‘আমি ছাদে গিয়েছিলাম ভারতের জয়ের উদযাপন দেখতে। কিন্তু ফিরলাম মিরাজের বীরত্বগাথা দেখে!- ম্যাচ শেষে বলছিলেন ভারত থেকে আসা সংবাদকর্মী মনোজ প্রসাদ। তার চোখে-মুখে বিস্ময়, ভঙ্গিতে অবিশ্বাস। তিনি যেন বুঝেই উঠতে পারছিলেন না। তবে ক্রিকেটারদের তো এসব অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়েই যেতে হয়। ভারতীয় দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা লোকেশ রাহুল যেমন তুলে ধরলেন ক্রিকেটীয় বাস্তবতা।
মিরপুর শের-ই বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সতীর্থদের ব্যর্থতার দিনে ৭৩ রানের ইনিংসে ভারতকে কিছুটা স্বস্তি দেন রাহুল। পরে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শেষ দিকে মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যাচ ছেড়ে তিনিই বড় চোট দেন দলের জয়ের সম্ভাবনায়। ১৫ রানে জীবন পেয়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন মিরাজ।
১৮৭ রান তাড়ায় মিরাজের বীরত্বে ১ উইকেটের স্মরণীয় জয় পায় বাংলাদেশ। ১৩৬ রানের মধ্যে ৯ উইকেট তুলে নিয়ে পরিষ্কার ফেবারিট ছিল ভারত। কিন্তু মুস্তাফিজকে নিয়ে ৪১ বলে বাকি ৫১ রানের অবিশ্বাস্য জুটিতে রাহুল-রোহিতদের হতাশায় ডোবান মিরাজ।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ক্যাচ ছাড়া নিয়ে আক্ষেপ করলেন রাহুল। পাশাপাশি মনে করিয়ে দিলেন ক্রিকেট খেলাটির ধরন।
"এটাই ক্রিকেট। অপ্রত্যাশিত কিছুর প্রত্যাশা কখনও কখনও করতেই হয়। ক্রিকেট যতদিন ধরে খেলা হচ্ছে, এমনটি আমরা বারবার হতে দেখছি এবং এমন ফলাফল নিয়মিতই হচ্ছে। শেষ বল করার আগে বা শেষ রান নেওয়ার আগে কখনও ম্যাচ জেতার নিশ্চয়তা পাওয়া যায় না।”
"তারা সত্যিই দারুণ লড়াই করেছে এবং শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে। মেহেদীর ইনিংসটি… ক্যাচ মিস ছিল, তবে সে দারুণ ব্যাটিং করেছে। আমি যেমনটা বললাম, তারা শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে এবং ম্যাচ জিতেই থেমেছে।"
১২৮ রানে ৬ উইকেট পড়ার পর উইকেটে যান মিরাজ। থিতু হওয়ার আগেই অপরপ্রান্তে আফিফ হোসেন, ইবাদত হোসেন ও হাসান মাহমুদের বিদায় দেখেন তিনি। মুহূর্তেই হয়ে পড়েন প্রায় একা। শেষ ব্যাটসম্যান যদিও সঙ্গী তখন, কিন্তু তাকে কী আর ব্যাটসম্যান বলা যায়!
কিন্তু মুস্তাফিজ ঠিকই ব্যাটসম্যান হয়ে উঠলেন আর মিরাজ পেলেন ভরসা। কুলদিপ সেনের এক ওভারে জোড়া ছক্কা মারার পর দিপক চাহারের ওভারে ৩ চারে ১৪ রান তুলে বাংলাদেশের জয়ের পথ সুগম করেন মিরাজ। শেষ পর্যন্ত ৪ চার ও ২ ছয়ে ৩৯ বলে ৩৮ রান করে জয়ীর বেশে মাঠ ছাড়েন তিনি।
উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে মিরাজের এই বীরত্বগাঁথা কাছ থেকে দেখেন রাহুল। প্রতিপক্ষ দলে থেকেও তার কণ্ঠে ফুটে উঠল বাংলাদেশের অলরাউন্ডারকে নিয়ে মুগ্ধতা।
" মেহেদী অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলেছে। সে কিছু সুযোগ নিয়েছে, কিছু বড় ঝুঁকি নিয়েছে। বড় শট খেলতে দ্বিধা করেনি এবং বাউন্ডারি আদায় করেছে। যখন ৩০-৩৫ রান বাকি থাকে, তখন এক-দুইটি বড় শটই প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে দিতে পারে। সে সেটা সত্যিই ভালোভাবে করতে পেরেছে।”