বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ
ক্যারিবিয়ান পেসে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ বিধ্বস্ত আবার, অ্যান্টিগা টেস্ট জিততে শেষ দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন আর মাত্র তিন উইকেট।
Published : 26 Nov 2024, 08:52 AM
দিনের শুরুতেই ছোটখাটো একটা চমক। বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ ইনিংস ঘোষণা করে দিল আগের দিনের স্কোরেই। এরপর বোলিংয়েও তারা দারুণ উজ্জীবিত। তাসকিন আহমেদের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ধস নামল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ে। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর সব আয়োজন ভেস্তে গেল দিনের শেষ সেশনে। বাংলাদেশের ব্যাটিং বিধ্বস্ত আবার। পরাজয়ও তাই এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
অ্যান্টিগা টেস্টের শেষ দিনে জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন আর মোটে তিনটি উইকেট। শেষ ইনিংসে ৩৩৪ রানের লক্ষ্যে নামা বাংলাদেশ চতুর্থ দিন শেষ করে ৭ উইকেটে ১০৯ রান নিয়ে।
আলোকস্বল্পতায় দিনের খেলা শেষ হয় ১২ ওভার আগে। নইলে হয়তো এ দিনই জয়-পরাজয় হয়ে যেত।
স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে ম্যাচের প্রথম তিন দিন মিলিয়ে উইকেট পড়েছিল ১৮টি। অথচ সোমবারই পতন হলো ১৭ উইকেটের।
আগের দিনের ৯ উইকেটে ২৬৯ রানে ইনিংস ঘোষণা করে দেয় বাংলাদেশ। হয়তো উইকেটে সকালের আর্দ্রতা কাজে লাগানোর ভাবনা থেকেই এই সিদ্ধান্ত। সেই ভাবনা কাজেও লেগে যায় বোলারদের প্রশংসনীয় পারফরম্যান্স আর লড়াইয়ের মানসিকতায়।
প্রথম ইনিংসে ১৮১ রানের লিড পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ১৫২ রানে। ফিল্ডিংয়ে গোটা তিনেক সুযোগ হাতছাড়া না করলে রান হতে পারত আরও কম।
ক্যারিয়ারের ১৬তম টেস্টে প্রথমবার ৫ উইকেটের স্বাদ পাওয়া তাসকিন ইনিংস শেষ করেন ৬৪ রানে ৬ উইকেট নিয়ে। দেশের বাইরে বাংলাদেশের তৃতীয় সেরা বোলিংয়ের কীর্তি এটি।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের যা শক্তি ও সাম্প্রতিক চিত্র, তাতে লক্ষ্যটা ধরাছোঁয়ার বাইরেই ছিল বলা চলে। তবে বোলিংয়ের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে ব্যাটিংয়ে লড়াইয়ের কিছুটা আশা অন্তত ছিল। ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ সেখানেও।
ওপেনিং থেকে ভালো কিছু পাওয়া তো প্রায় ভুলেই গেছে দল। এবারও ব্যতিক্রম নয়। ঠিক প্রথম ইনিংসের মতোই শরীর থেকে দূরে ব্যাট পেতে রেখে বল স্টাম্পে টেনে আনেন জাকির হাসান (০), বাইরের বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে চালিয়ে স্লিপে ধরা পড়েন মাহমুদুল হাসান জয় (৬)।
দুজনেরই এখন ফিফটি নেই টানা ১৩ ইনিংসে।
চারে নামা শাহাদাত হোসেন চার রান করেই রোচের শিকারে পরিণত হন।
দলের অভিজ্ঞতম ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক ছিলেন সবচেয়ে নড়বড়ে। কতবার যে পরাস্ত হন তিনি! ১০ রানে টানা দুই বলে জীবনও পান শামার জোসেফের বলে। তার পরও ইনিংসটি থেমে যায় ১১ রানেই। নিজের বলে ফলো থ্রুতে চমৎকার ক্যাচ নেন কিমার রোচ।
বাংলাদশের বিপক্ষে বরাবরই সফল এই অভিজ্ঞ পেসার এ দিনও প্রথম স্পেলে আদায় করেন তিন উইকেট।
মুমিনুলের মতো জীবন পেয়ে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন লিটন কুমার দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজও। ৯ রানে ক্যাচ দিয়ে রক্ষা পাওয়া লিটন ২২ রানে আউট হন শর্ট বলের ফাঁদে পা দিয়ে।
৫৯ রানে ৫ উইকেট হারানো দলকে একশ পার করান মিরাজ ও জাকের আলি। অস্বস্তিময় শুরুর পর মিরাজ কিছুটা এলোমেলো ব্যাট চালাতে শুরু করেন। ব্যাটের কানায় লেগে কিছু রান পেয়ে যান তিনি, ভালো শটও খেলেন কয়েকটি। তবে এভাবে তো আর টিকে থাকা যায় না! কিপার জশুয়া দা সিলভার ডাইভিং ক্যাচে থামে বাংলাদেশ অধিনায়কের ৪৬ বলে ৪৫ রানের ইনিংস।
মিরাজকে ফেরানোর পর জেডেন সিলস বোল্ড করে দেন তাইজুল ইসলামকে। একটু পরই শেষ হয় দিনের খেলা।
সকালে ইনিংস ঘোষণার পর বাংলাদেশ বোলিংয়ে নামে আগ্রাসী মানসিকতা নিয়ে। তাসকিন, শরিফুল ইসলামরা যেন তেতে ছিলেন। শুরু থেকে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরেন তারা।
তাসকিন নিজের দ্বিতীয় ওভারেই পেতে পারতেন দুই উইকেট। কিন্তু স্লিপে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের সহজ ক্যাচ ছাড়েন শাহাদাত হোসেন। পরের বলেই মিকাইল লুইয়ের পায়ে লাগে বল। বাংলাদেশের আবেদনে আউট দেননি আম্পায়ার। পরে রিপ্লেতে দেখা যায়, রিভিউ নিলেই আউট হতেন লুই।
তবে উইকেটের দেখা পেতে সময় খুব একটা লাগেনি তাসকিনের। আগুনে প্রথম স্পেলে লুই ও তিনে নামা কেসি কার্টিকে বিদায় করেন তিনি।
আরেক প্রান্তে ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েটকে ২৩ রানে থামান শরিফুল। বাঁহাতি এই পেসারের প্রথম স্পেল ছিল ৬-৪-৩-১।
প্রথম ঘণ্টায় তিন উইকেট হারানো দলকে কিছুটা এগিয়ে নেন কাভেম হজ ও আলিক আথানেজ। তাসকিন-শরিফুলের চাপটা ধরে রাখতে পারেননি হাসান। পরে স্পিনারদের বিপক্ষেও ভালো কিছু শট খেলেন আথানেজ।
লাঞ্চের আগে আর উইকেট হারায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইনিংসের একমাত্র অর্ধশত রানের জুটি গড়েন হজ ও আথানেজ।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে হজকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন তাসকিন। নিজের পরের ওভারে তিনি দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন জাস্টিন গ্রেভসকে। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান এবার করতে পারেন কেবল ২।
তাসকিনের এই দুটির মাঝে আথানাজের ইনিংস শেষ করে দেন মিরাজ। সাত চারে ৪২ রান করেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, সেটিই ইনিংসের সর্বোচ্চ।
পেসারদের একটু দম নেওয়ার সুযোগ দিয়ে উইকেট শিকার অভিযানে নামেন মিরাজ-তাইজুলরা।
পরে আরেক স্পেলে ফিরে কাজ শেষ করেন তাসকিন। দুর্দান্ত ইয়র্কারে শামার জোসেফকে বোল্ড করে ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন ২৯ বছর বয়সী পেসার। এরপর কিমার রোচকে ফিরিয়ে তিনি শেষ করে দেন ক্যারিবিয়ানদের ইনিংস। স্লোয়ার ডেলিভারিতে মিড অফে লাফিয়ে দারুণ ব্যাচ নেন মিরাজ।
তাসকিনের মুখে তখন চওড়া হাসি। বল উঁচিয়ে ধরে মাঠ ছাড়েন তিনি। ছবির জন্য পোজ দিতে থাকেন একের পর এক। গোটা দলকেই মনে হচ্ছিল বেশ উৎফুল্ল।
দিন শেষ হতে হতে মিলিয়ে যায় বাংলাদেশের সব উচ্ছ্বাস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিস ১ম ইনিংস: ৪৫০/৯ (ডিক্লে.)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৬৯/৯ (ডিক্লে.)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: ৪৬.১ ওভারে ১৫২ (ব্র্যাথওয়েট ২৩, লুই ৮, কার্টি ৩, হজ ১৫, আথানেজ ৪২, গ্রেভস ২, জশুয়া ২২, আলজারি জোসেফ ১৭, রোচ ১২, শামার জোসেফ ৪, সিলস ১*; তাসকিন ১৪.১-১-৬৪-৬, হাসান ৬-২-২০-০, শরিফুল ৭-৪-৯-১, মিরাজ ১৪-৩-৩১-২, তাইজুল ৫-১-২৫-১)
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৩৪) ৩১ ওভারে ১০৯/৭ (জয় ৬, জাকির ০, মুমিনুল ১১, শাহাদাত ৪, লিটন ২২, মিরাজ ৪৫, জাকের ১৫*, তাইজুল ৪, হাসান ০*; রোচ ৮-১-২০-৩, সিলস ৯-৩-৩১-৩, শামার জোসেফ ৬-১-২০-১, আলজারি জোসেফ ৫-০-২৪-০, গ্রেভস ৩-১-১২-০)