জিম্বাবুয়ে-ভারত
আট বছর পর ভারতের বিপক্ষে জয়ের স্বাদ পেল জিম্বাবুয়ে।
Published : 06 Jul 2024, 08:32 PM
হারারে স্পোর্টস ক্লাবের গ্যালারিতে ঠাসা জিম্বাবুয়ের সমর্থক। নেচে-গেয়ে, হৈ-হুল্লোড়ে তারা মাতিয়ে রাখলেন চারদিক। তাদের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দিলেন সিকান্দার রাজা, ব্লেসিং মুজারাবানিরা। অল্প পুঁজি নিয়েও দারুণ বোলিং করলেন জিম্বাবুয়ের বোলাররা। আট বছর পর ভারতকে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল তারা।
পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে শনিবার জিম্বাবুয়ের জয় ১৩ রানে। ১১৫ রানের পুঁজি নিয়ে সফরকারীদের ১০২ রানে গুটিয়ে দেয় স্বাগতিকরা।
টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই হারের তেতো স্বাদ পেল ভারত। যদিও এই সফরে গেছে দ্বিতীয় সারির দল। বিশ্বকাপের মূল দল থেকে এই সিরিজে আছেন কেবল তিন জন- সাঞ্জু স্যামসন, শিভাব দুবে ও ইয়াশাসভি জয়সওয়াল। প্রথম দুই ম্যাচে তারা খেলছেন না।
এই সংস্করণে ভারতের বিপক্ষে ৯ ম্যাচে জিম্বাবুয়ের এটি তৃতীয় জয়, ২০১৬ সালের পর প্রথম।
টি-টোয়েন্টিতে এত কম রানের পুঁজি নিয়ে ভারতের বিপক্ষে জিততে পারেনি আর কেউ। ২০১৬ বিশ্বকাপে ১২৬ রানের পুঁজি নিয়ে নিউ জিল্যান্ডের জয় ছিল আগের রেকর্ড।
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব উতরাতে ব্যর্থ হওয়া জিম্বাবুয়ের এই জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন অধিনায়ক রাজা। ব্যাটিংয়ে ১৯ বলে ১৭ রানের পর হাত ঘুরিয়ে ২৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা এই অলরাউন্ডার।
১৬ রানে ৩ উইকেট নেন পেসার টেন্ডাই চাটারা। বড় অবদান রাখেন ক্লাইভ মাডান্ডেও। ২৫ বলে ৪টি চারে সর্বোচ্চ ২৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি। নবম উইকেটে চাটারার সঙ্গে গড়েন ২৫ রানের জুটি, যেখানে চাটারার অবদান শূন্য।
বৃথা গেল রাভি বিষ্ণইয়ের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। ৪ ওভারে দুই মেডেনে ১৩ রানে ৪ উইকেট নেন ভারতের ২৩ বছর বয়সী এই লেগ স্পিনার।
ব্যাটিংয়ের জন্য খুব একটা কঠিন ছিল না উইকেট। দুই দলের বেশিরভাগ ব্যাটসম্যানই আউট হন বাজে শট খেলে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারে ইনোসেন্ট কাইয়াকে হারায় জিম্বাবুয়ে। তারপরও প্রথম ৫ ওভারে তারা তুলে ফেলে ৪০ রান। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আক্রমণে এসে প্রথম বলে ব্রায়ান বেনেটকে (১৫ বলে ২৩) বিদায় করেন বিষ্ণই। নিজের পরের ওভারে তার শিকার ওয়েসলি মাধেভেরে (২২ বলে ২১)।
রাজা ও ডিওন মায়ার্স এগিয়ে নেন দলকে। দুজনে গড়েন ২৩ রানের জুটি। এরপরই ধসে পড়ে তাদের ব্যাটিং। যার শুরুটা রাজার বিদায় দিয়ে। মায়ার্স ২২ বলে করেন ২৩ রান। জোনাথান ক্যাম্পবেল, লুক জঙ্গুয়ে, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা টিকতে পারেননি।
একটা পর্যায়ে ৩ উইকেটে ৭৪ থেকে জিম্বাবুয়ের স্কোর হয়ে যায় ৯ উইকেটে ৯০! সেখান থেকে মাডান্ডে-চাটারা জুটির নৈপুণ্যে লড়াই করার মতো পুঁজি পায় তারা।
লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ওভারেই আভিশেক শার্মাকে হারায় ভারত। গত আইপিএলে ঝড় তোলা ওপেনার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকে ফেরেন শূন্য রানে।
আরেক অভিষিক্ত রিয়ান পারাগ, রুতুরাজ গায়কোয়াড়, রিঙ্কু সিংও টিকতে পারেননি। পাওয়ার প্লের মধ্যে ২২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ভারত।
এক প্রান্ত আগলে রাখা অধিনায়ক শুবমান গিল প্রতিরোধের চেষ্টা করেন অভিষিক্ত ধ্রুব জুরেলকে নিয়ে। দুজন যোগ করেন ২১ রান। জুরেলকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন জঙ্গুয়ে। নিজের পরপর দুই ওভারে গিল (২৯ বলে ৩১) ও বিষ্ণইকে ফিরিয়ে দেন রাজা।
১২ বলে ১৬ রান করে বিদায় নেন আভেশ খান। রাজার কোটার শেষ বলে মুকেশ কুমার যখন ফিরলেন, তখনও ভারতের দরকার ১৮ বলে ৩০ রান।
এরপর একাই চেষ্টা করেন ওয়াশিংটন সুন্দার। ১৮তম ওভারে জঙ্গুয়েকে একটি করে ছক্কা ও চার মারেন তিনি। তবে ১৯তম ওভারে মুজারাবানি দেন স্রেফ ২ রান।
শেষ ওভারে ১৬ রানের প্রয়োজনে চাটারার পঞ্চম বলে ওয়াশিংটনের (৩৪ বলে ২৭) বিদায়েই সমাপ্তি ঘটে ম্যাচের। দারুণ জয়ের আনন্দে মাতে জিম্বাবুয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে: ২০ ওভারে ১১৫/৯ (মাধেভেরে ২১, কাইয়া ০, বেনেট ২২, রাজা ১৭, মায়ার্স ২৩, ক্যাম্পবেল ০, মাডান্ডে ২৯*, মাসাকাদজা ০, জঙ্গুয়ে ১, মুজারাবানি ০, চাটারা ০*; খালিল ৩-০-২৮-০, মুকেশ ৩-০-১৬-১, বিষ্ণই ৪-২-১৩-৪, আভিশেক ২-০-১৭-০, আভেশ ৪-০-২৯-১, ওয়াশিংটন ৪-০-১১-২)
ভারত: ১৯.৫ ওভারে ১০২ (আভিশেক ০, গিল ৩১, রুতুরাজ ৭, পারাগ ২, রিঙ্কু ০, জুরেল ৬, ওয়াশিংটন ২৭, বিষ্ণই ৯, আভেশ ১৬, মুকেশ ০, খালিল ০*; বেনেট ১-১-০-১, মাসাকাদজা ৩-০-১৫-১, চাটারা ৩.৫-১-১৬-৩, মুজারাবানি ৪-০-১৭-১, জঙ্গুয়ে ৪-০-২৮-১, রাজা ৪-০-২৫-৩)
ফল: জিম্বাবুয়ে ১৩ রানে জয়ী
সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে ১-০তে এগিয়ে জিম্বাবুয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: সিকান্দার রাজা