ছয় বছর পর টেস্টে নব্বইয়ে আটকা পড়লেন কেন উইলিয়ামসন, সাকিব আল হাসানের পর ক্রাইস্টচার্চে স্পিনার হিসেবে চার উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখালেন শোয়েব বাশির।
Published : 28 Nov 2024, 01:21 PM
সবুজ উইকেটে টস জিতে বোলিং নিতে দেরি করেননি বেন স্টোকস। ইংল্যান্ড অধিনায়ক তাকিয়ে ছিলেন তার পেসারদের দিকে। কিন্তু দিনশেষে দেখা গেল, সফলতম বোলার শোয়েব বাশির! ইংলিশ অফ স্পিনার নাম লেখালেন সাকিব আল হাসানের পাশে। যে মাঠের উইকেট সবসময় কথা বলে পেসারদের হয়ে, সেই ক্রাইস্টচার্চে স্পিন বোলিংয়ে চার উইকেট শিকারের কীর্তি এতদিন ছিল সাকিবের একার। বাংলাদেশের গ্রেটের সঙ্গী এখন বাশিরও।
বাশির সেভাবে আলো ছড়ানোর আগেই অবশ্য ফেরার ম্যাচ রাঙিয়ে তোলেন কেন উইলিয়ামসন। চোট কাটিয়ে ফেরার ম্যাচে আগেও নানা সময়ে দারুণ পারফর্ম করেছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। এবারও মাঠে ফিরেই তিনি আবির্ভুত হলের আপন রূপে। তবে শেষ পর্যন্ত তার ইনিংসটি হয়ে রইল অম্ল-মধুর। ৭ রানের জন্য যে সেঞ্চুরি করতে পারলেন না!
দুই দলের দুই সেরা পারফরমারকে দিয়েই বুঝে নেওয়া যেতে পারে, ক্রাইস্টচার্চে ব্যাট-বলের লড়াই ছিল জমজমাট। প্রথম দিনে ৮৩ ওভারে নিউ জিল্যান্ডের রান ৮ উইকেটে ৩১৯।
চোটের কারণে ভারত সফরে যেতে না পারা উইলিয়ামসন ফেরার ইনিংসে করেন ১৯৭ বলে ৯৩।
এমনিতে তিনি ফিট থাকা মানে দলে ফিরবেন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই। তবে এবার তার ফেরা একটু বেশি আলোচনায় ছিল অন্য কারণে। তাকে জায়গা দিতে বাদ পড়ে যান উইল ইয়াং, ভারতে ঐতিহাসিক জয়ের সিরিজে যিনি ছিলেন ম্যান অব দা সিরিজ। তবে উইলিয়ামসন বুঝিয়ে দিলেন, কেন তার ওপর দলের এত ভরসা।
তবে ৩৩তম টেস্ট সেঞ্চুরিটা পেলেন না একটুর জন্য। টেস্টে নব্বইয়ে আটকা পড়লেন তিনি পঞ্চমবার। সবশেষটি ছিল ২০১৮ সালে।
উইলিয়ামসনের সৌজন্যে প্রথম দুই সেশনে দাপট ছিল নিউ জিল্যান্ডের। এক পর্যায়ে রান ছিল তাদের ৩ উইকেটে ১৯৯। শেষ সেশনে বাশিরের তিন উইকেট বদলে দেয় মোড়।
উইকেট সবুজ হলেও হ্যাগলি ওভালে পেসারদের যতটা সহায়তা সাধারণত থাকে, এবার ততটা দেখা যায়নি। ইংল্যান্ডকে লড়াইয়ে ফেরান মূলত বাশির।
দিনশেষে ৬৯ রানে ৪ উইকেট তরুণ এই অফ স্পিনারের। ২০১৭ সালে সাকিব নিয়েছিলেন ৫০ রানে ৪ উইকেট।
ম্যাচ শুরুর আগে ‘ক্রো-থর্প ট্রফি’ আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হয়। দুই দেশের প্রয়াত দুই ক্রিকেটার মার্টিন ক্রো ও গ্রাহাম থর্পের প্রতি সম্মান জানিয়ে এই দুই দলের লড়াইয়ের আনুষ্ঠানিক নাম এখন ‘ক্রো-থর্প ট্রফি।’ সাবেক দুই ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে তৈরি করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ট্রফিটি।
সকালে উইলিয়ামসনকে ক্রিজে যেতে হয় দিনের শুরুতেই। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই ডেভন কনওয়ে আউট হন গাস অ্যাটকিনসনের দুর্দান্ত ফিরতি ক্যাচে।
শুরুতে কিছুটা সময় নেন উইলিয়ামসন। প্রথম রানের দেখা পান তিনি ১৪ বল খেলে, প্রথম বাউন্ডারি ৪৭ বলে। তবে আরেক পাশে অধিনায়ক টম ল্যাথামের ব্যাটে আসতে থাকে দ্রুত রান।
প্রথম পানি পানের বিরতির পর ল্যাথাম বিদায় নেন ফিফটির কাছে গিয়ে। জুটিতে আসে ৭৩ বলে ৫৮ রান, এর মধ্যে ল্যাথাম করেন ৪৮ বলে ৪৭।
লাঞ্চের আগে আর উইকেট হারায়নি নিউ জিল্যান্ড। রাচিন রাভিন্দ্রার সঙ্গে আরেকটি অর্ধশত রানের জুটি গড়েন উইলিয়ামসন।
সাবলিল খেলতে থাকা রাভিন্দ্রাকে ৩৪ রানে ফিরিয়ে প্রথম শিকারের দেখা পান বাশির। উইকেটটি অবশ্য ছিল উপহার। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে বল ফুল টস বানিয়ে ক্যাচ দিয়ে বসেন রাভিন্দ্রা। ৬৮ রানে থামে জুটি।
এরপর নিউ জিল্যান্ড অর্ধশত রানের জুটি পায় আরেকটি। ড্যারিল মিচেলকে সঙ্গী করে দলকে এগিয়ে নেন উইলিয়ামসন।
চা বিরতির পর এই জুটি ভাঙে দল যখন দুইশর দুয়ারে। ব্রাইডন কার্সের শর্ট বল পুল করতে গিয়ে উইকেট হারান মিচেল (১৯)।
এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই দ্রুত আর তিন উইকেট হারায় নিউ জিল্যান্ড। গাস অ্যাটকিসনকে কাট করে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ধরা পড়েন ৯৩ রানে থাকা উইলিয়ামসন। বাশির দ্রুত ফিরিয়ে দেন টম ব্লান্ডেল ও অভিষিক্ত পেস বোলিং অলরাউন্ডার ন্যাথান স্মিথকে।
গ্লেন ফিলিপস এরপর পাল্টা আক্রমণ করেন স্বভাবসুলভ ব্যাটিংয়ে। তাকে কিছুটা সঙ্গ দেন ম্যাট হেনরি। শেষ বেলায় হেনরিকে ১৮ রানে বিদায় করেন বাশির।
ফিলিপস অপরাজিত থাকেন ৫৮ বলে ৪১ রান করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৮৩ ওভারে ৩১৯/৮ (ল্যাথাম ৪৭, কনওয়ে ২, উইলিয়ামসন ৯৩, রাভিন্দ্রা ৩৪, মিচেল ১৯, ব্লান্ডেল ১৭, ফিলিপস ৪১*, স্মিথ ৩, হেনরি ১৮, সাউদি ১০*; ওকস ১৬-৪-৫৪-০, অ্যাটকিনসন ১৮-২-৫৪-২, কার্স ১৫-০-৫৭-২, স্টোকস ১৩-১-৫৯-০, বাশির ২০-১-৬৯-৪, বেথেল ১-০-৫-০)।