পাকিস্তান-ইংল্যান্ড
আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ইংল্যান্ডের ষষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছেন মিডল অর্ডার এই ব্যাটসম্যান।
Published : 10 Oct 2024, 04:36 PM
সোজা ব্যাটে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে বল বাউন্ডারিতে পাঠালেন হ্যারি ব্রুক। ২৯৮ থেকে ট্রিপল সেঞ্চুরির ঠিকানায় পৌঁছে গেলেন মিডল অর্ডার এই ব্যাটসম্যান। তার এই ইনিংসের সৌজন্যে অবসান হলো ইংল্যান্ডের প্রায় তিন যুগের অপেক্ষার। গ্রাহাম গুচের ৩৪ বছর পর টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরি উপহার দিলেন ইংলিশ কোনো ব্যাটসম্যান।
পাকিস্তানের বিপক্ষে মুলতান টেস্টে বৃহস্পতিবার এই কীর্তি গড়েন ব্রুক। ১৪৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসে ইংল্যান্ডের ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন তিনি।
ব্রুকের চমৎকার ব্যাটিংয়ের ইনিংসটি থামে ৩১৭ রানে। ৪১৮ মিনিট উইকেটে কাটিয়ে ৩২২ বল খেলে ২৯ চারের সঙ্গে ৩ ছক্কা মারেন আগ্রাসী এই ব্যাটসম্যান। টেস্টে প্রথমবার ডাবল সেঞ্চুরি ছোঁয়া ইনিংসকে ট্রিপল সেঞ্চুরিতে রূপ দেন তিনি। ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে তার আগের সেরা ছিল ১৮৬।
ব্রুকের আগে ইংল্যান্ডের কোনো ব্যাটসম্যান ট্রিপল সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়েছিলেন সেই ১৯৯০ সালে। ভারতের বিপক্ষে লর্ডসে প্রথম ইনিংসে ৩৩৩ রান করেছিলেন গুচ। দ্বিতীয় ইনিংসে তার ব্যাট থেকে আসে ১২৩ রান। এক টেস্টে গুচের ৪৫৬ রান বিশ্ব রেকর্ড।
ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডটি লেন হাটনের, ৩৬৪। ট্রিপল সেঞ্চুরি পেয়েছেন আর ওয়ালি হ্যামন্ড (অপরাজিত ৩৩৬), অ্যান্ডি স্যান্ডহ্যাম (৩২৫), জন এডরিচ (অপরাজিত ৩১০)।
মুলতানের ব্যাটিং স্বর্গে ১৪১ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শুরু করেন ব্রুক। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দ্রুত রান বাড়াতে থাকা এই ব্যাটসম্যান ডাবল সেঞ্চুরিতে পা রাখেন ২৪৫ বলে। এরপর আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন তিনি। পরের একশ করতে কেবল ৬৫ বল লাগে তার।
৩১০ বলে ট্রিপল সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ব্রুক। টেস্টে দ্রুততম ট্রিপল সেঞ্চুরি করার তালিকায় তার ওপরে আছেন আর কেবল একজন। ২০০৮ সালে চেন্নাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৭৮ বলে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছিলেন ভারতের ভিরেন্দার শেবাগ।
পাকিস্তানের বিপক্ষে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরি করার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ব্রুক। সাইম আইয়ুবকে সুইপ করে শর্ট ফাইন লেগে ধরে পড়ে শেষ হয় তার চোখধাঁধানো ইনিংস।
ম্যাচে চমৎকার ব্যাটিং উপহার দেন জো রুট। ক্যরিয়ারের ষষ্ঠ ডাবল সেঞ্চুরির করা ডানহাতি ব্যাটসম্যান অবশ্য ট্রিপল সেঞ্চুরিতে পা রাখতে পারেননি। ৩৭৫ বলে ১৭ চারে ক্যারিয়ার সেরা ২৬২ রান করে ফেরেন ইংলিশ ব্যাটিং গ্রেট। তার আগের সেরা ছিল ২৫৪।
টেস্ট ইতিহাসে একই ইনিংসে দুই ব্যাটসম্যানের আড়াইশ ছাড়ানো রান এই নিয়ে তৃতীয়বার দেখা গেল।
রুট ও ব্রুকের ৪৫৪ রানের জুটি ওলটপালট করে দিয়েছে রেকর্ডের বেশ কয়েকটি পাতা। ইংল্যান্ডের প্রায় দেড়শ বছরের টেস্ট ইতিহাসে যেকোনো উইকেটে এটিই জুটির রেকর্ড। আগের সেরা ছিল ১৯৫৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কলিন কাউড্রে ও পিটার মের গড়া ৪১১ রানের জুটি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে সব দল মিলিয়ে যেকোনো উইকেটে এটিই সবচেয়ে বড় জুটির রেকর্ড। ১৯৫৮ সালে কিংস্টোনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কনরাড হান্ট ও গ্যারি সোবার্স গড়েছিলেন ৪৪৬ রানের জুটি।
দেশের বাইরে সব দল মিলিয়ে যেকোনো উইকেটে ব্রুক ও রুটের ৪৫৪ রানের জুটি বিশ্ব রেকর্ড। আগের সেরা ছিল অস্ট্রেলিয়ার স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ও বিল পিন্সফোর্ডের ৪৫১ রানের যুগলবন্দি, ১৯৩৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দা ওভালে।
ব্রুক ও রুটের এই জুটি টেস্টে যেকোনো উইকেটে চতুর্থ সর্বোচ্চ। বিশ্ব রেকর্ডটি মাহেলা জায়াওয়ার্দেনে ও কুমার সাঙ্গাকারার, ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬২৪ রানের জুটি গড়েছিলেন শ্রীলঙ্কার দুই গ্রেট।
ব্রুকের বিদায়ের কয়েক ওভার পর ৭ উইকেটে ৮২৩ রান নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে দেয় ইংল্যান্ড। টেস্ট ইতিহাসে এনিয়ে এক ইনিংসে আটশর বেশি রান দেখা গেল মোট চারবার। যেখানে তিনটিই ইংল্যান্ডের। ১৯৩৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭ উইকেটে ৯০৩ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল তারা। এর ৮ বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে করেছিল ৮৪৯ রান।
টেস্টে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রানের বিশ্ব রেকর্ডটি শ্রীলঙ্কার। ১৯৯৭ সালে ভারতের বিপক্ষে কলম্বোতে ৬ উইকেটে ৯৫২ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল লঙ্কানরা।