ওয়ানডে অভিষেকে ২৪ বলের ফিফটিতে বিশ্বরেকর্ড গড়লেন মুহাম্মাদ আব্বাস, পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটারের ছেলের নিউ জিল্যান্ডের হয়ে খেলার গল্পটিও বেশ চমকপ্রদ।
Published : 29 Mar 2025, 11:16 AM
নিউ জিল্যান্ড দলে সুযোগ পেয়েই বেশ সাড়া জাগিয়েছিলেন মুহাম্মাদ আব্বাস। এবার তিনি ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিলেন অভিষেকেই বিশ্বরেকর্ড গড়ে। তার সেই কীর্তি বাড়তি রোমাঞ্চ আর কৌতূহলের খোরাক জোগাল প্রতিপক্ষের কারণেও। ঝড়ো ফিফটির রেকর্ডটি যে তিনি গড়লেন নিজের জন্মভূমি ও তার বাবার দেশ পাকিস্তানের বিপক্ষে!
পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে শনিবার নেপিয়ারে ২৬ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলেন আব্বাস। তিনটি করে ছক্কা ও চারের ইনিংসে ফিফটি করেন তিনি ২৪ বলে। ওয়ানডে অভিষেকে যা দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড।
আগের রেকর্ডটি যৌথভাবে ছিল ভারতের ক্রুনাল পান্ডিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের আলিক আথানেজের। দুজনই ফিফটি করেছিলেন ২৬ বলে।
ডানহাতি ব্যাটসম্যান হলেও আব্বাস বাঁহাতি পেস বোলার। ২১ বছর বয়সী অলরাউন্ডার নিউ জিল্যান্ড দলে জায়গা করে নিয়েছেন লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে স্রেফ ১৫ ম্যাচ খেলেই। এতটা বিধ্বংসী সেখানে তাকে মনে হয়নি। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে তার স্ট্রাইক রেট ছিল এই ম্যাচের আগে ৮৫.১৭। একটি সেঞ্চুরি করেছেন, গত মাসেই সেই ইনিংসে ওয়েলিংটনের হয়ে ১০৪ রানের ইনিংস খেলেছেন ১২০ বলে। সেই তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখে ঝড় তুললেন।
তার ক্যারিয়ার আর জীবনের গল্পও কম চমকপ্রদ নয়। বাবা আজহার আব্বাস পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার। তিনি ছিলেন পেস বোলার। পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত। ছেলে আব্বাসের জন্ম লাহোরে ২০০৩ সালে।
আজহার পরে পরিবার নিয়ে পাড়ি জমান নিউ জিল্যান্ডে। পরিবার নিয়ে থিতু হন অকল্যান্ডে। সেখানেও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ও স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তিনি অকল্যান্ডের হয়ে। কিছুদিন খেলেছেন ওয়েলিংটনের হয়েও। আব্বাস বেড়ে ওঠেন অকল্যান্ডেই। তিন বছর বয়স থেকেই বাবার সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে শুরু করে ছোট্ট ছেলেটি। ক্রমে গড়ে উঠতে থাকে নিউ জিল্যান্ডের ক্রিকেট সিস্টেমে।
আব্বাসের ১৩ বছর বয়স থেকে আজহারের মনে হতে তাকে, তার ছেলের সম্ভাবনা আছে সত্যিকারের বড় ক্রিকেটার হওয়ার। ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেটে দুই মাসের মধ্যে সাতটি সেঞ্চুরি করে ফেলে আব্বাস, ওই পর্যায়ের ক্রিকেটে যা অভূতপূর্ব। একই সঙ্গে বোলিংও ওপেন করতেন।
সেই সময় অবশ্য স্কুলে ও ক্লাব পর্যায়ে চুটিয়ে ফুটবলও খেলত আব্বাস। তবে এক পর্যায়ে দুটির একটি বেছে নিতেই হতো। নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেট যে চাইছিল তাকে ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের অংশ করে নিতে! ক্রিকেটার বাবার ছেলে বেছে নেয় ক্রিকেটকেই।
এরপর নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটই তার দায়িত্ব নিয়ে নেয়। তার ক্রিকেট প্রশিক্ষণ, পড়াশোনা, আদর্শ আবহ ও সংস্কৃতিতে গড়ে তোলা, সবই করে তারা। বছর দুয়েক পর প্রথম পেশাদার চুক্তির প্রস্তাব পান তিনি ওয়েলিংটন থেকে। লুফেও নেন। তার সঙ্গে বাবাও চলে আসেন ওয়েলিংটনে। সেখানে সহকারী কোচের দায়িত্ব নেন সাবেক এই পেসার, যে দায়িত্বে তিনি আছেন এখনও।
আব্বাস এগিয়ে গেছেন উন্নতির পথ ধরে। ২০২২ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে তার খেলার কথা ছিল। কিন্তু কোভিডের জন্য কোয়ারেন্টিনের বিধিনিষেধের ঝামেলায় ওই আসর থেকে সরে দাঁড়ায় নিউ জিল্যান্ড। পরের বছর ওয়েলিংটনের হয়ে স্বীকৃত ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই অভিষেক হয়ে যায় তার।
ঘরোয়া ক্রিকেটে অসাধারণ কিছু এখনও করেননি। অনেক ম্যাচের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ নন। তবে প্রতিভার ঝলক যা দেখিয়েছেন, তাতেই জায়গা মিলে যায় পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের নিউ জিল্যান্ড দলে। আইপিএল ও অন্যান্য কারণে মূল দলের অনেকেই নেই এই সিরিজে। তারপরও এত দ্রুত জাতীয় দলে ডাক পেয়ে আব্বাস চমকে গিয়েছিলেন বলে সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন তার বাবা আজহার।
সেই তিনি অভিষেকে অনেককেই চমকে দিলেন ব্যাট হাতে। অভিষেকে স্নায়ুর চাপের কোনো রেশ ছিল না তার ব্যাটিংয়ে। দুর্দান্ত কিছু পুল শটের পাশাপাশি চোখধাঁধানো সব শট খেলেন তিনি।
বাবার বিশ্বাস, দারুণ এক অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার সব রসদ মজুদ আছে তার ছেলের ভেতর। অভিষেকে মারকাটারি ফিফটির পর মোহাম্মদ রিজওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়ে সেই ছবিই মেলে ধরলেন আব্বাস।