিয়ে গেছে রোহিত শার্মার দল।
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে বেঙ্গালুরু টেস্টের প্রথম ইনিংসে বৃহস্পতিবার ৪৬ রানেই অলআউট ভারত।
সেই ১৯৩৩ সাল থেকে টেস্ট ক্রিকেট আয়োজন করছে ভারত। ইতিহাসে এই প্রথম তাদের মাঠে কোনো দল পঞ্চাশের নিচে গুটিয়ে গেল। আগের সর্বনিম্ন ছিল ২০২১ সালে নিউ জিল্যান্ডের ৬২।
১৫ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ভারতের মূল হন্তারক ম্যাট হেনরি। টেস্ট ক্যারিয়ারের দারুণ শুরু করা উইল ও’রোকের শিকার ২২ রানে ৪ উইকেট।
ভারতের প্রথম আট ব্যাটসম্যানের পাঁচজনই ফেরেন শূন্য রানে।
দেশের মাঠে ভারতের আগের সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর ছিল ১৯৮৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দিল্লিতে ৭৫ রান।
দেশ-বিদেশ মিলিয়ে টেস্টে ভারতের তৃতীয় সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ এটি। ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাডিলেইডে তারা গুটিয়ে গিয়েছিল ৩৬ রানে, ১৯৭৪ সালে লর্ডসে তাদের ইনিংস থেমেছিল ৪২ রানে।
তবে এবার দেশের মাঠে ভারতের এমন ব্যাটিং ধস একদমই অভাবনীয়। সবশেষ টেস্টে কানপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে বৃষ্টিতে আড়াই দিনের বেশি ভেসে যাওয়ার পরও চমকপ্রদ বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ম্যাচ জিতে নিয়েছিল তারা। সেই দল এবার দেখাল উল্টো চিত্র।
ম্যাচের প্রথম দিন ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু হয় মেঘলা আকাশের নিচে। উইকেটও ছিল কিছুটা স্যাঁতস্যাঁতে। রোহিত তবু টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেন। নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টেস্টে টস জিতে ব্যাটিং নিতেন টম ল্যাথামও।
ভারতের দুঃস্বপ্নের শুরু হয় রোহিতকে দিয়েই। নেতৃত্ব হারানোর পর প্রথম টেস্ট খেলতে নামা টিম সাউদি স্বপ্নের মতো এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন ভারতীয় অধিনায়ককে। বলটি পিচ করে এতটা ভেতরে ঢোকে যে, কোনো অফ স্পিনারকেও চমকে দিতে পারে তা।
শুবমান গিল না থাকায় আট বছরের বেশি সময় পর তিন নম্বরে নামেন ভিরাট কোহলি। তাকে শূন্য রানে ফিরিয়ে শিকার শুরু করেন ও’রোক।
কোহলির টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৫তম শূন্য সেটি। সবশেষ এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল তার তিন বছর আগে ট্রেন্ট ব্রিজে।
পরের ওভারেই ম্যাট হেনরি ফেরান সারফারাজ খানকে। মিড অফে ঝাঁপিয়ে এক হাতে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন ডেভন কনওয়ে। ফিট না থাকা গিলের জায়গায় একাদশে ফেরা ব্যাটসম্যান রানের দেখা পাননি।
তিন সপ্তাহ আগে কানপুরে তিন ওভারে ফিফটি করে ফেলা ভারত এবার প্রথম ১২ ওভারে বাউন্ডারিই মারতে পারেনি।
বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ থাকে আবার। বৃষ্টি শেষে খেলা শুরু হলে উইকেটের বৃষ্টিও শুরু হয় আবার।
এজাজ প্যাটেলের দারুণ ক্যাচে বিদায় নেন ইয়াসাসভি জয়সওয়াল। কানপুরে ৫১ বলে ৭২ রান করা ব্যাটসম্যান এবার ১৩ রান করেন ৬৩ বল খেলে।
এক প্রান্তে রিশাভ পান্ত টিকে থাকলেও আরেক প্রান্তে একের পর এক উইকেট পড়তে থাকে। রান করতে পারেননি লোকেশ রাহুল, বাজে শটে ফেরেন রাভিন্দ্রা জাদেজা, প্রথম বলেই আউট রাভিচান্দ্রান অশ্বিন।
পান্তের লড়াই শেষ হয় ৪৯ বলে ২০ রান করে। ভারতের কিপার-ব্যাটসম্যানকে ফেরানোর পর হেনরি অসাধারণ এক ক্যাচে আউট করেন জাসপ্রিত বুমরাহকে।
উইল ও’ রোক ও ম্যাট হেনরি, দুজনেরই উইকেট তখন চারটি করে। কুলদিপ ইয়াদাভকে ফিরিয়ে পঞ্চম শিকার ধরার পাশাপাশি টেস্টে একশ উইকেটও পূর্ণ করেন হেনরি। এবার চোখধাঁধানো ক্যাচ নেন বদলি ফিল্ডার মাইকেল ব্রেসওয়েল।
বেঙ্গালুরুর দর্শকদের হতভম্ব করে ভারত থমকে যায় ৪৬ রানে।