নেপালের তারকা ক্রিকেটারকে নির্দোষ ঘোষণা করেছে পাটান হাই কোর্ট।
Published : 15 May 2024, 08:32 PM
এক তরুণীকে ধর্ষণের দায়ে আট বছরের কারাদণ্ড পাওয়া সান্দিপ লামিছানে এখন পুরোপুরি মুক্ত। নেপালের এই তারকা ক্রিকেটারকে নির্দোষ ঘোষণা করেছে পাটান হাই কোর্ট।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে লামিছানেকে দোষী সাব্যস্ত করে কাঠমান্ডুর জেলা আলাদত। পরের মাসে তাকে শাস্তি হিসেবে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সঙ্গে ৩ লাখ নেপালি রুপি জরিমানাও করা হয় এবং ভুক্তভোগীকে ২ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত।
এই রায়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না লামিছানে ও তার আইনজীবী। তখনই উচ্চ আদালতে আপিএল করার ঘোষণা দেওয়া হয় লামিছানের পক্ষ থেকে। সেই আপিলের রায়ে বুধবার এই লেগ স্পিনারকে সব ধরনের অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয় উচ্চ আদালত।
রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে হাজির হন উচ্ছ্বসিত লামিছানে। ঢাকঢোল বাজিয়ে এই ক্রিকেটারের মুক্তি উদযাপন করেন তার সমর্থকরা।
ঘটনাটি সেই ২০২২ সালের। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর ধর্ষণের অভিযোগ তুলে লামিছানের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী। পরদিনই সেই সময়ের নেপাল অধিনায়কের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলতে তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে ছিলেন তিনি।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরপরই জরুরি সভা ডেকে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব নেপাল লামিছানেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
আইনি লড়াইয়ে নামার কথা জানিয়ে লামিছানে দেশে ফেরার ঘোষণা দেন পরের মাসে। ২০২২ সালের ৬ অক্টোবর কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখতেই তাকে গেপ্তার করা হয়। পরে যদিও তাকে জামিনে ছাড়া হয়।
জবানবন্দিতে ওই ভুক্তভোগী পুলিশকে বলেন, লামিছানে তাকে দুবার ধর্ষণ করেন। স্ন্যাপচ্যাটে যোগাযোগের সূত্রে তাদের পরিচয় হয়েছিল। লামিছানে তাকে জোর করে নাগারকোটে একটি হোটেলে নিয়ে যান বলেও জবানবন্দিতে বলেন তিনি।
আর লামিছানে পুলিশকে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, ওই কিশোরীর ইচ্ছায় তাকে নাগারকোটে নিয়ে যান তিনি। আর মেয়েটির বয়স ১৭ নয়, ১৯ বছর।
জামিন পাওয়ার পর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে লামিছানেকে ঘরের মাঠে স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়ার বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের দলে রাখে নেপাল। যা নিয়ে নেপালের অনেকের মাঝেই ছিল অসন্তোষ। ত্রিদেশীয় সিরিজ শুরুর আগে ক্যাম্পে বিক্ষোভও করেন তারা।
সিরিজের সময় লামিছানেকে দলে ফেরানোর নীরব প্রতিবাদ জানায় সফরকারী দল দুটিও। নেপালের সব ক্রিকেটারের সঙ্গে ম্যাচ শেষে হাত মেলালেও অভিযুক্ত ক্রিকেটারের সঙ্গে হাত মেলাননি স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়ার ক্রিকেটাররা।
পরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এশিয়া অঞ্চলের বাছাই পর্বেও খেলেন লামিছানে। বাছাইয়ের দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারিয়ে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেপাল। ওমানের বিপক্ষে ফাইনালে সুপার ওভারে হেরে যায় তারা। ওই টুর্নামেন্টে ৫ ম্যাচ খেলে ৯ উইকেট নেন লামিছানে।
কিন্তু পরে শাস্তির ঘোষণা আসায় লামিছানেকে বিশ্বকাপ দলে রাখেনি নেপাল। এবার মুক্তি পাওয়া এই ক্রিকেটারকে দলে যোগ করতে পারবে এশিয়ার দলটি। আগামী ২৫ মে পর্যন্ত কোনো বাধা ছাড়াই স্কোয়াডে পরিবর্তন আনতে পারবে দলগুলো।
নেপাল ক্রিকেটের উজ্জ্বল বিজ্ঞাপন হিসেবে গত কয়েক বছরে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেকে পরিচিত করেছেন লামিছানে। দেশের বাইরে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোয় (আইপিএল থেকে শুরু করে বিগ ব্যাশ, সিপিএল, বিপিএল, এলপিএল) খেলা নেপালের একমাত্র ক্রিকেটার তিনি।