জো রুটকেই ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান মনে করেন আরেক কিংবদন্তি অ্যালেস্টার কুক।
Published : 01 Sep 2024, 11:16 AM
সেঞ্চুরি সংখ্যায় যখন ইংল্যান্ডের চূড়ায় উঠে গেলেন জো রুট, বিবিসি টেস্ট ম্যাচ স্পেশালে ধারাভাষ্যে তখন অ্যালেস্টার কুক। রেকর্ডটি আগে তারই ছিল। কিন্তু রুটের মতো একজনের কাছে রেকর্ড হারানোয় কোনো আক্ষেপ তার নেই। বরং উত্তরসূরীকে স্তুতিতে ভাসিয়ে ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক বললেন, রুটই ইংল্যান্ডের সবসময়ের সেরা ব্যাটসম্যান।
গৌরবময় পথচলায় ইংল্যান্ডের ব্যাটিং রেকর্ডের অনেকগুলোই নিজের করে নিয়েছেন রুট। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লর্ডস টেস্টেও নিজেকে তিনি নিয়ে গেছেন নতুন উচ্চতায়। প্রথম ইনিংসে তিনি সেঞ্চুরি সংখ্যায় স্পর্শ করেন কুকের ৩৩ সেঞ্চুরির রেকর্ড। পরের ইনিংসেই আরেকটি সেঞ্চুরিতে ছাড়িয়ে যান পূর্বসূরীকে।
২৬৫ ইনিংসে ৩৪ সেঞ্চুরি রুটের। কুকের ৩৩ সেঞ্চুরি ছিল ২৯১ ইনিংসে।
সেঞ্চুরিতে সবার ওপরে ওঠার পর টেস্ট রানেও এখন ইংল্যান্ডের সফলতম হওয়া স্রেফ সময়ের ব্যাপার তার জন্য। কুকের ১২ হাজার ৪৭২ রানের রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে আর কেবল ৯৬ রান লাগবে তার।
তবে ক্রিকেট খেলাটিই এমন যে, পরিসংখ্যানই সবকিছু নয়। রান আর সেঞ্চুরিতে সবার ওপরে মানেই তিনি সবার চেয়ে ভালো নাও হতে পারেন। সফলতম মানেই এখানে সেরা নয়। ইংল্যান্ডের সুদীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ক্রিকেট ইতিহাসে কত কত কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান আছেন!
জ্যাক হবস, হার্বাট সাটক্লিফ, ডেনিস কম্পটন, লেন হাটন, ওয়ালি হ্যামন্ড, কেন বেরিংটন, জেফ বয়কট, গ্রাহাম গুচ, কেভিন পিটারসেন, অ্যালেস্টার কুক… তালিকা চলতেই থাকবে। সেরার বিতর্কে কোনো সমাধানে পৌঁছানো কঠিন।
তবে অ্যালেস্টার কুকের মনে কোনো সংশয় নেই।
“সে স্রেফ অবধারিতই ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা। এই রেকর্ডটি তার নিজের করে নেওয়াই একদম উপযুক্ত। আমরা একজন জিনিয়াসকে দেখছি।”
“জো রুট যে ধরনের একটা অনুভূতি ছড়িয়ে দেয় যে, অবধারিতভাবে সে রান করতেই, আমার মনে হয় না আর কোনো ব্যাটসম্যানকে এতটা নিশ্চয়তা নিয়ে খেলতে দেখেছি। আজকে তার রান যখন ৬, তখনই বলেছি যে, সে সেঞ্চুরি করবে। জানি, সে খুব ভালো ফর্মে আছে। তবে এমনিতেই এমন একজন মাস্টার ও কারিগরকে তার কাজ করতে দেখাটা দারুণ তৃপ্তির।”
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরের টেস্টে রানের তালিকায়ও রুট ইংল্যান্ডের সবার ওপরে উঠে যাবেন বলে বিশ্বাস কুকের।
“আগামী সপ্তাহে স্রেফ শেষ কাজটুকু করতে হবে তাকে। যে ধরনের ফর্মে সে আছে, এটা করতে না পারার কোনো কারণ দেখি না।”
বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই ইংলিশ ক্রিকেটে সাড়া জাগান রুট। দারুণ সম্ভাবনাময় একজন ব্যাটসম্যান উঠে আসছে বলে তখন তার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছিল।
সেই সময়টায় ফিরে গেলেন কুক। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে রুটের অভিষেক ম্যাচটির কথাও মনে পড়ে তার। কুকের এসেক্সের বিপক্ষেই ইয়র্কশায়ারের হয়ে ওপেন করতে নেমে ৯৫ বলে ৬৩ রান করেছিলেন ১৮ বছর বয়সী রুট।
প্রথম দেখায় সেই তরুণকে বিশেষ কিছু মনে হয়নি, অকপটেই বললেন কুক।
“সে স্কয়ারে বল পাঠাতেই পারছিল না। সবাই বলাবলি করছিল, সে ভালো ব্যাটসম্যান। কিন্তু আমার তেমন কিছু মনে হয়নি।”
তবে সেই রুট উন্নতির পথ ধরে দ্রুতই ছুটে যান সামনে। তিন বছর পরই কুকের নেতৃত্বে ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট অভিষেক হয়ে যায় তার।
সেই সময়ের রুটকে দেখে চমকে যান তখনকার ইংল্যান্ড অধিনায়ক। কুকের দাবি, তখনই তিনি বলেছিলেন যে, এই ব্যাটসম্যান একদিন গ্রেট হয়ে উঠবে।
“তখন আমি এমন একজনকে দেখছিলাম, মানসিকভাবে যে টেস্ট খেলার জন্য তৈরি। একমাত্র দেখার ব্যাপার ছিল, প্রথমবার ব্যাট করতে নেমে সে কীভাবে সামলায়। ম্যাচ তখনও ভারসাম্যপূর্ণ ছিল। ইংল্যান্ডের ক্যাপ মাথায় সে ব্যাট করতে নামল, দেখে মনে হচ্ছিল ১৩ বছর বয়সী কেউ, মুখে ছিল চওড়া হাসি।”
“প্রথম কয়েকটি বল তাকে খেলতে দেখেই মনে হলো, ‘এই ছেলে থাকতেই এসেছে।’ সত্যিই বলেছিলাম, ‘সে ১০ হাজার রান করবে।’ মনে করতে পারছি না কাকে এটা বলেছিলাম। তবে আমি বলেছিলাম এবং জানতাম।”
অভিষেক ইনিংসে ভারতের বিপক্ষে নাগপুরে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন রুট। ক্যারিয়ারের প্রথম ৫৩ টেস্ট তিনি খেলেন কুকের নেতৃত্বে। ক্রমেই দলের ভরসা হয়ে ওঠেন তিনি। বিশ্ব ক্রিকেটেও হয়ে ওঠেন বড় নাম। দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন দীর্ঘদিন। রান ও সেঞ্চুরির স্রোতে ভাটার টানও এসেছে কিছুটা। পরে তা কাটিয়ে উঠেছেন।
একসময় ফিফটিকে সেঞ্চুরি বা বড় সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে না পারার দায় ছিল তাকে নিয়ে। এখন সব পেছনে ফেলে রান ও সেঞ্চুরির জোয়ার বইয়ে দিচ্ছেন।