ব্যাটিং ব্যর্থতার চেনা চক্রে ঘুরপাক খেয়ে আরও এক ম্যাচে হার বাংলাদেশের, অতিরিক্ত ‘ডট’ বল খেলায় আক্ষেপ নিগার সুলতানার।
Published : 11 Oct 2024, 08:34 AM
গোটা ইনিংসে বাউন্ডারি মোটে ৯টি। প্রথম চার ব্যাটারের পর আর কেউ বল পাঠাতে পারেননি সীমানায়। অবিশ্বাস্যভাবে, ইনিংসের শেষ ৪৯ বলে একটি বাউন্ডারিও মারতে পারেনি বাংলাদেশ! আর যাই হোক, এটিকে টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং বলে না মোটেও। তবে স্রেফ বাউন্ডারিই নয়, ব্যাটাররা তো সিঙ্গেলও বের করতে পারেন না ঠিকঠাক! নিগার সুলতানার মূল আক্ষেপ এখানেই। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক হতাশা প্রকাশ করলেন আরও বেশি সিঙ্গেল নিতে না পারায়।
ব্যাটিং ব্যর্থতার চেনা চক্রে ঘুরপাক খেয়ে নারী বিশ্বকাপে বৃহস্পতিবারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। ম্যাচের আগে অধিনায়ক নিগার, সহ-অধিনায়ক নাহিদা আক্তার শুনিয়েছিলেন ব্যাটিংয় উন্নতির তাগিদের কথা। কিন্তু সেই তাড়নার প্রতিফলন পড়েনি দলের ব্যাটিংয়ে।
শারজাহর উইকেট এ দিন ব্যাটিংয়ের জন্য ছিল বেশ ভালো। বাংলাদেশ সেখানে ২০ ওভারে স্রেফ ১০৩ রানে থমকে যাওয়ার পরই ম্যাচের ভাগ্য একরকম নিশ্চিত হয়ে যায়। স্বল্প পুঁজি নিয়ে লড়াই জমাতে পারেননি বোলাররাও। স্রেফ দুই উইকেট হারিয়ে ক্যারিবিয়ানরা ম্যাচ জিতে নেয় ১২.৫ ওভারেই।
ম্যাচের পর ব্যাটিং নিয়েই আবার হাহুতাশ করলেন নিগার। সেখানে মিশে থাকল অনেক বল থেকে রান নিতে না পারার হতাশা।
“আমাদের শুরুটা খুব ভালো ছিল। তবে মাঝের সময়টায় আমরা অনেক বেশি ডট খেলেছি এবং পরে তাদেরকে অনেক উইকেট বিলিয়ে দিয়েছি।”
“মাঝের ওভারগুলোয় তাদের বোলাররা সত্যিই অনেক ভালো বল করেছে এবং আমাদেরকে শট খেলার জায়গা দিচ্ছিল না। সিঙ্গেল নেওয়ার অনেক সুযোগও আমরা হাতছাড়া করেছি, যা চাপ তৈরি করেছে আমাদের ওপর।”
গোটা ইনিংসে এ দিন ৫৭টি ‘ডট’ বল খেলেছে বাংলাদেশ। যেটির মানে, ২০ ওভারের ম্যাচের প্রায় ১০ ওভার থেকেই আসেনি কোনো রান।
দুই ওপেনার সাথি রানি বর্মন ও দিলারা আক্তার ব্যর্থ আবারও। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের রান ছিল ২ উইকেটে ৩৩। সেখান থেকে দল কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায় নিগার সুলতানা ও সোবহানা মোস্তারির ব্যাটে।
নবম ওভারে লেগ স্পিনার অ্যাফি ফ্লেচারকে তিনটি বাউন্ডারি মারেন নিগার। ১২ ওভার শেষে দলের রান ছিল ২ উইকেটে ৭১। সেখান থেকে ১৩০-১৩৫ রানের প্রত্যাশা করাই যায়।
কিন্তু ৪০ রানের ওই জুটি ভাঙার পর আর কোনো জুটি গড়ে ওঠেনি। উল্টো একের পর এক উইকেটের পতন হতে থাকে দ্রুত। শুরুটা দারুণ করার পরও কিছুটা সাবধানী ব্যাটিংয়ের পথ বেছে নিতে হয় নিগারকে। বাংলাদেশ অধিনায়ক শেষ পর্যন্ত বিদায় নেন ৪৪ বলে ৩৯ রান করে।
এই ইনিংসের পথে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে এই সংস্করণে ২ হাজার রান পূর্ণ করেন নিগার। ১ হাজার ৩০০ রানও নেই আর কারও। দেশের ব্যাটিংয়ের সামগ্রিক চিত্র কিছুটা ফুটে উঠে এতেই।
সোবহানার বিদায় দিয়ে দুই রানের মধ্যে তিন উইকেট হারায় বাংলাদেশ। পরে শেষ দিকে আবার তিন উইকেট পড়ে যায় চার রানের মধ্যে।
চার উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ধস নামান অফ স্পিনার কারিশমা রামহ্যারাক। লেগ স্পিনার অ্যাফি ফ্লেচারের শিকার দুই উইকেট।
ম্যাচ হারার পর যথারীতি অনেক কিছু শেখার কথা বললেন নিগার। সেখানে ব্যাটিংয়ে উন্নতির তাগিদ আবার শোনালেন অধিনায়ক
“শিক্ষণীয় অনেক কিছুই আমরা সামনে বয়ে নিতে পারি। বিশেষ করে, এই ধরনের টুর্নামেন্টে কীভাবে ইতিবাচক থাকতে হয়। আমাদের দলটা এই ধরনের টুর্নামেন্টে খুব বেশি অভিজ্ঞ নয়।”
“আমাদের জন্য জরুরি হলো ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে আরও বেশি তাড়না দেখানোয় মনোযোগ দেওয়া। আমাদের বোলাররা প্রতিটি ম্যাচেই তাদের কাজ করতে পেরেছে। ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আরও শক্তিশালী হওয়ার।”
এই ম্যাচের আগে নিগার-নাহিদারা বেশ জোর দিয়েই শোনাচ্ছিলেন সেমি-ফাইনাল স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার প্রত্যাশা। স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে শুরুর পর ইংল্যান্ডের কাছে হার, জয়-পরাজয় তখনও ছিল সমান। কিন্তু ক্যারিবিয়ানদের কাছে হেরে যাওয়ার পর বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন অধিনায়ক। শেষ চারের কথা আর না বলে শনিবার শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিদায়ী ম্যাচটি রাঙাতে চান তারা।
“(দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে) ভালো ক্রিকেট খেলা ও জয়ের চেষ্টা করা উচিত আমাদের। এটা স্রেফ আরেকটি ম্যাচ এবং আমরা দল হিসেবে খেলতে চাই, মনে রাখার মতো কিছু নিয়ে ফিরতে চাই।”