তৃতীয় দিন সকালে বাংলাদেশের মাথাব্যথা হয়ে ওঠা জুটি ভেঙেছেন তিনি, ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন ৪ রানে।
Published : 30 Nov 2023, 10:30 AM
গোপন অস্ত্র নাকি গোল্ডেন আর্ম? কিংবা বলা যেতে পারে ‘ত্রাতা।’ অগ্রহায়নের আদুরে রোদের সকালটি যেভাবে যন্ত্রণায় রূপ নিচ্ছিল, সেখান থেকে বাংলাদেশকে উদ্ধার করলেন তো মুমিনুল হকই। ব্যাটসম্যান মুমিনুল হয়ে উঠলেন কার্যকর বোলার।
বাংলাদেশকে হতাশায় পুড়িয়ে টিম সাউদি ও কাইল জেমিসনের জুটি যখন লিড নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল আরও, মুমিনুল বোলিং এসেই থামিয়ে দেন এই জুটিকে। একটু পর তিনিই শেষ করে দেন নিউ জিল্যান্ডের ইনিংস।
সিলেট টেস্টে বল হাতে তার অবদান অবশ্য স্রেফ এটুকুই নয়। আগের দিনও গুরুত্বপূর্ণ একটি উইকেট এসেছে তার বোলিংয়ে। নিউ জিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় জুটি ভেঙেছেন তো তিনিই।
দ্বিতীয় দিনে কেন উইলিয়ামসন ও গ্লেন ফিলিপসের জুটি যখন বেশ দ্রুততায় রান তুলে ছুটে চলছিল, বাংলাদেশের মূল বোলারদের কেউ সেভাবে প্রভাব রাখতেই পারছিল না, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর তখন মনে পড়ে মুমিনুলকে। তার হাতে তুলে দেন বল। ফল মিলতে সময় লাগেনি খুব একটা। তার প্রথম ওভারেই স্লিপে ধরা পড়েন ফিলিপস। জুটি থামে ৭৮ রানে।
এরপর মূল বোলাররাই চেপে ধরেন নিউ জিল্যান্ডকে। মুমিনুলকে আর প্রয়োজন হয়নি। দিনটা দারুণভাবে শেষ করে বাংলাদেশ।
বিপত্তি বাধে বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিন সকালে। লিডের আশায় দিন শুরু করা বাংলাদেশ গলদঘর্ম হতে থাকে সাউদি ও জেমিসনের জুটি ভাঙতে। ধারহীন বোলিং ও রক্ষণাত্মক ফিল্ডিং সাজানোর সুযোগে নিউ জিল্যান্ডের দুই পেসার রান বাড়াতে থাকেন অনায়াসেই। নবম উইকেটে অর্ধশত রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের রান তারা পেরিয়ে যান। প্রথম ঘণ্টা কেটে যায় ওভাবেই।
অধিনায়ক শান্ত এরপর আবার কড়া নাড়েন মুমিনুলের দুয়ারে। পানি পানের বিরতির পর প্রথমেই আক্রমণে আনেন তাকে। সাফল্য হাতেনাতে। প্রথম বলেই এলবডিব্লউ জেমিসন!
৫ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার মুমিনুলের অনেকটা রাউন্ড আর্ম অ্যাকশনের ডেলিভারিতে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার জেমিসন। রক্ষা পাননি তিনি রিভিউ নিয়েও।
নিউ জিল্যান্ডের লিড তাই আটকে যায় কেবল ৭ রানেই।
৫২ রানের জুটি ভাঙার পর আর টিকতে পারেননি সাউদিও। এমনিতে ছক্কা মারায় তার দক্ষতার কথা জানা সবারই। শেষ দিকে তিনি হতে পারতেন বিপজ্জনক। কিন্তু মুমিনুলের স্টাম্প সোজা বল অনসাইডে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান তিনি।
মূল বোলাররা দিনের প্রথম ১৭ ওভারে তেমন কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেননি। মুমিনুল শেষ দুই উইকেট তুলে নেন স্রেফ ৫ বলেই।
৪ রানে ৩ উইকেট, মুমিনুলের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং!
টেস্ট ক্যারিয়ারে আগেও এক দফায় ৩ উইকেট তিনি পেয়েছিলেন। ২০১৭ সালের পচেফস্ট্রুম টেস্টে প্রথম ইনিংসে বড় লিড নেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংসে দ্রুত রান বাড়ানোর চেষ্টায় ছিল। সেবার টেম্বা বাভুমা, ফাফ দু প্লেসি ও কুইন্টন ডি ককের উইকেট নেন মুমিনুল। সেই ২৭ রানে ৩ উইকেট ছিল তার আগের সেরা বোলিং।
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে বল হাতে তার ভূমিকা রাখা অবশ্য নতুন কিছু নয়। গত বছর মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে স্মরণীয় সেই জয়ের পথে দারুণ দুটি ব্রেক থ্রু তিনি এনে দিয়েছিলেন। শুরুতে বিদায় করেছিলেন তিনি ১২২ রান করা ডেভন কনওয়েকে, পরে ৭৫ রান করা হেনরি নিকোলসকেও।
এছাড়া টেস্ট ক্যারিয়ারে আর যে দুটি উইকেট তার আছে, সেই দুটিও নিউ জিল্যান্ডর বিপক্ষেই। ২০১৩ সালে চট্টগ্রামে তিনি আউট করেছিলেন সেঞ্চুরি করা বিজে ওয়াটলিংকে। গত বছর ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে ২৫২ রানের ইনিংসের পর মুমিনুলের বলেই আউট হন টম ল্যাথাম।