রিজওয়ানের ‘হ্যাটট্রিক’ ফিফটিতে কুমিল্লার টানা সাত

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে হারিয়ে সেরা দুইয়ে ওঠার সম্ভাবনা জোরাল করল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Feb 2023, 09:46 AM
Updated : 4 Feb 2023, 09:46 AM

টুর্নামেন্টের শুরুতে জয়ের খোঁজে হাপিত্যেশ করা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এখন যেন অজেয় হয়ে গেছে। পরপর তিন হারে আসর শুরুর পর টানা সাত ম্যাচ জয় পেল বিপিএলের শিরোপাধারীরা।

শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা। ১৫৭ রানের লক্ষ্য ৬ বল হাতে রেখেই টপকে গেছে ইমরুল কায়েসের দল।

কুমিল্লার জয়রথে বড় অবদান মোহাম্মদ রিজওয়ানের। টানা তৃতীয় ফিফটিতে ৪৭ বলে ৬১ রানের ইনিংস খেলেন পাকিস্তানি কিপার-ব্যাটার। তার হাতেই উঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

এই ম্যাচসহ প্রথম পর্বে বাকি ছিল ৮টি খেলা। কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে এত ম্যাচ বাকি থাকতেই শেষ চার দল চূড়ান্ত হওয়া অভাবনীয়ই বটে। যে কারণে বাদ পড়া তিন দলের জন্য বাকি সবগুলো ম্যাচ স্রেফ নিয়মরক্ষার।

এর প্রভাব পড়েছে দর্শক আগ্রহেও। শুক্রবার প্রায় ঠাসা ছিল শের-ই বাংলার গ্যালারি। কিন্তু পরদিনই স্টেডিয়াম অর্ধেকের বেশি খালি। এই ম্যাচে আগেই বাদ পড়া চট্টগ্রামের বেশি কিছু পাওয়ার না থাকলেও কুমিল্লার সামনে ছিল অর্জনের হাতছানি, যা পূরণও করে তারা।

৭ জয়ে পাওয়া ১৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তিন নম্বরে রয়েছে কুমিল্লা। নেট রান রেটে এগিয়ে থেকে দুই নম্বরে ফরচুন বরিশাল। শীর্ষে থাকা সিলেট স্ট্রাইকার্সের ঝুলিতে আছে ১৬ পয়েন্ট। এই তিন দলই খেলেছে ১০টি করে ম্যাচ।

রান তাড়ায় কুমিল্লার শুরুটা তেমন স্বস্তির ছিল না। পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে তারা করে ৪২ রান। দশ ওভার শেষে সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৬৮ রান। শেষের ১০ ওভারে বাকি থাকে ৮৯ রান।

রিজওয়ান শুরুতে ছিলেন পুরোপুরি খোলসবন্দী। লিটন দাসের অনুপস্থিতিতে ইনিংস সূচনা করতে নামা সৈকত আলি চেষ্টা করেন হাত খুলে খেলতে। তবে বেশি দূর যেতে পারেননি। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে ফেরেন ড্রেসিংরুমে। ২ চার ও ১ ছয়ে ১০ বলে করেন ১৫ রান।

তিন নম্বরে নেমে অধিনায়ক ইমরুল আশা জাগান ভালো কিছুর। তার পরিণতিও হয় সৈকতের মতো। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে জিয়াউর রহমানের বল আউট হন তিনি। সোজা আসা ডেলিভারি লং অফে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন ১৫ রান করা ইমরুল।

আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান জনসন চার্লসও এদিন হতাশ করেন। জিয়ার করা নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মারেন চার্লস। দুই বল পর প্রতিশোধ নিয়ে নেন ডানহাতি পেসার। স্লোয়ারে পরাস্ত হয়ে এক্সট্রা কভারে ক্যাচ দেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান।

৫৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় কুমিল্লা। চতুর্থ উইকেট জুটিতে তাদের পথ দেখান মোসাদ্দেক হোসেন ও রিজওয়ান। দুজন মিলে ৪৭ বলে যোগ করেন ৭৬ রান।

প্রায় পুরো ইনিংস টুকটুক করা রিজওয়ান গা ঝাড়া দেন নিহাদউজ্জামানের করা ১৫তম ওভারে। প্রথম চার বলে দুটি করে চার-ছক্কায় ওই ওভার থেকে ২০ রান তুলে নেন পাকিস্তানি কিপার-ব্যাটার। একইসঙ্গে পূরণ করেন আসরে নিজের চতুর্থ ফিফটি, ৪০ বলে।

এরপর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। মৃত্যুঞ্জয়ের দারুণ এক ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড হন তিনি। ৫ চার ও ২ ছয়ে খেলেন ম্যাচ জেতানো ৪৭ বলে ৬১ রানের ইনিংস।

রিজওয়ান ফেরার পর জয়ের জন্য বাকি থাকে ২০ বলে ২৪ রান। যা করতে স্রেফ ১৪ বল নেন জাকের আলি ও মোসাদ্দেক (২৭ বলে ৩৭*)।

‘নিয়মরক্ষার’ ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই জোড়া ধাক্কা খায় চট্টগ্রাম। তানভির ইসলামের দ্বিতীয় বলে এলবিডব্লিউ হন মেহেদি মারুফ। বাঁহাতি স্পিনারের পরের ওভারে বড় শট খেলতে গিয়ে সৈকতের হাতে ক্যাচ দেন খাওয়াজা নাফে।

তৃতীয় উইকেট জুটিতে চাপ সামাল দেন উসমান খান ও আফিফ হোসেন। দুজন মিলে ৬৪ বলে যোগ করেন ৮৮ রান।

তানভিরের করা ১১তম ওভারে পরপর দুই বলে ছক্কা মারেন উসমান। ওই ওভারেই ফিফটি পূরণ করেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান। আসরে দ্বিতীয়বার পঞ্চাশ ছুঁতে খেলেন ৩৮ বল।

মুস্তাফিজুর রহমানকে ছয়-চার মেরে ১২তম ওভারে ১২ রান তোলেন আফিফ। পরের উসমানকে আউট করে জুটি ভাঙেন সৈকত। ৪ চার ও ৩ ছয়ে ৪১ বলে ৫২ রান করেন উসমান।

আফিফের পঞ্চাশ আসে ১৬তম ওভারের শেষ বলে। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বাদশ ও চলতি আসরের দ্বিতীয় ফিফটি করতে আফিফ খেলেন ৪০ বল। পরে আরও ৯ বল খেলে যোগ করেন ১৬ রান। ৪৯ বলের ইনিংসটি ৬ চার ও ২ ছয়ে সাজান আফিফ।

শেষ দিকে দারভিশ রাসুলি ৮ বলে ২০ রানের ক্যামিও খেলে চট্টগ্রামকে দেড়শ পার করান।

এই ম্যাচ দিয়ে বিপিএল অভিষেক হয়েছে কুমিল্লার পাকিস্তানি লেগ স্পিনার আবরার আহমেদের। উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে স্রেফ ২২ রান দিয়েছেন তিনি।

নাসিম শাহ চলে যাওয়ায় তার জায়গায় সুযোগ পাওয়া হাসান আলি ২৫ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। ৪ ওভারে ৪৪ রান খরচ করে উইকেটশূন্য মুস্তাফিজ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ১৫৬/৭ (মারুফ ০, উসমান ৫২, নাফে ২, আফিফ ৬৬, শুভাগত ১২, ক্যাম্ফার ০, জিয়াউর ০, রাসুলি ২০*, মৃত্যুঞ্জয় ১*; তানভির ৪-০-২৭-২, আবরার ৪-০-২২-০, হাসান ৪-০-২৫-২, মুস্তাফিজ ৪-০-৪৪-০, সৈকত ৩-০-২৬-১, মোসাদ্দেক ১-০-১১-০)

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৯ ওভারে ১৫৭/৪ (সৈকত ১৫, রিজওয়ান ৬১, ইমরুল ১৫, চার্লস ৯, মোসাদ্দেক ৩৭*, জাকের ১০*; মৃত্যুঞ্জয় ৪-০-৩৫-২, নিহাদউজ্জামান ৪-০-৩১-০, মেহেদি ৩-০-১৭-০, ক্যাম্ফার ৪-০-৪৭-০, জিয়াউর ৪-০-২৭-২)

ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৬ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ রিজওয়ান