ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে জন্মদিনে ৫ উইকেট শিকার করলেন রাশিদ খান, দক্ষিণ আফ্রিকাকে রেকর্ড ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে আফগানিস্তানের স্মরণীয় সিরিজ জয়।
Published : 21 Sep 2024, 10:59 AM
‘হ্যামস্ট্রিং খুব ভোগাচ্ছিল। তবে মাঠে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি এবং দলের জন্য সেরাটা দিতে চেয়েছি। বড় দলের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের এমন সুযোগ, আমাকে মাঠে থাকতেই হতো’- ম্যান অব দা ম্যাচের পুরস্কার নিয়ে যখন বলছিলেন রাশিদ খান, তার চোখেমুখে খেলা করছিল উচ্ছ্বাস, তৃপ্তি আর গর্ব। হ্যামস্ট্রিংয়ের সমস্যাকে হারিয়ে অসাধারণ বোলিংয়ে ৫ উইকেট শিকার করেছেন, দলকে এনে দিয়েছেন বিশাল জয়, এমন প্রতিক্রিয়াই হওয়ার কথা।
দিনটি স্পেশাল আরও একটি কারণে। এ দিন ছিল তার জন্মদিন। ২৬ পূর্ণ করলেন আফগানদের সবচেয়ে বড় তারকা। জন্মদিনের উপহার তিনি শুধু নিজেকেই দিলেন না, দেশকেও এনে দিলেন নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের স্মরণীয়তম জয়।
আগের ম্যাচে আফগানি বোলিংয়ে বিধ্বস্ত হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার ব্যাটে-বলে প্রোটিয়াদের স্রেফ নাকানিচুবানি খাইয়ে ছাড়ল আফগানরা। শারজাহতে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয়টিতে শুক্রবার ১৭৭ রানের রেকর্ড গড়া জয়ে তারা নিশ্চিত করে ফেলল সিরিজ জয়।
আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ পাঁচে থাকা কোনো দলের বিপক্ষে আফগানদের প্রথম সিরিজ জয় এটি।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে আফগানিস্তান তোলে ৫০ ওভারে ৩১১ রান।
১০ চার ও ৩ ছক্কায় ১১০ বলে ১০৫ রান করেন রাহমানউল্লাহ গুরবাজ। সপ্তম সেঞ্চুরিতে আফগানিস্তানের হয়ে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ড নিজের করে নেন এই ওপেনার।
৮৪ ইনিংসে ছয় সেঞ্চুরিতে আগের রেকর্ড ছিল মোহাম্মদ শাহজাদের। গুরবাজ তাকে ছাড়িয়ে গেলেন অর্ধেক (৪২) ইনিংস খেলেই।
তিনে নেমে ফিফটি করেন রেহমাত শাহ। পরে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৫০ বলে ৮৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন আজমাতউল্লাহ ওমারজাই।
রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে যায় কেবল ১৩৪ রানেই।
২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৫৪ রানের জয়কে পেছনে ফেলে আফগানদের সবচেয়ে বড় জয় এখন এটিই।
১৯ রানে পাঁচ উইকেট শিকার করেন রাশিদ। ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে জন্মদিনে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন আফগান জাদুকর।
ওয়ানডেতে তার পঞ্চম পাঁচ উইকেট এটি। তবে এবারেরটি এলো ছয় বছরের বিরতির পর। ২০১৭ সালে তিনি দুবার নিয়েছিলেন ম্যাচে পাঁচ উইকেট, ২০১৮ সালে দুবার। আলাদা করে বলতে হবে নানগেলিয়া খারোটের কথাও। ২০ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনারের প্রাপ্তি ২৬ রানে চার উইকেট। তিন ওয়ানডে খেলেই দুবার চার উইকেট পেয়ে গেলেন প্রতিভাবান এই স্পিনার।
টস জিতে আফগানরা যখন ব্যাটিংয়ে নামে, শারজাহতে তাপমাত্র তখন ৩৮ ডিগ্রি। তবে অনুভূত হচ্ছিল ৪৮ ডিগ্রির মতো। সেই গরমে প্রোটিয়া বোলাররা খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি।
উদ্বোধনী জুটিতে গুরবাজ ও রিয়াজ হাসান তোলেন ৮৮ রান। ৪৫ বলে ২৯ রান করে আউট হন রিয়াজ। দ্বিতীয় উইকেটে গুরবাজ ও রেহমাত যোগ করেন ১০১ রান।
দারুণ খেলতে থাকা গুরবাজ একটু থমকে যান শতরানের কাছে গিয়ে। নব্বইয়ে ১৭ বল আটকে থাকেন তিনি, ৯৯ রানে খেলেন সাত বল। সেই চাপ কাটিয়ে তিন অঙ্কে পা রাখেন ঠিকই। তবে এরপর বেশিক্ষণ টেকেননি।
৬৩ বলে ফিফটি করা রেহমাত আউট হয়ে যান আর কোনো রান না করেই। তাকে ফিরিয়ে প্রথম উইকেটের স্বাদ পান অভিষিক্ত লেগ স্পিনার নাবাইয়োমজি পিটার।
এরপর ওমারজাইয়ের ঝড়। ফিফটি করেন তিনি ৩২ বলে। আরেকপ্রান্তে মোহাম্মদ নাবি (১৯ বলে ১৩) ও রাশিদ খান (১২ বল ৬) দ্রুত রান তুলতে পারেননি। তবে ওমারজাইয়ের সৌজন্যে ঠিকই শেষ ১০ ওভারে ৯৩ রান তোলে আফগানিস্তান।
পাঁচটি চার ও ছয় ছক্কায় ৫০ বলে ৮৬ রানে অপরাজিত থাকেন ওমারজাই।
রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভালো শুরু এনে দেন টেম্বা বাভুমা ও টনি ডি জর্জি। ৭৩ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন দুজন। ওমারজাইয়ের বলে পুল করার চেষ্টায় বাভুমার বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। আগের ম্যাচে চোটের কারণে খেলতে না পারা প্রোটিয়া অধিনায়ক ফেরেন ৩৮ রান করে।
ডি জর্জিকে ৩১ রানে বিদায় করে শিকার শুরু করেন রাশিদ। রিজা হেনড্রিকসকে ১৭ রানে বোল্ড করে প্রথম উইকেট পান খারোটে।
এরপর এই দুই স্পিনারের সামনে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে প্রোটিয়া ব্যাটিং। চারে নেমে অনেকটা সময় এক প্রান্ত আগলে রাখা এইডেন মার্করামকে (২১) বোল্ড করে রাশিদ পূর্ণ করেন পাঁচ উইকেট।
অবিশ্বাস্যভাবে, দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ সাত ব্যাটসম্যানের কেউ পাঁচ রানের বেশি করতে পারেননি!
৬৩ রানের মধ্যে ১০ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। আগের ম্যাচে তারা ৩৩.২ ওভার খেলে ১০৬ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল। এবার তাদের ইনিংস শেষ ৩৪.২ ওভারে।
ম্যাচ শেষে আফগান অধিনায়ক হাশমাতউল্লাহ শাহিদির উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া, “আমরা এখানে খুশি, দেশে গোটা জাতি খুশি। সবাইকে অভিনন্দন।” আর প্রোটিয়া অধিনায়ক বাভুমা ম্রিয়মান কণ্ঠে বললেন, “মোটেও ভালো খেলতে পারিনি আমরা। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে যতটা সম্ভব ইতিবাচক থাকতে হবে।”
সিরিজের শেষ ম্যাচ রোববার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ৫০ ওভারে ৩১১/৪ (গুরবাজ ১০৫, রিয়াজ ২৯, রেহমাত ৫০, ওমারজাই ৮৬*, নাবি ১৩, রাশিদ ৬*; এনগিডি ১০-০-৫০-১, বার্গার ১০-০-৬৮-১, ফোরটান ১০-১-৩৯-০, পিটার ১০-০-৬৮-১, মার্করাম ৪-০-২০-১, মুল্ডার ৬-০-৫৪-০)।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩৪.২ ওভারে ১৩৪ (বাভুমা ৩৮, ডি জর্জি ৩১, হেনড্রিকস ১৭, মার্করাম ২১, স্টাবস ৫, ভেরেইনা ৬, মুল্ডার ২, ফোরটান ০, পিটার ৫, বার্গার ১*, এনগিডি ৩, ফারুকি ৪-০-১৮-০, গাজানফার ৫-০-২৩-০, নাবি ৭-০-২৯-০, নাবি ৩-০-১৭-১, রাশিদ ৯১-১৯-৫, খারোটে ৬.২-০-২৬-৪)।
ফল: আফগানিস্তান ১৭৭ রানে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে আফগানিস্তান ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: রাশিদ খান।