বাংলাদেশ-পাকিস্তান
পাকিস্তানের দুই ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি ও ইনিংস ঘোষণার পর বাংলাদেশের দুই ওপেনার দিন শেষ করেছেন নিরাপদে।
Published : 22 Aug 2024, 07:43 PM
পাকিস্তানের ইনিংস ঘোষণা চমক হয়ে এসেছিল অনেকের জন্যই। ক্রিজে থাকা ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ানকে দেখে মনে হচ্ছিল, তিনিও একটু অবাক। তার দৃষ্টি ছিল ডাবল সেঞ্চুরিতে। তবে পাকিস্তান অধিনায়কের ভাবনা ছিল, শেষ বিকেলে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ছেটে ফেলা। সেই চেষ্টায় তারা সফল হননি। বোলিংয়ে হতাশার দিনে বাংলাদেশের দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও জাকির হাসান ব্যাট হাতে উতরে গেছেন শেষ সময়ের চ্যালেঞ্জে।
রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রানে ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। বাংলাদেশ ১২ ওভার খেলে দিন শেষ করে কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৭ রান নিয়ে। দিনের খেলার ১২ ওভার হতে পারেনি এ দিন।
আগের দিন বাংলাদেশের বোলিং ছিল যথেষ্ট ক্ষুরধার। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে সেই ধার হারিয়ে যায় পুরোপুরি। পেসারদের বোলিং ছিল এলোমেলো। স্পিনাররাও ছিলেন না খুব একটা কার্যকর। গোটা দিনে ৭২ ওভার বোলিং করে স্রেফ দুটি উইকেট নিতে পারে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের দুই ব্যাটসম্যান করেন সেঞ্চুরি।
৫৭ রানে দিন শুরু করা সাউদ শাকিল আউট হন ১৪১ রানে। টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুটা দুর্দান্ত করা ব্যাটসম্যানের তৃতীয় সেঞ্চুরি এটি।
১১ টেস্ট খেলেই তিন সেঞ্চুরির পাশাপাশি ছয়টি ফিফটি করে ফেলেছেন তিনি। পাকিস্তানের হয়ে দ্রুততম হাজার রানের রেকর্ডে আগের দিন স্পর্শ করেছিলেন সাঈদ আহমেদকে। এখন ক্যারিয়ারের প্রথম ২০ ইনিংস শেষে পাকিস্তানের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডও তার (৬৫.১৭ গড়ে ১ হাজার ১০৮)।
ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে রিজওয়ান অপরাজিত থাকেন ১৭১ রানে। ৩১ টেস্ট খেলা কিপার-ব্যাটসম্যানেরও তৃতীয় শতরান এটি। শাকিলের তুলনায় আগ্রাসীও ছিলেন তিনি। ২৩৯ বলের ইনিংসে চার মেরেছেন ১১টি, ছক্কা ৩টি।
বাংলাদেশের কোনো পেসার এ দিন উইকেট পাননি। শরিফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ আগের দিনের ধারা ধরে রাখতে পারেননি। তরুণ নাহিদ রানা ছিলেন খরুচে। কখনও বেশি শর্ট, কখনও বেশি ফুল লেংথে বল করতে দেখা গেছে তাকে। দিনের দুই উইকেট নিয়েছেন দুই স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান।
আগের দিনের চেয়ে উইকেট অবশ্য ব্যাটিংয়ের জন্য সহজ হয়ে আসে অনেকটাই। তবে বাংলাদেশ পারেনি বোলিংয়ে শৃঙ্খলা রাখতে।
দিনের শুরুতে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল দ্রুত উইকেট নেওয়া। কিন্তু বোলিংয়ে ছিল না সেই পরিকল্পনা ও ধারাবাহিকতা। দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান শাকিল ও রিজওয়ানকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারেননি কোনো বোলার। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষাও দ্রুতই মিইয়ে যায়।
২৪ রানে দিন শুরু করা রিজওয়ান ফিফটিতে পৌছে যান দ্রুতই। শাকিল তো যথারীতি এগিয়ে যান আস্থায়। দুজনের জুটি শতরান পেরিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে আরও। প্রথম সেশনেই প্রায় একশ রান যোগ করেন দুজন।
পেছন থেকে এগিয়ে আগে শতরানে পৌঁছে যান রিজওয়ান। একটু পর তাকে অনুসরণ করেন শাকিল।
৮০ ওভার শেষ হতেই দ্বিতীয় নতুন বল নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। জুটি পেরিয়ে যায় দুইশ।
শেষ পর্যন্ত জুটি থামে ২৪০ রানে। মিরাজের হালকা টার্ন ও তীক্ষ্ন বাউন্সে লিটন দাসের ক্ষিপ্রতায় স্টাম্পড হন শাকিল।
এরপর রিজওয়ানের সঙ্গে সালমান আলি আঘার জুটি জমে ওঠার ইঙ্গিত দিলেও বেশি বড় হয়নি। সাকিবের ডেলিভারি টার্নের বিপরীতে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় বিদায় নেন সালমান।
পরের জুটিতে পাকিস্তানের রানের গতিতে নতুন দম আসে। শাহিন শাহ আফ্রিদি সহজাত আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে থাকেন। রিজওয়ান দেড়শ পেরিয়ে এগোতে থাকেন দুইশর দিকে।
তবে জুটির পঞ্চাশ হতেই ইনিংস ঘোষণা করেন অধিনায়ক শান মাসুদ। আফ্রিদি অপরাজিত থাকেন দুই ছক্কায় ২৪ বলে ২৯ করে।
এরপর বাংলাদেশের দুই ওপেনারের চ্যালেঞ্জ ছিল পাকিস্তানি পেসারদের সামলে উইকেট ধরে রাখা। তাতে ভালোভাবেই সফল হন সাদমান ও জাকির। শাহিন আফ্রিদি ও নাসিম শাহ দু-একটি ডেলিভারিতে তাকে অস্বস্তিতে ফেলেন বটে। তবে খুব বিপজ্জনক তারা হয়ে উঠতে পারেননি।
দুই ওপেনারের লক্ষ্য থাকবে এবার নতুন দিনে দলকে আরও এগিয়ে নেওয়া।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ১১৩ ওভারে ৪৪৮/৬ (ডি.) (আগের দিন ১৫৮/৪) (শাকিল ১৪১, রিজওয়ান ১৭১*, সালমান ১৯, আফ্রিদি ২৯*; শরিফুল ২৩-৪-৭৭-২, হাসান ২৩-৪-৭০-২, নাহিদ ১৯-০-১০৫-০, মিরাজ ২১-১-৮০-১, সাকিব ২৭-৩-১০০-১)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১২ ওভারে ২৭/০ (সাদমান ১২*, জাকির ১১*; আফ্রিদি ৪-১-৮-০, নাসিম ৫-১-৭-০, শাহজাদ ৩-০-৮-০)।