গত বছর চার ইনিংসে তিন সেঞ্চুরি করা নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটে বড় রানের দেখা নেই চলতি বছরে, এর খেসারত দিকে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকেও।
Published : 31 Oct 2024, 08:36 PM
সেনুরান মুথুসামির বল ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ গেল লেগ গালির হাতে। একবার পেছনে ঘুরে দেখলেন নাজমুল হাসান শান্ত। এরপর মাথা নিচু করে হাঁটা দিলেন ড্রেসিং রুমের পথে। চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের এই চিত্র চলতি বছরের প্রায় নিয়মিত দৃশ্য। শান্ত ধুঁকছেন ব্যাট হাতে। তার এমন ফর্ম যে দলকেও বিপাকে ফেলছে, সেটিও মেনে নিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
ফলো-অনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসেও হতাশ করেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। বাকিদের ব্যর্থতার ভিড়ে কিছুটা ব্যতিক্রম ছিলেন শান্ত। একপ্রান্তে ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু বড় করতে পারেননি নিজের ইনিংস। ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৩৬ রানে থামেন তিনি।
পরে বাংলাদেশও বেশি দূর যেতে পারেনি। ইনিংস ব্যবধানে হেরে অনভিজ্ঞ দক্ষিণ আফ্রিকা দলের কাছে হোয়াইটওয়াশড হয় তারা।
শুধু এই চট্টগ্রাম টেস্টই নয়, বছরজুড়েই শান্তর ব্যাট খুবই শান্ত। গত বছর চার ইনিংসে তিন সেঞ্চুরি করা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ২০২৪ সালে ১৫ ইনিংসেও পাননি তিন অঙ্কের দেখা। ঘরের মাঠে সর্বোচ্চ এই ৩৬ রান।
ভারত সফরে চেন্নাই টেস্টে তিনি ৮২ রানের ইনিংস খেললেও পরাজয়ের ব্যবধান কমানো ছাড়া কোনো কাজে লাগেনি সেটি। পাকিস্তান সফরে দলগত পারফরম্যান্সে দারুণ সাফল্য এলেও নিষ্প্রভ ছিলেন শান্ত।
সব মিলিয়ে ২০২৪ সালে ৮ ম্যাচের ১৫ ইনিংসে এক ফিফটিতে ২১.১৩ গড়ে মাত্র ৩১৭ রান করেছেন শান্ত। এই আট ম্যাচের ছয়টিতেই হেরেছে দল।
চট্টগ্রাম টেস্টে হারের পর শান্ত তাই মেনে নিলেন, ব্যাটিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে তিনি ব্যর্থ হওয়ায় দলও ভুগছে।
"(নিজের পারফরম্যান্সে দলের ওপর প্রভাব পড়ে থাকতে পারে কিনা) হ্যাঁ, অবশ্যই। যেহেতু ওপরের দিকে ব্যাট করি, আমার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রান করা। যেটা হচ্ছে না।"
"সবচেয়ে খারাপ যে জিনিসটা, সবশেষ বেশ কয়েকটা ইনিংসে ২০ থেকে ৪০ রানের মধ্যে আউট হচ্ছি। অর্থাৎ সেট হয়ে আউট হচ্ছি। যা দলের জন্য ক্ষতির কারণ। এই জায়গায় আরও মনোযোগ দিয়ে ব্যাটিং করা উচিৎ। ইনিংসগুলো কীভাবে বড় করা যায়, তা গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয়, আমার ব্যাটিংটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।"
গত বছরের ডিসেম্বরে নিউ জিল্যান্ড সিরিজ থেকে টানা টেস্ট দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শান্ত। এই সময়ে ১০ ম্যাচের ১৯ ইনিংসে তার সেঞ্চুরি ও ফিফটি কেবল একটি করে। সাতবার আউট হন দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই। মাত্র ২৫.৪২ গড়ে মোট সংগ্রহ ৪৮৩ রান।
অধিনায়কত্ব পাওয়ার আগে ২৩ ম্যাচের ৪৪ ইনিংসে তিনটি ফিফটির সঙ্গে চারটি সেঞ্চুরি করেন শান্ত। ওই সময় ২৯.৮৩ গড়ে করেন ১ হাজার ২৮৩ রান।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, অধিনায়কত্বের চাপেই ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হচ্ছেন কি না। তিনি অবশ্য এটি মানতে চাইলেন না।
"আমার কাছে একবারও মনে হয়নি (অধিনায়কত্ব কোনো চাপ)। আজকেও যখন আমি ব্যাটিং করেছি, আমার মনে হয়নি যে অধিনায়ক হওয়ায় সব কিছু আমার একা করতে হবে। আমি শুধু বল দেখি আর ব্যাটিং করি। ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্যাটিংটা উপভোগ করি।”
“ব্যাটিং করতে তো সবারই ভালো লাগে। চিন্তা থাকে কীভাবে বড় রান করতে পারব। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে অধিনায়কত্বের কোনো চাপ এখন পর্যন্ত মনে হয়নি।"