ছুটে চলার পথে এবার বিপিএল রাঙানোর অপেক্ষায় আশিকুর

গত বছর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলার পর নানা ধাপ পেরিয়ে এগিয়ে চলা পেসার এখন তাকিয়ে বিপিএলে আলো ছড়াতে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Jan 2023, 02:23 PM
Updated : 4 Jan 2023, 02:23 PM

যুব বিশ্বকাপের সবশেষ আসরেই সামর্থ্যের কিছু ঝলক দেখিয়েছিলেন আশিকুর জামান। দল হিসেবে বাংলাদেশ ভালো করতে না পারলেও তিনি কঠিন পরীক্ষা নিয়েছিলেন প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের। সেখান থেকে তার ক্যারিয়ার সামনে ছুটেছে দারুণ গতিতে। প্রথম শ্রেণি ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের স্বাদ নিয়ে এবার বিপিএলে নিজেকে জানান দেওয়ার অপেক্ষায় ২০ বছর বয়সী এই পেসার।

মিরপুর একাডেমি মাঠে অনুশীলন শুরুর আগে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের দলীয় বৃত্তে দূর থেকেই আলাদা করা যায় আশিকুরকে। উচ্চতা যে ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি! বিশ্ব ক্রিকেটে এমন উচ্চতার পেসার অসংখ্য থাকলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটে বিরল। লম্বা রান আপ ও হাই আর্ম অ্যাকশনের এই পেসারকে নেট সেশনেও আলাদা করে নজর পড়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।

গত জানুয়ারিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলার পর এই ১২ মাসে ক্রমে সামনে এগিয়েছেন আশিকুর। বিশ্বকাপের আগেই অবশ্য যুবাদের তখনকার প্রধান কোচ নাভিদ নেওয়াজ উচ্চকিত ছিলেন এই পেসারের প্রশংসায়। আস্থার প্রতিদান দিয়ে বিশ্বকাপের ৪ ম্যাচে ওভারপ্রতি স্রেফ ২.২৫ রান খরচ করে ৪ উইকেট শিকার করেন তিনি।

এরপর স্বীকৃত ক্রিকেটের স্বাদ পেয়ে যান তিনি দ্রুতই। গত মার্চ-এপ্রিলে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের হয়ে ৯ ম্যাচে ওভারপ্রতি মাত্র ৪.৯৪ খরচায় নেন ৮ উইকেট। সেই ধারাবাহিকতায় জাতীয় ক্রিকেট লিগের ২৪তম আসরে প্রথম শ্রেণির সংস্করণে অভিষেক হয় তার।

রাজশাহী বিভাগের বিপক্ষে লিগের শেষ ম্যাচে প্রথম ৫ উইকেট পান সাতক্ষীরার এই তরুণ। এরপর আরও বড় সুযোগ আসে তার সামনে। সুযোগ পেয়ে যান ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ ‘এ’ দলে। স্রেফ ৫টি প্রথম শ্রেণির অভিজ্ঞতায় ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপের সামনে খেলতে নেমে উইকেটের দেখা পাননি তিনি। তবে গতি ও বাড়তি বাউন্স বেশ কবারই বিপাকে ফেলেছে চেতেশ্বর পুজারা, অভিমন্যু ঈশ্বরনের মতো ব্যাটসম্যানদের।

প্রায় এক বছরের এই স্বপ্নযাত্রায় এবার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আশিকুর। বিপিএলে তাকে দলে নিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মতো বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি।

যুব ক্রিকেটে নাভিদ নাওয়াজ দিয়ে শুরুর পর এবার বিপিএলে খেলবেন তিনি দেশের সেরা কোচদের একজন বলে বিবেচিত মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের কোচিংয়ে। সময়ের পরিক্রমায় সংস্করণ বদলালেও নিজের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন তরুণ এই পেসার।

বুধবার দলের অনুশীলন শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বললেন, মাঠে নামার সুযোগ পেলে করণীয় কী হবে, কোচের কাছ থেকে সেই ধারণা তিনি পেয়ে গেছেন।

“নাভিদ স্যার যখন ছিলেন, তখন আমরা ওয়ানডে ম্যাচ বেশি খেলেছি। চার দিনের ম্যাচ বা টি-টোয়েন্টি তেমন হয়নি। এখন আমরা নতুন করে টেস্ট (প্রথম শ্রেণির ম্যাচ) ও টি-টোয়েন্টি খেলছি, নতুন নতুন কোচদের কাছে যাচ্ছি। ওভাবেই তৈরি হচ্ছি।”

“(বিপিএলের) প্রস্তুতি ভালোই নিচ্ছি। সালাউদ্দিন স্যার খুবই পরিষ্কার ও ইতিবাচক মনের কোচ। ম্যাচ খেললে আমার ভূমিকা কী হবে, শুরুতেই তা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। আমি ওদিকেই মনোযোগ দিচ্ছি।”

কুমিল্লার অনুশীলনে বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও বাড়তি মনোযোগী দেখা যায় আশিকুরকে। এই বিভাগেও দলের হয়ে অবদান রাখার প্রত্যয় তার কণ্ঠে।

“ফিল্ডিংটা আসলে চেষ্টা করলেই সম্ভব। পেসারদের ক্ষেত্রে ব্যাটিংয়ে আমরা হয়তো শেষ দিকে ১-২ ওভার পাই। কিন্তু ফিল্ডিং ২০ ওভারই করতে হয়। তাই মনোযোগ দিছি। কারণ একটা ভালো ক্যাচ নিতে পারলে দলের জন্যও ভালো হবে। এজন্য বোলিংয়ের পাশাপাশি আমি ফিল্ডিংটাও অনুশীলন করছি।”

একই জেলা থেকে আসা মুস্তাফিজুর রহমানকে বিপিএলে সতীর্থ হিসেবে পেয়েছেন আশিকুর। বিশ্বজুড়ে নানান লিগ খেলা এই পেসারের অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে নিজের জানার পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করছেন বলে জানালেন তিনি।

“মুস্তাফিজ ভাই আমাকে ফিটনেসের ব্যাপারে সাহায্য করছেন। উনার কাছ থেকে শুনছি যে কীভাবে ইনজুরিতে না পড়ে লম্বা সময় খেলতে পারি। বৈচিত্র নিয়েও কথা হচ্ছে। কোন পরিস্থিতিতে কোন বল করা উচিত, কোন ব্যাটসম্যানের দুর্বল জায়গা কী, এগুলি নিয়ে কথা হচ্ছে। টুর্নামেন্ট তো কেবল শুরু। সামনে আরও কথা হবে।”

নবীন সতীর্থের কাঁধে ভরসার হাত রেখে সাহস জোগাচ্ছেন কুমিল্লার আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ইমরুল কায়েসও।

“ইমরুল ভাই আমাকে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে বলেছেন। যে কোনো পরিস্থিতিতে বোলিং করতে যেন ভয় না পাই। আমাকে যখনই বোলিং দেওয়া হোক, আমি যেন প্রস্তুত থাকি।”

কোচ সালাউদ্দিন তো কয়েক দিন আগেই সংবাদমাধ্যমে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে গেছেন আশিকুরের।

“আশিকুর এখনও তরুণ হলেও অনেক পরিণত। ওর বলে একটা বাড়তি বাউন্স আছে। যেটা হয়তো আমাদের জন্য সুবিধা হতে পারে। সাধারণত অনেকে অনেক জোরে বল করতে পারে। তবে উইকেট থেকে বাড়তি বাউন্স পেলে যে কোনো দল লাভবান হতে পারে।”

তাকে নিয়ে একটি দুর্ভাবনার জায়গা অবশ্য আছে। গত অক্টোবরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকের পর টানা খেলতে হয়েছে আশিকুরকে। জাতীয় লিগ, বিসিএলের ওয়ানডে সংস্করণ ও ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে সিরিজসহ প্রায় দুই মাস টানা খেলার মধ্যেই ছিলেন তিনি। এমন ধকলে তরুণ শরীর ভেঙে পড়াটাও অস্বাভাবিক নয়।

কোচ সালাউদ্দিনের তাই চাওয়া, আশিকুরকে যেন সামলানো হয় সতর্কতায়।

“আশিকুরের ভালো করার খুব ভালো সুযোগ আছে। তবে আমার মনে হয়, ওর ওপর এখন অনেক বেশি চাপ হয়ে গেছে। তাই আমাদেরও ওকে একটু যত্ন করে খেলাতে হবে।”

আশিকুর অবশ্য নিজের ওপর আসা চাপ নিয়ে খুব একটা ভাবছেন না। বিশ্রাম নিয়ে এখন খেলার জন্য নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত বলে মনে করছেন ডানহাতি এই পেসার।

“(ওয়ার্কলোড) এখন ঠিক আছি। বিসিএল ওয়ানডের পরে দুই সপ্তাহ বিশ্রাম পেয়েছি। চার দিনের ম্যাচগুলো খেলিনি। এর আগে টানা এনসিএল-বিসিএল খেলা চলায় একটু চাপ গেছে। এখন সব ঠিক আছে।”

ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে আনঅফিসিয়াল টেস্ট খেলে জাতীয় দলের পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের ডাকে চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন আশিকুর। সেখানে নেটে দেশ সেরা ব্যাটসম্যানদের বোলিংয়র অভিজ্ঞতা হয় তার। তাকে কাছ থেকে দেখেন বোলিং কোচ।

সেসময় আশিকুরসহ অন্য তরুণ পেসারদের বোলিং মনে ধরে যায় তাসকিন আহমেদেরও। বুধবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তরুণ পেসারদের নিয়ে আশার কথা শোনালেন জাতীয় দলের পেস আক্রমণের নেতা।

“আমারও মনে হয় (বিপিএল থেকে কয়েকজন পেসার বেরিয়ে আসবে)… কয়েকজনকে দেখলাম সম্প্রতি এনসিএল ও বিসিএলে খুব ভালো করেছে। ভারত সিরিজের সময় (অ্যালান) ডোনাল্ড ওদের ডেকে কাজ করেছে। কয়েকজনকে দেখলাম খুব ভালো প্রতিভা। আশা করছি (পেসার) বেরিয়ে আসবে।”